Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ফুলবাজার, দূষণ আর ভাঙন

ত্র্যহস্পর্শ যাবে কবে, প্রশ্নের মুখে প্রার্থীরা

লোকসভার যুদ্ধে জরুরি বিধানসভার অঙ্ক। সেই সমীকরণেই আনন্দবাজার পৌঁছে গিয়েছে জনতার দরবারে। তিন বছর আগের ভোটের পরে কী পেয়েছেন মানুষ, সাংসদ নির্বাচনের আগেই বা কী ভাবছেন তাঁরা, রইল বিধানসভাওয়াড়ি পর্যালোচনা।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

দিগন্ত মান্না
শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০১:১৬
Share: Save:

জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্লক কোলাঘাট। ব্লকের ওপর দিয়ে চলে গিয়েছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ও দক্ষিণ পূর্ব রেলপথ। ব্লকে রয়েছে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, রূপনারায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ নদ। ফুলচাষের মানচিত্রে পাঁশকুড়ার পর রাজ্যে দ্বিতীয় স্থানে কোলাঘাট। রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুলবাজারও এটি। একটি বাজার বসে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে দেউলিয়া বাসস্ট্যান্ডের পাশে। অন্যটি কোলাঘাট রেল স্টেশন সংলগ্ন রেলের জায়গায়। দু’টি জায়গাই কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীন হলেও পরিকাঠামো নিয়ে অভাব-অভিযোগ দীর্ঘদিনের। যা নিয়ে বার বারই সোচ্চার হয়েছেন সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতি।

এই ফুলবাজারকে ঘিরে বহু মানুষের কর্ম সংস্থান এলাকার অর্থনীতি আবর্তিত হলেও এর উন্নতিতে কোনওদিনই নজর দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। অথচ কি বিধানসভা, কি লোকসভা ভোট এলেই রাজনৈতিক দলের প্রচারে ঠাঁই পেয়েছে ফুলবাজার। ভোট চলে গেলে বাসি ফুলের মতোই পড়ে থেকেছে ফুলবাজার। সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতি অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে এখানকার ফুল বাজারের সমস্যা তুলে ধরে সংসদে একটা কথাও বলেননি বিদায়ী সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী।

ভোটের বিধান

পাঁশকুড়া-পূর্ব বিধানসভা
তমলুক লোকসভা

২০১৪ লোকসভা
তৃণমূল ৮৬,৫৩১
বাম ৬২,৮৯৮
বিজেপি ১২,৩৫১
কংগ্রেস ৭,৩০৭
জয়ের ব্যবধান ২৩৬৩৩

২০১৬ বিধানসভা
তৃণমূল ৮০৫৬৭
জোট ৮৫,৩৩৪
বিজেপি ১০,০৪১
জয়ের ব্যবধান ৪৭৬৭

২০১৮ পঞ্চায়েত
জেলা পরিষদ (তৃণমূল ৩-০)
পঞ্চায়েত সমিতি (৩৮) (তৃণমূল ৩৫, বাম ৩)
গ্রাম পঞ্চায়েত (তৃণমূল ১৩-০)

কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ নিয়েও এলাকার মানুষের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্যতম নিচু এলাকা কোলাঘাট। ফি বছর বর্ষায় জলমগ্ন হয়ে পড়ে গোটা ব্লক। দেনান-দেহাটি, মেদিনীপুর ক্যানাল, টোপা ড্রেনেজ, সোয়াদিঘি প্রভৃতি খাল সংস্কার হয়নি দীর্ঘদিন। সংস্কারের অভাবে মজে গিয়েছে জলধারণ ক্ষমতা হারিয়েছে খালগুলি। ফলে ফি বছর ব্লকে তৈরি হয় বন্যা পরিস্থিতি। গত পাঁচ বছরে তাঁদের এ সব সমস্যা নিয়ে নিয়ে সাংসদ কী পদক্ষেপ করেছেন তা জানতে চায় এখানকার জনতা।

দীর্ঘদিন ড্রেজিংয়ের অভাবে কোলাঘাটে রূপনারায়ণের পূর্ব দিক বরাবর জেগে উঠেছে বিশাল চর। সেই চরের প্রভাবে ক্রমশ ক্ষয়ে যাচ্ছে কোলাঘাটের ব্যস্ত জনপদ। প্রতি বর্ষায় ভাঙনের আশঙ্কায় প্রহর গোনেন গাঙপাড়ের বাসিন্দারা। কোলাঘাটকে বাঁচাতে সংসদে রূপনারায়ণের ভাঙন রোধে সোচ্চার হবেন ভাবী সাংসদ এমনটাই চান কোলাঘাটবাসী। এই বিষয়ে বিদায়ী সাংসদের বক্তব্য, ‘‘কোলাঘাট ফুলবাজার নিয়ে রাজ্য সরকার রেলের সঙ্গে কথা বলেছে। শীঘ্রই কোলাঘাট ফুল বাজারের পরিকাঠামোর উন্নতি করা হবে। কোলাঘাটের বিভিন্ন খাল সংস্কারে ইতিমধ্যে রাজ্য সেচ দফতর সমীক্ষা করেছে। আর কোলাঘাটের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে আগেও বলেছি। জিতলে আবারও বলব।’’ তাঁর দাবি, কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ নিয়ে তিনি সোচ্চার হয়েছেন বলেই এখন দূষণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।

২০১৪ র লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন শুভেন্দু অধিকারী। প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটে হারান সিপিএমের ইব্রাহিম আলিকে। ২০১৬ র বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দু নন্দীগ্রাম থেকে জিতে মন্ত্রী হলে খালি হয়ে যায় তমলুক লোকসভার আসন। ব্লকে তৃণমূল নেতা অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিপ্লব রায়চৌধুরীর অনুগামীদের মধ্যে কোন্দলও নতুন কথা নয়। তবে তা প্রকাশ্যে আসে ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে। সিপিএম প্রার্থী শেখ ইব্রাহিম আলির কাছে হেরে যান তৃণমূলের বিপ্লব রায়চৌধুরী। ওই বছরই তমলুক লোকসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে জিতে সাংসদ হন দিব্যেন্দু অধিকারী। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে এককাট্টা হয়ে কাজ করার ফল হাতেনাতে পেয়েছিল তৃণমূল। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনেও কোলাঘাট ব্লকে ভাল ফল করে তৃণমূল। ২০১১য় পরিবর্তনের পর থেকে কোলাঘাটে যে উন্নয়ন হয়েছে তা স্বীকার করেছেন বাসিন্দারা। রাস্তা থেকে শুরু করে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা নিয়ে তেমন কোনও অভিযোগ নেই। তবে বাম আমলে অনুমোদন পাওয়া একটি মাত্র কলেজের নিজস্ব ভবন এখনও তৈরি না হওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে মানুষের। প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচে তৈরি হওয়া জল প্রকল্প চালু না হওয়ায় ব্লকে বাড়ি বাড়ি পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের স্বপ্ন এখনও বিশ বাঁও জলে। ক্ষোভ রয়েছে তা নিয়েও।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আসন্ন নির্বাচনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে বিবদমান দুই গোষ্ঠীর দুই নেতাকে নির্বাচনী কমিটির কো-কনভেনর করে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রাশ টানতে চেয়েছে তৃণমূল। এলাকায় বিজেপির সংগঠন সেভাবে দাগ কাটতে না পারলেও সিপিএম এখনও যথেষ্ট সক্রিয়। প্রতিদিনই নিয়ম করে প্রচারে বেরোনো সিপিএম প্রার্থী ইব্রাহিম আলির আশা, কোলাঘাট থেকে সিপিএম ভাল ফল করবে। তবে বিজেপির কোলাঘাট মণ্ডল-২ এর সভাপতি দেবব্রত পট্টনায়েকের দাবি, কোলাঘাট ব্লকে এবার মানুষ বিজেপির প্রচারে ভাল সাড়া দিচ্ছেন। তাই আগের চেয়ে বিজেপি ভাল ফল করবে।’’

বিভিন্ন নির্বাচনে কোলাঘাট ব্লকে রাজনৈতিক গণ্ডগোল তেমন ঘটেনি বললেই চলে। আসন্ন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দল ভোটারদের কতটা নিজের দিকে টানতে পারবে তা নির্ভর করছে ফুলবাজার, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ ও রূপনারায়ণের ভাঙন রোধে কতটা নিশ্চয়তা দেবে তার উপর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE