Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূল পঞ্চায়েতের সাফাইয়ে ‘শ্রী’-বৃদ্ধি সিপিএম অফিসের 

রাজ্যে পালাবদলের পর বন্ধ হয়ে যায় কার্যালয়টি। আগাছায় ভরে গিয়েছিল এলাকা। এ বার সেই সিপিএমের অফিস সংলগ্ন এলাকা তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সাফসুতরো করায় শুরু হয়েছে শোরগোল।

সাফাইয়ের পরে সিপিএমের অফিস (বাঁ দিকে), আগে ছিল এমনই । —নিজস্ব চিত্র

সাফাইয়ের পরে সিপিএমের অফিস (বাঁ দিকে), আগে ছিল এমনই । —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৪৭
Share: Save:

দিন কয়েক আগে দেখলেও মনে হত, রাস্তার পাশে ‘ভূতুড়ে’ বাড়িটা দাঁড়িয়ে রয়েছে! চারপাশে ঝোপজঙ্গল ভর্তি। এখন সেই বাড়িটার আশপাশই একেবারে সাফসুতরো। বাড়িটা সিপিএমের এক দলীয় কার্যালয়। আর আশপাশ সাফসুতরো হয়েছে তৃণমূল পরিচালিত স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের সৌজন্যে! ঘটনা মেদিনীপুর সদর ব্লকের মণিদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের এনায়েতপুরের।

জঙ্গলমহলের অশান্তিপর্বে সিপিএমের এই দলীয় কার্যালয় আক্রমণ করে গুলি-যুদ্ধে হেরে শেষমেশ পিছু হটে মাওবাদীরা। শীর্ষ মাওবাদী নেতা কিষেনজিও সিপিএমের ওই অফিস থেকে গুলি চালানোর অভিযোগ করেছিলেন। অভিযোগ অস্বীকার করে সিপিএম জানিয়েছিল, গ্রামবাসীদের প্রতিরোধে পিছু হটেছিল মাওবাদীরা।

রাজ্যে পালাবদলের পর বন্ধ হয়ে যায় কার্যালয়টি। আগাছায় ভরে গিয়েছিল এলাকা। এ বার সেই সিপিএমের অফিস সংলগ্ন এলাকা তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সাফসুতরো করায় শুরু হয়েছে শোরগোল। বিজেপির মেদিনীপুর গ্রামীণ পশ্চিম মণ্ডলের সভাপতি সুজয় দাসের খোঁচা, ‘‘সিপিএমের পার্টি অফিসের আশপাশ সাফসুতরো করে দিচ্ছে তৃণমূলের পঞ্চায়েত। ভাবা যায়! আসলে তৃণমূল চাইছে সিপিএম ওই পার্টি অফিসটি খুলুক। এলাকায় দলের কাজকর্ম শুরু করুক।’’ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা তৃণমূলের স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি অঞ্জন বেরা বলেন, ‘‘একশো দিনের প্রকল্পে ওই এলাকায় একটি নিকাশি নালা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। নালাটা ওই কার্যালয়ের সামনে দিয়েই যাচ্ছে। সংস্কার কাজের জন্য আশেপাশের এলাকাও সাফসুতরো করতে হয়েছে। সেই সূত্রেই ওই এলাকা সাফসুতরো হয়ে গিয়েছে!’’ অঞ্জনের দাবি, ‘‘এখানে অন্য কোনও কারণ খোঁজার মানে হয় না।’’

তৃণমূলের সহযোগিতায় পার্টি অফিস খোলার অভিযোগ মানতে নারাজ সিপিএমও। মেদিনীপুর সদর ব্লকের সিপিএম নেতা দেবাশিস দত্ত বলেন, ‘‘অন্য কোনও দলের সহযোগিতা নিয়ে পার্টি অফিস খোলার প্রশ্নই আসে না। ওই পার্টি অফিস খোলার পরিকল্পনা এখনই নেই। ওই পার্টি অফিসের চেয়ার, টেবিল, দরজা, জানলা সব ভাঙা রয়েছে। ’’

মণিদহ গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৩টি আসন। এর ৭টি তৃণমূলের দখলে। ৬টি পেয়েছিল বিজেপি। মণিদহ সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে আরও তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত, চাঁদড়া, ধেড়ুয়া আর কঙ্কাবতী। এরমধ্যে কঙ্কাবতী ছাড়া বাকি দু’টি বিজেপির দখলে। এই প্রেক্ষিতেই এনায়েতপুরের সিপিএমের পার্টি অফিস পরিষ্কারের বিষয়টি অন্য মাত্রা পাচ্ছে। বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশের খোঁচা, ‘‘তৃণমূলই যে সিপিএমকে অক্সিজেন দেওয়ার চেষ্টা করছে তা মানুষ বেশ বুঝতে পারছেন!’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘আমরা চাই সবাই নিজের মতো করে চলুক। বিজেপির তেমন অস্তিত্ব নেই!’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘যেখানে আমরা পার্টি অফিসগুলি খোলা রাখতে পারব, সেখানেই পার্টি অফিস খোলা হচ্ছে।’’

স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, ওই নিকাশি নালা সংস্কারে খরচ হতে পারে ২ লক্ষ ৯৩ হাজার ৬০৯ টাকা। উপপ্রধান অঞ্জন বলেন, ‘‘স্থানীয় মানুষের দাবি মেনেই আমরা নিকাশি নালাটি সংস্কারে উদ্যোগী হই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC CPM Midnapor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE