Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এই তো সুযোগ

ঘন্টা দেড়েকের বাস যাত্রায় রীতিমতো যাত্রীদের কাছ থেকে তাদের এলাকার অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে খুঁটিয়ে জেনেছেন দেবলীনা।

বিনপুরের শালুকডোবা গ্রামে এক প্রবীণ কর্মীর হাতে পতাকা তুলে দিচ্ছেন সিপিএম প্রার্থী দেবলীনা। নিজস্ব চিত্র

বিনপুরের শালুকডোবা গ্রামে এক প্রবীণ কর্মীর হাতে পতাকা তুলে দিচ্ছেন সিপিএম প্রার্থী দেবলীনা। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৯ ০৪:৫৪
Share: Save:

রথ দেখা নয়। এ যেন কলা বেচার জন্যই রথ দেখতে যাওয়া।

ভোট প্রচার তো হবেই। সে সুযোগে যে সাংগঠনিক শক্তি পরখ করে নেওয়া যাবে তা-ই বা কম কীসের। ঝাড়গ্রাম লোকসভায় সিপিএমের প্রচারের কেন্দ্রে রয়েছে এই ভাবনাই। দলের এক নিচুতলার এক কর্মী তো বলেই ফেললেন, ‘‘জেতা-হারা পরের কথা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই ভোটে আমরা হেভিওয়েট প্রার্থীকে সামনে রেখে জেলার প্রতিটি অঞ্চলে সংগঠনকে পোক্ত করে তুলতে চাইছি।’’ প্রার্থী হেভিওয়েট। দেবলীনা হেমব্রম। তিনবার বিধায়ক। মন্ত্রী ছিলেন একবার। তবে নজর কেড়েছেন সম্প্রতি ব্রিগেডে বামেদের জনসভায়। কথা বলেছেন, খেটে খাওয়া মানুষের কথায়। প্রচারেও তিনি ভরসা রাখছেন সনাতনী কৌশলে। চারচাকা নয়। দু’একজন নেতা-কর্মীকে নিয়ে উঠে পড়ছেন বাসে। গত রবিবার সকালে ঝাড়গ্রাম থেকে নয়াগ্রাম যাওয়ার সরকারি বাসে চেপেছিলেন দেবলীনা। সঙ্গী ছিলেন দলের জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কে, জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ সরকার, দলের খড়িকা এরিয়া কমিটির সদস্য সৌগত মাহাতো। দরজার পাশের সিটে বসেছিলেন প্রার্থী। নতুন যাত্রী উঠলেই উঠে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে তাঁদের কাছে সমর্থন চেয়েছেন। ঘন্টা দেড়েকের বাস যাত্রায় রীতিমতো যাত্রীদের কাছ থেকে তাদের এলাকার অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে খুঁটিয়ে জেনেছেন দেবলীনা।

কেন এই কৌশল? দলের একাংশ বলছেন, আর উপায় নেই। তাই এ বার বাধ্য হয়েই পুরনো পন্থায় ফিরছেন নেতারা। সিপিএমের এক জেলা নেতা ব‌লছেন, ‘‘আরে আমাদের তো সবই হারিয়ে গিয়েছিল। দেবলীনা প্রার্থী হতে এখন কর্মীদের মধ্যে নতুন করে উৎসাহ এসেছে।’’ পুলিন বলেন, বাসে জনসংযোগ ভাল হচ্ছে। ভোটও চাইছি। নোটও চাইছি। রসিদের বিনিময়ে ভোটের জন্য এভাবেই আর্থিক সাহায্য নিচ্ছি। আমরা অনেকটা সুবিধা পাচ্ছি। বাসে প্রার্থীও প্রাসঙ্গিক বক্তব্য তুলে ধরছেন।’’

সিপিএমের এক জেলা নেতা স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘‘ভোটে জেতার মতো অবস্থায় যে আমরা নেই, তা সকলেই জানেন। কিন্তু এই সুযোগে যদি জনসংযোগ গড়ে তোলা যায় সেটাই বাড়তি পাওনা।’’ রবিবার নয়াগ্রামের ধানকামড়া বাসস্টপে নেমে মাওবাদী সন্ত্রাস পর্বে নিহত দলীয় কর্মী গুজরাট খানের বাড়িতে গিয়েছিলেন দেবলীনা। পায়ে হেঁটে প্রচার করেন। স্থানীয় কর্মীরা একটি গাড়ির ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই গাড়িতে নিচু পাতিনা গ্রামে যান। সেখানেও মাওবাদী সন্ত্রাস পর্বে একসঙ্গে একই পরিবারের নিহত ৫ জনের বাড়িতে যান সিপিএমের প্রার্থী। পরে নয়াগ্রামের বড় খাঁকড়ি হয়ে গোপীবল্লভপুরে প্রচার করেন। পুলিনের কথায়, ‘‘তৃণমূলের হুমকি-সন্ত্রাসে নয়াগ্রামের এলাকাগুলিতে আমরা কোনও রকম কাজকর্ম করতে পারিনি। এবার প্রার্থীর সঙ্গে সেই সব জায়গায় গত ৮ বছরে এই প্রথমবার যাচ্ছি। সংগঠন নতুন করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটা খুবই সহায়ক হচ্ছে।’’ দেবলীনা বলছেন, ‘‘ক্ষমতা দখলের জন্য কারা মাওবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বিচারে খুন-সন্ত্রাস করেছিলেন সেটা জঙ্গলমহলের মানুষ খুব ভালই জানেন। মানুষের পাশে সব সময় থাকব সেটা জানাতেই প্রত্যন্ত এলাকায় যাচ্ছি।’’

রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পরে ঝাড়গ্রাম জেলায় বেশ কিছু দলীয় কার্যালয় বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিল সিপিএম। এখন সেই সব দলীয় কার্যালয় খোলার তোড়জোড় হচ্ছে। আগামী শুক্রবার ঝাড়গ্রাম জেলায় একাধিক বুথস্তরের কর্মিসভা করতে আসছেন বিমান বসু। চেষ্টা চলছে তার আগেই যাতে কার্যালয়গুলি খুলে ফেলা যায়।

এই তো সুযোগ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE