ভোট আসে, ভোট যায়। খুঁটি পড়লেও বিদ্যুৎ আসে না আয়মার রেল কলোনিতে। নিজস্ব চিত্র
অপরাধের ইতিহাসে মোড়া রেলশহর। রেলের ঠিকাদারি থেকে ছাঁট লোহার কারবার, রেল মাফিয়াদের ‘টিগারে’ ত্রস্ত ছিল শহরবাসী। রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠছিল মাফিয়ারা। গত পুরসভা থেকে বিধানসভা নির্বাচনে রেল মাফিয়াদের সঙ্গে তৃণমূলের আঁতাতের অভিযোগে উত্তপ্ত হয়েছিল শহর। বিজেপি-সহ অন্য দলের কাউন্সিলর ভাঙিয়ে পুরবোর্ড গড়েছিল তৃণমূল। মোট ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে এখন তৃণমূলের দখলে রয়েছে ২৬টি ওয়ার্ড। বিধানসভার পর দেখা যায়, ওই ৩৫টির মধ্যে বিজেপি ২১, কংগ্রেস ১১, তৃণমূল ৩টি ওয়ার্ডে জিতেছে। এ বার লোকসভায় ২৩টি ওয়ার্ডে তৃণমূলের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই।
মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত খড়্গপুর সদর বিধানসভায় এখনও পর্যন্ত পাঁচজন প্রার্থী থাকলেও এখানে লড়াই কার্যত দ্বিমুখী দাবি রাজনৈতিক মহলের। কারণ, বিজেপির রাজ্য সভাপতি এই শহরের বিধায়ক দিলীপ ঘোষ এ বার এই লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে লড়াই তৃণমূলের মানস ভুঁইয়ার। রেলশহরের রেলের এলাকার অনুন্নয়নকে হাতিয়ার করে প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল। প্রচারে মানস বলছেন, “রেলমন্ত্রীকে এনে ২০১৬সালে খড়্গপুরে কত ভাষণ দিয়েছিল। সব মনে রয়েছে। বিদ্যুৎ নেই, জল নেই, রাস্তা নেই। যে মানুষ একটি বিধানসভা ক্ষেত্রে কাজ করতে পারেনি তিনি ৭টি বিধানসভায় কাজ করবে বলছেন!” দিলীপের মন্তব্য, “বিধায়ক হিসাবে ক্ষমতা সীমিত। তা সত্ত্বেও রেলশহরে উন্নয়ন হয়েছে। সাংসদ হয়ে দিল্লি গিয়ে চাপ দিয়ে বাকি সমস্যার সমাধান নিশ্চয় করব।”
ভোট তো লোকসভার। সে ক্ষেত্রে পুর এলাকার চাওয়া-পাওয়া কতটা প্রভাব ফেলবে? খড়্গপুর সদর বিধানসভা এলাকার বিস্তীর্ণ অংশ ঘুরে দেখা গেল, জল মেপে পা ফেলতে চাইছেন ভোটাররা। শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা খড়্গপুর কলেজের শিক্ষিকা সোমালি নন্দী বলছেন, “খড়্গপুর তো শুধু রেল এলাকা নয়, পুরসভা এলাকাও রয়েছে। সার্বিক উন্নয়ন বিচার করে শিক্ষিত-মধ্যবিত্ত ভোটারেরা রায় দেব। রেলের অনুন্নয়ন নিয়ে তৃণমূলের প্রচারে বিজেপির ভোট কিছুটা কমতে পারে। অবশ্য আগের যিনি সাংসদ ছিলেন তাঁর ভূমিকাও বিশ্লেষণ করা হবে। বিজেপির প্রার্থীকেও তাঁর প্রতিশ্রুতি মনে রাখতে হবে।” আবার ২০নম্বর রেল ওয়ার্ডের বাসিন্দা রেলকর্মী শ্রীনিবাস বলেন, “খড়্গপুরে বিজেপির প্রভাব রয়েছে। কিন্তু রেলের এলাকায় দেখছি তৃণমূলও কিছু কাজ করেছে। কে জিতবে বলা কঠিন। কিন্তু যিনি সাংসদ হবেন তিনি যেন উন্নয়নে নজর দেন।”
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এই বিধানসভা এলাকায় কাউন্সিলরের সংখ্যার বিচারে তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও ‘স্বস্তি’ মিলছে না। গত লোকসভা নির্বাচনে প্রথম স্থানে থাকা বিজেপির থেকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা তৃণমূলের ভোটের ব্যবধান ছিল প্রায় ১১হাজার। বিজেপির ভোট ছিল প্রায় ৩৪শতাংশ। গত পুরসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোট কমে প্রায় ২১শতাংশ হয়েছিল। তবে ৭টি ওয়ার্ড দখল করেছিল বিজেপি। যদিও গত বিধানসভায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রার্থী হওয়ায় ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বিজেপি। প্রায় ৩৯শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। গত পুরসভা নির্বাচন থেকে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ভাবাচ্ছে তৃণমূলকে।
তৃণমূলের শহর সভাপতি রবিশঙ্কর পাণ্ডে অবশ্য বলেন, “আমাদের সংগঠন এখন খড়্গপুরে অনেক মজবুত। বিজেপি, কংগ্রেসের লোকেরা আমাদের প্রার্থীকে ভোট দিতে প্রস্তুত। আমাদের দখলে থাকা ২৬টি ওয়ার্ডেই ‘লিড’ পাব।” শহরের বাসিন্দা বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি গৌতম ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূলের সন্ত্রাসের পরে বিধানসভায় দিলীপদার জয়ে শহর শান্ত। মানুষ শান্তি চায়। মানস ভুঁইয়াকে হারাতে কংগ্রেসের কিছু ভোট আমাদের দিকে আসবে। আর বাম-কংগ্রেস জোট না হওয়ায় আমরা পাঁচবেড়িয়ার ৩টি ওয়ার্ড বাদ দিয়ে ৩২টি ওয়ার্ডেই লিড পাব।”
এক রেল মাফিয়ার খুনে জড়িয়ে আরেক রেল মাফিয়া জেলবন্দি হওয়ায় আপাত শান্ত শহর। আগে ভোট প্রচারে জায়গা করে নিত অপরাধ মোকাবিলার দাবি। এ বার লোকসভা ভোটে আলোচনার কেন্দ্রে উন্নয়ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy