Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ধর্ষণে যাবজ্জীবন, সাজা শোনা হল না নির্যাতিতার 

 বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর আদালতে ধর্ষণে অভিযুক্তদের সাজা শোনানো হয়। এসেছিলেন ওই নির্যাতিতার দাদা। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই ধর্ষণ, খুনের চেষ্টার ধারায় মামলা রুজু হয়েছিল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৯ ০১:২১
Share: Save:

দোষীদের কঠোর শাস্তি চেয়েছিলেন নির্যাতিতা যুবতী। দু’জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড আর একজনের দশ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন বিচারক। কিন্তু তা আর শোনা হল না নির্যাতিতার। মাস দুয়েক আগেই যে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর আদালতে ধর্ষণে অভিযুক্তদের সাজা শোনানো হয়। এসেছিলেন ওই নির্যাতিতার দাদা। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই ধর্ষণ, খুনের চেষ্টার ধারায় মামলা রুজু হয়েছিল। মামলার সরকারি আইনজীবী শক্তিপদ দাস অধিকারী বলেন, ‘‘অত্যন্ত সংবেদনশীল এই মামলায় বিচারক শুধু দোষীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেননি। তিনি জানিয়েছেন, পাঁচ লক্ষ টাকা করে দুই দোষী জরিমানাও দেবে নির্যাতিতার পরিবারকে।’’ সরকারি আইনজীবী বলেন, ‘‘পরিচিতরাই তাঁর সঙ্গে এমন কাণ্ড ঘটানোয় আতঙ্কে ছিলেন নির্যাতিতা। শরীরের একাংশে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বেঁচে থাকলে দোষীদের সাজা শুনতে পারতেন। তা আর হল না।’’

এ দিন সাজা ঘোষণার পাশাপাশি ‘ভিকটিম কমপেনসেশন ফান্ড’ থেকে নির্যাতিতার পরিবারকে ৭ লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটে ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর গড়বেতার গনগনিতে। পুলিশ সূত্রে খবর, সে দিন গণধর্ষণের শিকার হন বছর তেইশের এমএ পাঠরতা ওই যুবতী। তাঁকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের পর খুনের চেষ্টাও হয়েছিল। ধর্ষণ করে যুবতীকে গনগনির খাদে ফেলে দিয়ে পালানোর সময় অভিযুক্তরা ধরা পড়ে। ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হয় সৌমিত্র ঘোষ, সুশোভন দাস ও সঞ্জিত গুপ্ত। সৌমিত্র কলকাতার টালার নন্দকিশোর স্ট্রিট এলাকার বাসিন্দা। পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরের বামুনাড়া কসবা এলাকায় বাড়ি সুশোভনের। সঞ্জিত গাড়ির চালক। তার বাড়ি চন্দ্রকোনা রোডের অপর্ণাপল্লিতে। সৌমিত্র এবং সুশোভন ওই যুবতীর পূর্ব পরিচিত ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি ওই যুবতী একটি বেসরকারি সংস্থায় আংশিক সময়ে কাজ করতেন। সেই সংস্থাতেই কাজ করত তারা। পরে অবশ্য ওই সংস্থার কাজ ছেড়ে দেন যুবতী। ঘটনার দিন টিউশন করে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। সেই সময় সৌমিত্র এবং সুশোভন নতুন কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ও পানিকোটরের কাছে দাঁড়াতে বলে। পুলিশ সূত্রে খবর, কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই যুবক গাড়ি নিয়ে সেখানে আসে এবং জোর করে ওই যুবতীকে গাড়িতে তুলে গনগনিতে নিয়ে যায়। গাড়িতেই গণধর্ষণের শিকার হন ওই যুবতী। তাঁর চিৎকারে লোকজন জড়ো হয়ে গেলে গাড়ি থেকে তাঁকে ফেলে দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে অভিযুক্তরা।

মামলাটি চলছিল মেদিনীপুরের ফার্স্ট ট্র্যাক সেকেন্ড কোর্টের বিচারক সুলগ্না দস্তিদারের এজলাসে। মামলায় ১৯ জন সাক্ষ্যদানকারীর মধ্যে নির্যাতিতাও ছিলেন। গত বছর ১৬ এপ্রিল মারা যান নির্যাতিতা। গত সোমবার বিচারক অভিযুক্ত তিনজনকেই দোষী সাব্যস্ত করেন। এ দিন ছিল সাজা ঘোষণা। সাজা ঘোষণার পর নির্যাতিতার দাদা চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘‘দোষীদের শাস্তি শুনলে বোন শান্তি পেত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rape Crime Midnapore Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE