পালানোর সময় কর্ণ বেরা ও তার শাকরেদরা। যদিও এই দলে নেই মুন্না। —ফাইল চিত্র
হাতে মাত্র ক’টা দিন। তার পরেই দুর্গাপুজো। শেষ বেলার কেনাকাটা চলছিল জোরকদমে। তার মধ্যেই কাঁথিতে সাময়িক ‘ছন্দপতন’! শহরে দেখা গিয়েছে অন্য ‘আতঙ্ক’।
বৃহস্পতিবারই আদালত চত্বর থেকে বোমা-গুলি ছুড়ে পালানোর চেষ্টা করে দুষ্কৃতী কর্ণ বেরা। সে ধরা পড়লেও তার সঙ্গী অন্য এক কুখ্যাত দুষ্কৃতী মুন্না ওরফে শেখ সিরাজ এখনও ফেরার। তাকে ঘিরে কার্যত ত্রস্ত কাঁথিবাসী। মুন্নার সন্ধানে এবং কাঁথিবাসী যাতে আতঙ্কিত না হন, সে জন্য বৃহস্পতিবার মাইকে করে ঘোষণা করে পুলিশ। সে ঘটনারও আগে কখনও সাক্ষী থাকেনি কাঁথিবাসী। ঘোষণায় জানানো হয়, অপরিচিত কাউকে দেখলে যেন পুলিশকে দ্রুত খবর দেওয়া হয়। সে জন্য একটি মোবাইল নম্বরও ঘোষণা করেছে পুলিশ।
কাঁথি মনোহরচকের বাসিন্দা তপন মাইতি বলেন, “পুলিশের এমন ঘোষণা নজিরবিহীন। সাম্প্রতিক অতীতে কাঁথিতে এমন ঘোষণা শুনিনি।’’ পাশাপাশি রাত ন’টার পর কাঁথিবাসীকে বাড়িতে ঢুকে যাওয়ার আবেদন জানানো হয়। যার জেরে বৃহস্পতিবার রাত আটটা থেকে কাঁথি শহরের রাস্তাঘাট প্রায় শুনশান হয়ে যায়। দুর্গাপুজোর মুখে শহরের দোকানপাট রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে ছিল কার্যত বন্ধের চেহারা।
শুক্রবার অবশ্য সকাল থেকেই ফের ছন্দে ফেরার চেষ্টা করেছে কাঁথি শহর। দোকানপাট খুলেছে আদালত চত্বর এবং পোস্ট অফিস মোড় সংলগ্ন এলাকায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বস্ত্র ব্যবসায়ী বলেন, “পুজোর মুখে ব্যবসা বেশ ক্ষতি হল। কিন্তু কিছুই করার নেই। জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তবে দিনের বেলা দোকান খুললেও রাতে একটু তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দেব বলে ভাবছি। কারণ, মুন্না এখনও ধরা পড়েনি। ওর সম্পর্কে যা শুনেছি, তাতে ভয়ই হয়।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, কর্ণের মতো মুন্নাও একাধিকবার পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছে। কাঁথি জালালখাঁবাড়ের বাসিন্দা বছর চল্লিশের ওই ব্যক্তি ব্যাঙ্ক, পেট্রোল পাম্পে ডাকাতি, ধর্ষণ, খুনের মত মামলায় অভিযুক্ত। মেদিনীপুর সংশোধনাগারে ওই মুন্নার সংস্পর্শে এসে কর্ণ আরও কুখ্যাত এবং বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে পুলিশের অনুমান। ২০০১ সাল নাগাদ মুন্না যে পদ্ধতিতে ডাকাতি এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ শুরু করেছিল তাতে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল কাঁথিবাসীর। শহরের প্রফেসর কলোনির এক বাসিন্দা হলেন, “তখন মুন্না যাঁর বাড়িতে ডাকাতি করবে, তাঁর বাড়িতে চিরকুট পাঠাত। সেই চিরকুটে টাকার অঙ্ক লেখা থাকত। পুলিশে খবর দিলে ভয়ানক পরিণতি হতে পারে বলে হুমকি দেওয়া থাকতো সেই চিরকুটে।’’
২০০১ সালেই কাঁথির ধনদিঘি এলাকায় একটি বাড়িতে এভাবে চিঠি দিয়ে ডাকাতি করতে গিয়েছিল মুন্নার দলবল। বাড়ির লোকের চিৎকার শুনে ছুটে গিয়েছিলেন প্রতিবেশী ইখতিয়ার মহম্মদ। মুন্না ইখতিয়ারকে গুলি করেছিল। পরে ইখতিয়ারের মৃত্যু হয়।
এমন দুষ্কৃতী ফেরার থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তত কাঁথিবাসী। পুলিশ অবশ্য তাঁদের আশ্বস্ত করেছে। মুন্নার খোঁজে এ দিন জেলার বিভিন্ন রাস্তায় যানবাহনে তল্লাশি হয়। অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “ভয়ের কোনও কারণ নেই। পুলিশ তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছে। দুষ্কৃতীদের ধরতে জেলা জুড়ে জাল ছড়ানো হয়েছে। আঁটোসাঁটো করা হয়েছে নিরাপত্তা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy