টানা তিন সপ্তাহ রেশন সামগ্রী না পেয়ে রাস্তা অবরোধ করলেন বাসিন্দারা। রবিবার সকাল ৮ টা নাগাদ থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত টানা পাঁচ ঘণ্টা জামবনি ব্লকের শাবলমারা চকে ওই অবরোধের ফলে চিচিড়া-গিধনি পিচরাস্তায় যানবাহন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
শাবলমারা গ্রামের রেশন গ্রাহকদের অভিযোগ, ব্লকের এক যুব তৃণমূল নেতার যোগসাজশে রেশনের মাল খোলা বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন ঘুটিয়া গ্রামের রেশন ডিলার। এর ফলে পর পর তিন সপ্তাহ রেশনে বরাদ্দ কিছুই পাননি শাবলমারার গ্রাহকরা।
গ্রামবাসীরা জানান, বছর কয়েক আগে শাবলমারার রেশন ডিলার বিশ্বজিৎ হেমব্রমের মৃত্যু হয়। এরপর খাদ্য দফতরের তরফে শাবলমারার গ্রাহকদের রেশন সামগ্রী বণ্টনের দায়িত্ব দেওয়া হয় পাশের গ্রাম ঘুটিয়ার রেশন ডিলার শুভেন্দু সুঁইকে। ঘুটিয়া গ্রামের রেশন দোকানটি অবশ্য চালান শুভেন্দুবাবুর ভাগ্নে বাপি সুঁই। শাবলমারার গ্রাহকদের অভিযোগ, পর পর তিন সপ্তাহ রেশন সামগ্রী আসেনি বলে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন রেশন ডিলার। অথচ ঘুটিয়া গ্রামের গ্রাহকরা নিয়মিত রেশন পাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয় বাসিন্দাদের একাংশের।
এ দিন শাবলমারার বাসিন্দারা ঘুটিয়া গ্রামের রেশন দোকানে গেলে ফের তাঁদের ফিরিয়ে দেন ডিলার। এই নিয়ে ডিলারের সঙ্গে বাসিন্দাদের বাদানুবাদ হয়। এরপর ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা সকাল ৮টা নাগাদ শাবলমারা চকে পথ অবরোধ শুরু করেন। সকাল দশটা নাগাদ পুলিশ জোর করে অবরোধ তুলে দেয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে ফের রাস্তা আটকে অবরোধ শুরু করেন বাসিন্দারা। অবরোধস্থলে বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, জামবনি ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি দেবনাথ হাঁসদার মদতে শাবলমারার জন্য বরাদ্দ রেশন সামগ্রী খেলা বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন রেশন ডিলার।
রেশন-কেলেঙ্কারিতে দলের যুব নেতার নাম জড়িয়ে যাওয়ায় গ্রামবাসীদের নিরস্ত করতে ঘটনাস্থলে আসেন চিচিড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান দিলীপ বারিক। কিন্তু ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা দিলীপবাবুকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। শেষ পর্যন্ত খাদ্য দফতরের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে এসে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে দুপুর ১টা নাগাদ অবরোধ ওঠে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত চৈত্র পূর্ণিমায় শাবলমারা গ্রামে বার্ষিক মেলার আয়োজন করা হয়।
ওই মেলার আয়োজক শাবলমারা সর্বজনীন দোল উৎসব কমিটির সম্পাদক হলেন জামবনি ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি দেবনাথ হাঁসদা। অভিযোগ, রেশন ডিলারের কাছ থেকে মেলা কমিটির লোকজন মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেছিল। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, দেবনাথবাবুই এক মাস রেশন সরবরাহ বন্ধ রেখে ওই টাকা পুষিয়ে নিয়ে বলেছিলেন ডিলারকে। সেই মতো গত কয়েক সপ্তাহ যাবত শাবলমারা গ্রামের বরাদ্দ রেশন দেওয়া বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ।
এ প্রসঙ্গে ডিলারের ভাইপো বাপি সুঁই অবশ্য সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর দাবি, “দু’পক্ষের গোলমালে এ সব হচ্ছে। আমি রেশন দেব না বলিনি।” জামবনি ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি দেবনাথ হাঁসদা ঘটনাটি স্বীকার করেছেন। তবে তিনি দায় চাপিয়েছেন গ্রামবাসীদের উপর। দেবনাথ বলেন, “মেলা কমিটিতে গ্রামবাসীরাও রয়েছেন। সুষ্ঠুভাবে মেলাটি করার জন্য কমিটির সকলের মতামত নিয়ে রেশন ডিলারের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয়েছিল। একমাস রেশন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তটিও সর্বসম্মত ভাবে নেওয়া হয়েছিল।” প্রশ্ন উঠছে, যে গ্রামবাসীরা রেশন বন্ধ রাখার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন, তাঁরাই কেন হঠাৎ পথ অবরোধ করতে গেলেন? দেবনাথের সাফাই, ‘‘এটা বিরোধীদের চক্রান্ত। বিরোধীরাই স্থানীয়দের দিয়ে পথ অবরোধ করিয়েছে।’’
এ দিন মহকুমা খাদ্য নিয়ামক তরুণ মণ্ডলের নেতৃত্বে দফতরের আধিকারিকরা ঘুটিয়ার ওই রেশন দোকানে সরেজমিন তদন্তে যান। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা খাদ্য নিয়ামক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “মহকুমা খাদ্য নিয়ামক তদন্তে গিয়েছেন। বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy