নতুন-জীবন: বিদ্যাসাগর বালিকা হোমে বিয়ের আসর। —নিজস্ব চিত্র।
চারিদিকে ফুলের সাজ, মেঝেতে আলপনা, মিউজিক সিস্টেম থেকে ভেসে আসছে সানাইয়ের সুর। মঙ্গলবার সকাল থেকেই অন্যরকম পরিবেশ ছিল মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বালিকা হোমে। হোম চত্বরেই বিয়ের আয়োজন হয়েছিল আবাসিক সাবিত্রী দাসের। বছর বাইশের অনাথ এই যুবতীর সঙ্গে বিয়ে হল মূক-বধির যুবক সুমন সাহার। সুমনের বাড়ি বাঁকুড়ার কোতুলপুরে। তিনি কম্পিউটার মেরামতের কাজ করেন। নিজস্ব দোকানও রয়েছে।
এ দিন বিয়ের আসরে হাজির ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম নিয়োগী, মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক দীননারায়ণ ঘোষ। বিয়ে ঘিরে হোমের অন্য আবাসিকদের মধ্যে উত্সাহের অন্ত ছিল না। অতিথিদের সরবত-মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। অতিথি আপ্যায়নের মধ্যেই চোখের কোণে জল চিকচিক করছিল কারও কারও। হোমের এক আবাসিক বলছিল, “সাবিত্রীদি সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকত। আজ দিদির বিয়ে হল। ভাল লাগছে। আবার কোথাও একটা মন খারাপও আছে। আমাদের সঙ্গে এতদিন ছিল তো।’’ অন্য এক আবাসিকের কথায়, “দিদি নিজের পরিবার পেল, সংসার পেল— সত্যি ভাল লাগছে।’’
বর-কনেকে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেছেন প্রশাসনিক কর্তারা। অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম নিয়োগী, মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক দীননারায়ণ ঘোষরা বলছিলেন, “ওদের নতুন জীবন আরও সুন্দর হোক। আজকের দিনে এখানে আসতে পেরে খুব ভাল লাগছে।’’ সাবিত্রীর বিয়ে উপলক্ষে এ দিন দুপুরে পাত পেড়ে খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। মেনুতে ছিল ভাত, আলু ভাজা, বাঁধাকপির তরকারি, মাছ, মাংস, চাটনি, মিষ্টি, আইসক্রিম। মেদিনীপুরের এই বালিকা হোমের সুপার সুস্থিতি তিওয়ারির কথায়, “আজকের দিনটা আমাদের সকলের কাছেই খুব খুশির। পাত্রের পরিবারের তরফে শুরুতে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তারপর সব দিক খতিয়ে দেখে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। সবাই মিলে যতটুকু পেরেছি আয়োজন করেছি।’’
সাবিত্রী ছোটবেলায় লিলুয়ার হোমে ছিল। সেখান থেকে মেদিনীপুরে আসেন। সেই ছোট থেকে হোমে বড় হওয়া। পরিবার-পরিজন বলতে কেউ নেই। এ বার নিজের সংসার পেয়ে খুশি সাবিত্রী।
এই যুবতীর কথায়, “আমি খুব খুশি। পুরনো দিনের কথা আর মনে রাখতে চাই না। নতুন জীবন শুরু করতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy