Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পুড়ল ঘর, সঙ্কট পরীক্ষার মধ্যেই

স্থানীয় সূত্রের খবর, খেজুরি-২ ব্লকের নিজকসবা গ্রাম পঞ্চায়েতের পাচুড়িয়া গ্রামে বৃহস্পতিবার একটি খড়ের চালের বাড়িতে আগুন লাগে। ওই বাড়িতে বাদল, তপন এবং স্বপন রায় নামে তিন ভাইয়ের পরিবার থাকত। স্বপনের মেয়ে মধুমিতা রায় অমৃত ভারতী বিদ্যাভবনের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

পোড়া বাড়ি থেকে কিছু বাঁচানোর আশায়। নিজস্ব চিত্র

পোড়া বাড়ি থেকে কিছু বাঁচানোর আশায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খেজুরি শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৪
Share: Save:

মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। সকালে বাড়িতে বইখাতা খুলে পড়তে বসেছিল বছর পনেরোর মধুমিতা। হঠাৎ প্রতিবেশীদের গলায় ‘আগুন, আগুন’ চিৎকার শুনতে পেয়েছিল সে। দ্রুত হাতের কাছে থাকা পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড আর কয়েকটি পড়ার বই নিয়ে ছুটে বেরিয়েছিল ওই ছাত্রী। অ্যাডমিট কার্ড হয়তো বাঁচাতে পেরেছে মধুমিতা। কিন্তু এখন তার চিন্তা বাকি পরীক্ষাগুলি দেবে কীভাবে! কারণ, আগুনের গ্রাসে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে তাদের বাড়ি।

স্থানীয় সূত্রের খবর, খেজুরি-২ ব্লকের নিজকসবা গ্রাম পঞ্চায়েতের পাচুড়িয়া গ্রামে বৃহস্পতিবার একটি খড়ের চালের বাড়িতে আগুন লাগে। ওই বাড়িতে বাদল, তপন এবং স্বপন রায় নামে তিন ভাইয়ের পরিবার থাকত। স্বপনের মেয়ে মধুমিতা রায় অমৃত ভারতী বিদ্যাভবনের দশম শ্রেণির ছাত্রী। সে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। তপনের ছেলে বিজয় রায় এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ দোতলা ওই বাড়ির খড়ের চালে আগুন লাগে। সে সময় বাড়িতে পড়ছিল মধুমিতা। অন্যেরা মাঠে ধান রোওয়ার জন্য গিয়েছিলেন বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন।

প্রতিবেশী আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পুড়ে ছাই হয়ে যায় বাড়িটি। প্রাথমিক ভাবে অনুমান, বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে ওই আগুন লেগেছিল। পরিবারের সদস্য বাদল রায় বলেন, “মনে হচ্ছে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছিল। এত দ্রুত পুরো বাড়িটা পুড়ে যাবে, তা কল্পনাও করতে পারিনি। নিঃস্ব হয়ে গেলাম।’’

উপপ্রধান সমুদ্ভব দাস বলেন, ‘‘প্রায় ১০-১২ মিনিটের মধ্যেই সমস্ত বাড়িটাই ছাই হয়ে যায়। সকলে ছুটে গিয়েও বাড়ি থেকে খুব বেশি জিনিস বের করতে পারেননি।’’ পরে ঘটনাস্থলে যান পঞ্চায়েত প্রধান প্রাণকৃষ্ণ দাস, খেজুরি-২ এর বিডিও রমণ সিংহ বিরদী। তিনি বলেন, ‘‘ওই পরিবারকে সাহায্য করা হচ্ছে। দুই পরীক্ষার্থীকে সমস্ত বই কিনে দেওয়া হবে। আপাতত কম্বল, চাদর, ত্রিপল, ৭২ কিলোগ্রাম চাল দেওয়া হয়েছে।’’

প্রশাসনের পাশে থাকার আশ্বাসে অবশ্য কান্না থামেনি মধুমিতার। তার কথায়, ‘‘শুক্রবার ইতিহাস পরীক্ষা। ইতিহাসের কিছু নোটস ও বই নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছিলাম। অন্য পরীক্ষার বই ব্লক প্রশাসন কিনে দিচ্ছে। কিন্তু সারা বছর ধরে যে নোটস সংগ্রহ করেছিলাম, সেগুলো কোথায় পাব? সহপাঠীদের কাছ থেকে তা পাওয়ার চেষ্টা করছি।’’

ভেঙে পড়েছেন মধুমিতার খুড়তুতো দাদা বিজয়ও। তিনি হিজলি গোপীচক হাইস্কুল থেকে এ বার উচ্চমাধ্যমিক দেবেন। বিজয় বলেন, “শুক্রবার অ্যাডমিট কার্ড হাতে পাব। কিন্তু সমস্ত বই পুড়ে গিয়েছে। সকলে সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু এত কম সময়ের মধ্যে কী ভাবে সবকিছু ফিরে পাব, তা ভেবে পাচ্ছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik Pariksha Fire Incident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE