Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রার্থী তালিকার আগেই শুরু মনোনয়ন

ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। বুধবারই খড়্গপুরে পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে বৃহস্পতিবারও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল না কোনও রাজনৈতিক দল। যদিও মহকুমাশাসকের দফতর সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার এসডিও অফিস থেকে মোট ২৪টি মনোনয়নপত্র তোলা হয়েছে। প্রার্থী তালিকা প্রকাশ না করেই মনোনয়নপত্র তোলা ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

নাম জানা নেই প্রার্থীর। তাই শুধু প্রতীক এঁকেই চলছে ভোটের প্রচার। খড়্গপুরে রামপ্রসাদ সাউয়ের তোলা ছবি।

নাম জানা নেই প্রার্থীর। তাই শুধু প্রতীক এঁকেই চলছে ভোটের প্রচার। খড়্গপুরে রামপ্রসাদ সাউয়ের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৫ ০১:১০
Share: Save:

ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। বুধবারই খড়্গপুরে পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে বৃহস্পতিবারও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল না কোনও রাজনৈতিক দল। যদিও মহকুমাশাসকের দফতর সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার এসডিও অফিস থেকে মোট ২৪টি মনোনয়নপত্র তোলা হয়েছে। প্রার্থী তালিকা প্রকাশ না করেই মনোনয়নপত্র তোলা ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “বুধবার কেউ মনোনয়ন তোলেনি। তবে মনোনয়ন পর্বের দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবার অনেকে টাকা জমা দিয়ে মনোনয়নপত্র তুলেছেন। মোট ২৪টি মনোনয়নপত্র তোলা হয়েছে। যদিও এ দিন কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেননি।”

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, কেউই যুদ্ধে নামার আগে নিজের ঘুঁটি দেখাতে চাইছেন না। তাই মনোনয়ন তোলা ঘিরে মুখে কুলুপ এঁটেছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। মনোনয়ন তোলার কথা অবশ্য মানছেন কংগ্রেস নেতারা। অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তব্য, প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরই মনোনয়ন তুলবেন তারা। কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও রেলশহরের দু’টি ওয়ার্ডে প্রার্থী বাছাই নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তাই পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে আরও দু’এক দিন সময় লাগবে। এ দিন রেলশহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহম্মদ আলি আহমেদ, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মহম্মদ ইমতিয়াজ, ২২ নম্বর ওয়াডের্র বিষ্ণুবাহাদুর কামি, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের যশোদা যাদব ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সনাতনলাল যাদবের মতো সম্ভাব্য কংগ্রেস প্রার্থীরা মনোনয়ন তুলেছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। এর মধ্যে বিষ্ণুবাহাদুর কামি ও সনাতনলাল যাদব সংশ্লিষ্ঠ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। মনোনয়ন তোলার কথা স্বীকার করে বিষ্ণুবাহাদুর কামি বলেন, “দলের নির্দেশ মতোই মনোনয়ন তুলেছি।”

প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগেই কেন মনোনয়ন তোলার নির্দেশ দেওয়া হল? খড়্গপুর শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাস বলেন, “দলের প্রার্থী কারা হবেন তা প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়ে গিয়েছে। তাই দলের পাঁচ জন প্রার্থী কাজ এগিয়ে রাখতে মনোনয়ন তুলেছেন। তবে ২৪ মার্চ দলের সব প্রার্থীরা একসঙ্গে মনোনয়ন জমা দেবেন।” কংগ্রেস পাঁচটি মনোনয়ন তোলার কথা স্বীকার করেছে। তাহলে বাকি ১৯টি মনোনয়ন কারা তুলল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। মহকুমাশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মনোনয়নপত্র তোলার জন্য এ দিন বেশ কিছু বাম ও তৃণমূল সমর্থককেও অফিসের পাশে ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে।

ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও শাসক দল এখনও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেনি। তৃণমূল সূত্রে খবর, গোষ্ঠী কোন্দলে এখনও খড়্গপুরে ১৭, ২৩ ও ২৫ নম্বর-সহ চারটি ওয়ার্ডের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে জট অব্যাহত। খড়্গপুরে প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পাল ও শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর গোষ্ঠীর কোন্দলের জেরেই এখনও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে না পারায় জেলা নেতারা রাজ্য নেতৃত্বের শরণাপন্ন হচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। এ দিন তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্‌ ঘোষ বলেন, “খড়্গপুরের অধিকাংশ আসনেই প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে সমস্যা মিটে গিয়েছে। শহরের ৩৫টি আসনের মধ্যে ৪টি আসনে যে সমস্যা রয়েছে, তা ছোট বিষয়। সমস্যা মেটাতে কলকাতায় যাচ্ছি।” যদিও দলীয় সূত্রে খবর, দলের অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী বাড়ি বাড়ি ভোট প্রচার শুরু করেছেন। আবার অনেকেই আগেভাগে মনোনয়নপত্র তুলে রাখার জন্য মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।

এখনও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি গেরুয়া শিবিরও। বিজেপি সূত্রে খবর, রেলশহরের ৩৫টি ওয়ার্ডের প্রতিটি থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য গড়ে ১৭টি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। তারমধ্যে থেকে চূড়ান্ত নাম বাছাই করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন দলীয় নেতৃত্ব। বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “খড়্গপুরের ক্ষেত্রে ৩৫টি ওয়ার্ডে প্রার্থীপদের জন্য মোট ১৪০টি আবেদন জমা পড়েছে। ফলে প্রার্থী বাছাইয়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে, এটা ঠিক। তবে আমরা আর এক দিনের মধ্যেই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করব। তার পরেই একসঙ্গে মনোনয়নপত্র তোলা ও জমার কাজ করা হবে।”

শরিকি কোন্দলে প্রার্থী তালিকা তৈরি নিয়ে সমস্যায় বাম শিবির। প্রথমে ঠিক ছিল, রেলশহরের ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে সিপিএম ১৮টি ও সিপিআই ১৭টি আসনে প্রার্থী দেবে। ফরওয়ার্ড ব্লক বা আরএসপি আসন দাবি করলে সিপিএম তাদের একটি করে আসন ছেড়ে দেবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। যদিও পরে ফরওয়ার্ড ব্লক ২টি আসন দাবি করায় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা যাচ্ছে না বলে বামফ্রন্ট সূত্রে খবর। ফলে গত ১৬ মার্চ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার কথা থাকলেও তা করা যায়নি। সিপিএমের শহর জোনালের সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডল বলছেন, “ফরওয়ার্ড ব্লক বা আরএসপির শহরে কোনও সংগঠন নেই। তাই আমরা তাঁদের কোনও আসন ছাড়তে পারছি না।”

যদিও এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে ফব-র জেলা সম্পাদক অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “২১ মার্চ বামফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হবে। ২০০৫ সালে খড়্গপুরে আমাদের কাউন্সিলর ছিল। তাই আমরা দু’টি আসন দাবি করেছি। আশা করছি, জেলা বামফ্রন্ট বিষয়টি নিয়ে ভাববে।” বৃহস্পতিবার কী কোনও বাম প্রার্থী মনোনয়ন তুলেছেন? প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে সিপিএম নেতা অনিতবরণ মণ্ডল বলেন, “২৪ মার্চ দলের সব প্রার্থীরা একসঙ্গে মনোনয়ন তোলা ও জমার কাজ করবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE