Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ি তৈরিতে চাই বৃষ্টির জল সঞ্চয়, বাধ্যতামূলক করল পুরসভা

পুরসভা কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবারই একটি নির্দেশ জারি করে জানিয়েছে, শহরে কেউ কোনও নতুন বসতবাড়ি বানানোর পরিকল্পনা করলে তাঁকে বাড়িতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে তা ভূগর্ভস্থ করার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৯ ০০:০৪
Share: Save:

জলকষ্ট গোটা দেশে প্রকট হয়েছে চলতি বছরে। রাজ্যের দক্ষিণবঙ্গে ভরা বর্ষাতেও এ বার দেখে নেই বৃষ্টির। স্বাভাবিক ভাবেই ভূগর্ভস্থ জলস্তর নিয়ে চিন্তিত পরিবেশবিদেরা। জলস্তর কীভাবে বাড়ানো যায়, সে নিয়ে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে চালু রয়েছে ‘জল ধর, জল ভর’ প্রকল্প। এবার এ ব্যাপারে আরও এক ধাপ উদ্যোগী হয়েছে তমলুক পুরসভা। বাড়ি বানানোর জন্য ‘রেন ওয়াটার হার্ভেস্টিং’ ব্যবস্থাকে বাধ্যতামূলক করেছে তারা।

পুরসভা কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবারই একটি নির্দেশ জারি করে জানিয়েছে, শহরে কেউ কোনও নতুন বসতবাড়ি বানানোর পরিকল্পনা করলে তাঁকে বাড়িতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে তা ভূগর্ভস্থ করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাড়ির নকশায় তার উল্লেখ থাকতে হবে। তবেই মিলবে বাড়ি তৈরির অনুমোদন। পুরসভা সূত্রের খবর, সরকারি ইঞ্জিনিয়ারেরই বাড়ির নকশা তৈরির সময় ওই ব্যবস্থা তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে বাসিন্দাদের জানাবেন এবং নকশা বানিয়ে দেবেন।

কিন্তু কীভাবে হবে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ? তমলুকের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন বলেন, ‘‘নতুন বাড়ি তৈরির সময় সাধারণত বাড়ির পাশেই চৌবাচ্চা তৈরি করে তাতে ইট, পাথর ধোয়া হয়। বাড়ি নির্মাণের পর ওই চৌবাচ্চার নীচে এবং পাশের দেওয়ালে ছিদ্র করে দিতে হবে। আর বাড়ির ছাদ ও সংলগ্ন এলাকার বৃষ্টির জল পাইপের মাধ্যমে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। চৌবাচ্চার ফুটো দিয়ে জল ধীরে ধীরে চুঁইয়ে মাটিতে মিশে ভূগর্ভস্থ জলের সঞ্চয় বাড়াবে। এতে অতিরিক্ত খরচও হবে না।’’

পুরসভা এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রাচীন শহর তমলুকের বাসিন্দাদের পানীয় জলের চাহিদা মেটানোর জন্য ভূগর্ভস্থ জল তুলে সরবরাহের ব্যবস্থা চালু হয়েছিল প্রায় ৪০ বছর আগে। প্রথমে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ওই জল সরবরাহ ব্যবস্থা পরিচালনা করলেও পরবর্তী সময়ে পুরসভার নিয়ন্ত্রণে আসে পানীয় জল সরবরাহ প্রক্রিয়া। বর্তমানে শহরের প্রতি ওয়ার্ডে একাধিক পাম্প হাউসের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ জল তুলে পাইপলাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি তা সরবরাহ করা হয়।

২০০২ সালে তমলুক জেলা সদরের স্বীকৃতির পরেই শহরে বসতবাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। পানীয় জলের চাহিদাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ফলে কমছে ভূগর্ভস্থ জলস্তর। রূপনারায়ণ থেকে জল তুলে তা পরিশ্রুত করার প্রক্রিয়াও এখন বিশবাঁও জলে। এমন পরিস্থিতিতে শহরের ভূগর্ভস্থ জলের সঞ্চয় বৃদ্ধির লক্ষেই বৃষ্টির জল ধরে তা ভূগর্ভস্থ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন পুরসভা কর্তৃপক্ষ।

পুরপ্রধান বলেন, ‘‘ভূগর্ভস্থ জলস্তর বৃদ্ধির এবং জল অপচয় বন্ধ করতে বৃষ্টির জলের সংরক্ষণ জরুরি। তাই শহরে নতুন বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে বৃষ্টি জল ধরে রেন ওয়াটার হারভেস্টিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’’ পুরপ্রধানের কথায়, ‘‘নতুন বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে পুরসভার কাছে বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন করার আগেই বৃষ্টির জল ভূগর্ভস্থ করার ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। মঙ্গলবার থেকেই এই নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে। এ জন্য পুরসভার অনুমোদিত ইঞ্জিনিয়ারদের কাছ থেকে পরামর্শ পাওয়া যাবে।’’

উল্লেখ্য, এর আগে মেদিনীপুর শহরেও বাড়িতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ব্যবস্থা এই ধরনের বাধ্যতামূলক করেছে মেদিনীপুর পুরসভা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rain Water Monsoon Tamluk
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE