প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বাড়ছে। ফলে, কমার কথা প্রসূতি মৃত্যু। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরে সেই ভাবে প্রসূতি মৃত্যু কমছে না।
রাজ্য সরকারের দাবি, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে পরিকাঠামো গত কয়েক বছরে ঢেলে সাজা হয়েছে। শিশু ও প্রসূতি মৃত্যু রোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। তাও পশ্চিম মেদিনীপুরে সেই ভাবে প্রসূতি মৃত্যুর হার কমছে না। দেখা যাচ্ছে, ২০১৬- ’১৭ সালে জেলায় ৪৪ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। ২০১৭- ’১৮ সালেও ৪৪ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ, সংখ্যার হেরফের হয়নি। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার স্বীকারোক্তি, ‘‘প্রসূতি মৃত্যুর হার কমছে। হয়তো উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে না।’’
প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, গত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত, এই সাত মাসেও জেলায় ২০ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। জেলার ওই স্বাস্থ্যকর্তা মানছেন, ‘‘যে কোনও পরিবারের কাছেই প্রসূতি মৃত্যু মর্মান্তিক ও দু:খজনক। বহু পথ অতিক্রম করে, কষ্টসাধ্য ব্যয়ের পর হাসপাতালে পৌঁছে প্রসূতির মৃত্যু হলে কোনও পরিবারই তা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারে না।’’ চিকিৎসার অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে বিভিন্ন হাসপাতালে বিক্ষোভও হয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার অবশ্য দাবি, ‘‘প্রসূতি মৃত্যুর হার আগের থেকে অনেক কমেছে। আরও কমানোর সব রকম চেষ্টা চলছে।’’
গত কয়েক বছরে জেলায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার বেড়েছে, প্রসূতিকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিশ্চয়যানের সংখ্যা বেড়েছে। তারপরেও প্রসূতি মৃত্যু রোধের ক্ষেত্রে কেন উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাচ্ছে না জেলা, প্রশ্ন উঠছে। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ২০১৬- ’১৭ সালে জেলায় প্রসূতি মৃত্যুর হার ছিল প্রতি লাখে ৭৬ জন। ২০১৭- ’১৮ সালে তা হয় প্রতি লাখে ৬৯ জন। আর গত এপ্রিল থেকে অক্টোবরে এই হার ৭৫ জন। প্রশাসনের অন্য এক সূত্রের অবশ্য দাবি, আগে এর থেকেও বেশি প্রসূতির মৃত্যু হত। ওই সূত্র জানাচ্ছে, ২০১১- ’১২ সালে ৭৯ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। ২০১৪- ’১৫ সালে ৬১ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। ২০১৫- ’১৬ সালে ৪৬ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।
চিকিৎসকদের একাংশের মতে, লেবার রুমের অপরিচ্ছন্নতা এই মৃত্যুর পিছনে অনেকটা দায়ী। পাশাপাশি, অনেক হাসপাতালে নূন্যতম সরঞ্জাম এবং দক্ষ কর্মীরও অভাব রয়েছে। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘অনেক সময়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে প্রসূতি মারা যায়।’’ জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার স্বীকারোক্তি, ‘‘কিছু সমস্যা রয়েছে। সমস্যাগুলো দূর করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’’ লেবার রুমের অপরিচ্ছন্নতাও তো একটা বড় সমস্যা? তিনি মানছেন, ‘‘লেবার রুমের অপরিচ্ছন্নতা একটা সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানেরও চেষ্টা চলছে। লেবার রুমগুলো যাতে সব সময় পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন থাকে তা দেখার কথা হাসপাতালগুলোকে বলা হয়েছে।’’
জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার বক্তব্য, ‘‘প্রসূতি মৃত্যু নিয়ে পর্যালোচনা হয়। দেখা গিয়েছে, এ ক্ষেত্রে মূলত দু’টি কারণ থাকে। এক, খিঁচুনি। দুই, রক্তক্ষরণ।’’ তাঁর কথায়, ‘‘অনেক সময়ে চেষ্টা করেও খিঁচুনি ওঠা প্রসূতিকে বাঁচানো যায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy