শপথগ্রহণ করছেন নব নির্বাচিত পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
তিন দফায় মিলিয়ে টানা ১২ বছর ধরে তমলুকের পুরপ্রধান ছিলেন তিনি। ২০০২ সালে বিরোধী সহ দলেরই একাংশ কাউন্সিলরদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে গিয়ে পদ খুইয়েছিলেন। সেই ঘটনার ১৩ বছর পর ফের তমলুকের পুরপ্রধান হলেন তৃণমূলের রবীন্দ্রনাথ সেন। এই নিয়ে চতুর্থবার তমলুকের পুরপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত হলেন ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী কাউন্সিলর রবীন্দ্রনাথবাবু। আর এ বার দলের কাউনসিলরদের সর্বসম্মত সমর্থন নিয়েই।
২০ আসন বিশিষ্ট তমলুক পুরসভায় এবার তৃণমূল এককভাবেই ১৬ আসনে জয়লাভ করেছে। বাকি চারটি আসনের মধ্যে তিনজন নির্দল ও একজন বিজেপি কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের নিয়ে মঙ্গলবার পুরবোর্ড গঠনের জন্য সভা ডাকা হয়। অবশ্য তার আগে সোমবার তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর উপস্থিতিতে তৃণমূলে যোগ দেন ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী নির্দল কাউন্সিলর অলক সাঁতরা। মঙ্গলবার দুপুরে তমলুক পুরসভার অফিসের দোতলায় সভাগৃহ মহেন্দ্র স্মৃতি সদনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পুরসভার নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ করান তমলুকের মহকুমা শাসক শুভাশিস বেজ। শপথ গ্রহণের পরে পুরপ্রধান নির্বাচনে সভাপতিত্ব করেন পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর চন্দন প্রধান। সভায় পুরপ্রধান হিসেবে তৃণমূলের রবীন্দ্রনাথ সেনের নাম প্রস্তাব করেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চামেলি দাস সামন্ত। দ্বিতীয় কোন না প্রস্তাব নাম না হওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুরপ্রধান নির্বাচিত হন রবীন্দ্রনাথ সেন। এদিনই তিনি পুরপ্রধান পদে শপথ নেন।
১৯৮১ সালে প্রথমবার তমলুক পুরসভার নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হয়ে লড়াই করে নির্বাচিত হয়েছিলেন পেশায় আইনজীবী রবীন্দ্রনাথবাবু। পুরবোর্ডের মাঝপথে ১৯৮২ সালে মাত্র মাস দু’য়েকের জন্য উপ-পুরপ্রধান হয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৬ সালে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে জেতেন। ১৯৯০ সালে ফের কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে জিতে কাউন্সিলর হয়েছিলেন। ১৯৯১ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবার পুরপ্রধান পদে আসেন রবীন্দ্রনাথবাবু। এরপর ১৯৯৫ সালে ফের কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য পুরপ্রধান হন । এরপর ২০০০ সালের পুরসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলে যোগ দিয়ে ফের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তৃতীয়বারের জন্য ফের পুরপ্রধান হন রবীন্দ্রনাথবাবু। কিন্তু ২০০২ সালের জুলাই মাসে তৎকালীন তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট পরিচালিত পুরবোর্ডের একাংশ তৃণমূল, কংগ্রেস কাউন্সিলর ও বিরোধী বামফ্রন্ট কাউন্সিলররা মিলে রবীন্দ্রনাথবাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। অনাস্থা ভোটে হেরে পুরপ্রধানের পদ হারান রবীন্দ্রনাথবাবু।
এ বার রবীন্দ্রনাথবাবুর পাশাপাশি পুরপ্রধানের বিদায়ী উপ-পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়, আরেক প্রাক্তন পুরপ্রধান পৃথ্বীশ নন্দী ও টানা পাঁচবারের জয়ী কাউন্সিলর চন্দন প্রধান। রবিবার রাতে তমলুক পুরসভার ১৬ জন তৃণমূল কাউন্সিলরকে নিয়ে বৈঠক করেন দলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী। কিন্তু সেখানেও পুরপ্রধান পদে দলের তরফে কারও নাম জানানো হয়নি । মঙ্গলবার পুরসভার কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত চুড়ান্ত গোপন ছিল নতুন পুরপ্রধান পদের প্রস্তাবিত নাম। এ দিন পুরসভা হলে কাউন্সিলরদের শপথ অনুষ্ঠান শেষের পরে অনুষ্ঠান মঞ্চেই দলের তরফে প্রস্তাবিত পুরপ্রধানের নাম সম্বলিত একটি করে চিঠি দেওয়া হয় সব তৃণমূল কাউন্সিলরদের হাতে তাঁতেই উল্লেখ ছিল রবীন্দ্রনাথ সেনের নাম।
নবনির্বাচিত ২০ জন কাউন্সিলরদের শুভেচ্ছা জানিয়ে শুভেন্দুবাবু বলেন, ‘‘শহরের মানুষের রায়কে মর্যাদা দিতে আসুন দলমত নির্বিশেষে আমরা সবাই মিলে তমলুক শহরের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করি। তমলুক শহরের উন্নয়নে পুর দফতরের বরাদ্দ অর্থ ছাড়াও সাংসদ এলাকা উন্নয়ন তহবিল ও হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ থেকে সাহায্য করা হবে।’’ রবীন্দ্রনাথবাবুকে পুরপ্রধান পদে নিয়ে আসার কারণ জানিয়ে শুভেন্দুবাবু বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথবাবু আটবারের জেতা প্রবীণ কাউন্সিলর। তিনি একাধিকবার পুরপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই তাঁকে দলের তরফে সর্বসম্মতভাবে পুরপ্রধান করা হয়েছে।’’
দীর্ঘ ১৩ বছর পরে ফের পুরপ্রধান পদে ফেরা রবীন্দ্রনাথ সেন বলেন, ‘‘১৩ বছর পরে ফের পুরপ্রধানের পদে দায়িত্ব পেয়ে আমি অভিভূত। মানুষের রায়কে মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করব। আমার দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে তমলুক শহরের উন্নয়নের কাজ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy