গত এক সপ্তাহে মেচেদা রেল স্টেশনের কাছে ট্রেনের ধাক্কায় দু’টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ফের সেই মেচেদা স্টেশনের কাছেই ট্রেন থেকে পড়ে মৃত্যু হল এক যুবকের। পর পর এ ধরনের দুর্ঘটনায় স্থানীয় লোকজন নজরদারির ক্ষেত্রে রেলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পাল্টা রেলের দাবি, সচেতনতার অভাবেই বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে।
রেল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা নাগাদ হাওড়া থেকে মেদিনীপুরগামী লোকাল মেচেদা স্টেশন পার হওয়ার পরেই চিমুটিয়া গ্রামের কাছে এক যুবক ট্রেন থেকে পড়ে যায় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে রেল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই যুবককে উদ্ধার করে মেচেদা স্টেশনে রেলের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। রেল পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম ফরিদুল মল্লিক (১৮)। তাঁর বাড়ি ভগবানপুর থানার কুরালবাড় গ্রামে।
রেল পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যুবক ও তাঁর কয়েকজন সঙ্গী মিলে কর্নাটকে কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। সে জন্য হাওড়া থেকে মেদিনীপুরগামী লোকালে মেচেদা স্টেশন থেকে উঠে খড়্গপুরে যাচ্ছিলেন এক্সপ্রেস ধরার জন্য। ট্রেন মেচেদা স্টেশন ছাড়ার কিছু পরেই ওই যুবক ট্রেনের দরজার বাইরের দিকে মুখ করে পিক ফেলতে যাচ্ছিলেন। সেই সময় লাইনের পাশে থাকা বিদ্যুতের খুঁটিতে মাথায় ধাক্কা লাগলে লাইনে ছিটকে পড়েন। স্টেশন ম্যানেজার শম্ভুনাথ ঘোড়াই বলেন, ‘‘রেল লাইনের ধারে ওই যুবককে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এনেছিল। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। কী ভাবে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে পুলিশ তদন্ত করছে।’’
গত ২২ জুন মেচেদা স্টেশনের কাছে সাইকেল নিয়ে লাইন পার হওয়ার সময় দিঘাগামী লোকাল ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান আলেম খান (৪৫)। আলেম ট্রেনের ধাক্কায় জখম হওয়ার পর রেলপুলিশ তাঁকে উদ্ধার করলেও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ। পরে তিনি মারা যান। রেল পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ তুলে চার ঘণ্টা ধরে রেল অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে জেলা প্রশাসন, রেল দফতরের আধিকারিক ও রেল পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। ওই ঘটনার পর রেললাইন পারাপারের সময় দুর্ঘটনা এড়াতে নজরদারির জন্য রেল পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু গত ২৪ জুন মেচেদা স্টেশনের কাছে ফের মালগাড়ির ধাক্কায় কোলাঘাটের বাগুর গ্রামের বাসিন্দা এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। যদিও তিনি আত্মহত্যা করেন রেল পুলিশের দাবি। বৃদ্ধের পরিবারের অবশ্য দাবি, লাইন পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।
তার পর ফের বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়ে মেচেদা ষ্টেশন ও সংলগ্ন এলাকায় পুলিশের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিত্যযাত্রী ও স্থানীয় মানুষের দাবি, রেল পুলিশের নজরদারিতে ঢিলেমি থাকার জন্যই বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষ বার বার দুর্ঘটনার জন্য যাত্রীদেরই কাঠগড়ায় তুলেছেন। তাঁদের দাবি, যাত্রীরা সচেতন না হওয়ায় বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘রেল লাইন পারাপার নিয়ে মানুষকে সতর্ক করতে আমরা নিয়মিত খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিচ্ছি। এ ছাড়া প্রতিটি স্টেশনে মাইকে ঘোষণা ও বিভিন্ন সময়ে পথ নাটিকার আয়োজন হয়। এর পরেও এমন ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের চেষ্টা চলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy