Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ভোট শেষে অশান্তি চলছেই, বাড়ি ভাঙচুর, শ্লীলতাহানি

এ দিন সকালে তমলুকের ডিমারি বাজার এলাকায় গৌরীশঙ্কর কর নামে বিজেপির এক বুথ সভাপতিকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তৃমমূলের বিরুদ্ধে।

সোনাকেনিয়া গ্রামে জখম তৃণমূল কর্মী। —নিজস্ব চিত্র।

সোনাকেনিয়া গ্রামে জখম তৃণমূল কর্মী। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৯ ০০:৩৭
Share: Save:

ভোট পর্ব মিটেছে রবিবারই। কিন্তু তার পরেও মিটছে শাসকদল-বিরোধী কাজিয়া। মঙ্গলবারও জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

এ দিন সকালে তমলুকের ডিমারি বাজার এলাকায় গৌরীশঙ্কর কর নামে বিজেপির এক বুথ সভাপতিকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তৃমমূলের বিরুদ্ধে। পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের রঘুনাথপুরের বাসিন্দা গৌরীশঙ্কর সেখানের ১৫৭ নম্বর বুথে বিজেপি প্রার্থী সিদ্ধার্থ নস্করের হয়ে পোলিং এজেন্ট হিসাবে ছিলেন। অভিযোগ, এ জন্য তাঁকে হুমকি দিচ্ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা। এ দিন সকালে গৌরীশঙ্কর সাইকেলে ডিমারি বাজারে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় একদল তৃণমূল কর্মী তাঁকে রাস্তায় ফেলে মারধর করে বলে অভিযোগ। মাথায়, হাতে আঘাত লাগে গৌরীশঙ্করের। তাঁকে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

বিজেপির তমলুক জেলা সভাপতি প্রদীপ দাসের অভিযোগ, ‘‘পোলিং এজেন্ট হওয়ায় গৌরীশঙ্করকে হুমকি দিচ্ছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। এ দিন তাঁকে মারা হয়। থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’’ মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক তৃণমূল আহ্বায়ক শরৎ মেট্যা বলেন, ‘‘আমাদের দলের এক কর্মীর কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন গৌরীশঙ্কর। সেই টাকা ফেরত চাওয়া নিয়েই রাস্তায় দু’জনের বচসা হয়। মারধরের অভিযোগ ঠিক নয়। ঘটনায় আমাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’

অন্যদিকে, নন্দীগ্রামে সোমবার রাতভর একাধিক এলাকায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের পরিবারের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে। বিজেপির অভিযোগ, গোকুলনগরের বাসিন্দা তথা বিজেপি কর্মী শ্রীকান্ত মণ্ডলের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো এবং তাঁর স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। তারাই নগরের বাসিন্দা প্রদীপ মণ্ডল এবং জামবাড়ির অসীম করণের বাড়িতেও ভাঙচুরে চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ।

শুধু তাই নয় বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, ভোট শেষ হওয়ার পর থেকেই ওই সব পরিবারের পুরুষ সদস্যরা এলাকায় থাকতে পারছেন না। পুলিশ কোনও রকম সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ। নন্দীগ্রাম বিধানসভা এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা প্রলয় পাল বলেন, ‘‘দলের কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পুলিশকে বারবার জানিয়েছি। পুলিশ তবুও সহযোগিতা করছে না। থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে বিজেপি কর্মীদের ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ বিজেপি কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাথ পাল।

পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ প্রসঙ্গে হলদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পারিজাত বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

পটাশপুর-১ ব্লকের কাটরঙ্কা গ্রামে আবার বিজেপির পোলিং এজেন্ট শুভেন্দু মহাপাত্র এবং বড়হাট বুথে পোলিং এজেন্ট ঝর্না মহাপাত্রের বাড়িতে সোমবার রাতে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। শুভেন্দুদের অভিযোগ, অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে। শুভেন্দু এ দিন বলেন, ‘‘পটাশপুর থানায় গেলে পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। তারা জানায়, দুষ্কৃতীদের নির্দিষ্ট নাম দিয়ে অভিযোগ জানাতে হবে। আমরা কী দুষ্কৃতীদের নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করব! তাই এগরার এসডিপিওকে বিষয়টি জানিয়েছি।’’

ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়েছে রামনগরের মৈতনা অঞ্চলের সোনাকনিয়া গ্রাম। তৃণমূলের দাবি, ভোটের দিন সোনাকোনিয়া বুথের দলীয় সম্পাদক সুদাম বর্মনকে বিজেপি কর্মীরা মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। সুদামকে মাজনা হাসপাতলে ভর্তি করানো হয়। বিজেপির পাল্টা দাবি, ভোটের দিন বিজেপির পোলিং এজেন্ট অরুণ সাহু এবং দিব্যেন্দু পানিগ্রাহীকে তৃণমূল কর্মীরা মারধর করে। তাঁদের এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

ওই ঘটনায় সোমবার রাতে বিজেপি নেতা সত্যেন পঞ্চাধ্যাই এবং নিত্যগোপাল দাস রামনগর থানায় অভিযোগ জানাতে যান। বিজেপির অভিযোগ, রামনগর থানার পুলিশ ওই দুই বিজেপি নেতাকে রাতভর থানায় আটক করে রাখে। মঙ্গলবার সকালে এ জন্য বিজেপি সমর্থকেরা থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান। পরে রামনগর থানার পুলিশ ব্যক্তিগত বন্ডে ওই দুই বিজেপি নেতাকে ছেড়ে দেয়।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুই নেতাকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু তাঁরা তা না করে কর্তব্যরত আধিকারিকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। তাই তাঁদের আটক করা হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE