Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ভাতায় কাঁটা কোটা

তিনজনেরই বয়স সত্তরের কাছাকাছি। এঁরা কেউ আবেদন করে বার্ধক্য ভাতা পাননি। কারও আবেদনের বয়স সাত বছর পেরিয়েছে। কারওবা পাঁচ বছর।

প্রতিবিধান শিবিরে অনেকেই আসছেন ভাতার দাবি নিয়ে। নিজস্ব চিত্র

প্রতিবিধান শিবিরে অনেকেই আসছেন ভাতার দাবি নিয়ে। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৯ ০০:৩০
Share: Save:

ভরত দোলই। দাসপুরের কেলেগোদার বাসিন্দা। সন্ধ্যা দোলই। ঘাটালের রাধানগর ঘেঁষা চন্দননগরের বসিন্দা। প্রহ্লাদ ঘোষ। বাড়ি ক্ষীরপাই শহরের সাত নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামলগঞ্জে।

তিনজনেরই বয়স সত্তরের কাছাকাছি। এঁরা কেউ আবেদন করে বার্ধক্য ভাতা পাননি। কারও আবেদনের বয়স সাত বছর পেরিয়েছে। কারওবা পাঁচ বছর।

প্রশাসন সূত্রের খবর, ভাতা চাইলেই মিলবে এমন নয়। প্রথমে পদ্ধতি মেনে আবেদন করতে হবে। তারপর অপেক্ষা। বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা হোক অথবা অক্ষম ভাতা— সব ক্ষেত্রে একই নিয়ম। তবে নিয়মের ব্যতিক্রমও রয়েছে। সামাজিক সহায়তা প্রকল্পে উপভোক্তার নাম সরাসরি অন্তর্ভুক্ত হয়। এ ক্ষেত্রে মানদণ্ড ধরা হয় আর্থ সামাজিক এবং জাতিগত নামের তালিকাকে। তবে এই প্রকল্পে আবার বছর তিনেক হল নতুন করে উপভোক্তার নাম সংযোজন হচ্ছে না। অভিযোগ, তাতেই সরকারি ভাতার সুবিধে থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাজার হাজার প্রকৃত উপভোক্তা। ভরত, সন্ধ্যাদের আক্ষেপ, “বহুবার প্রশাসনের কাছে গিয়েছি। হচ্ছে হবে বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।” নাম প্রকাশে জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিক মানছেন, “কোটার গেরোয় এমন অনেক উপভোক্তা কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। সব বুঝেও আমরা কিছু করতে পারছি না।”

ভাতা মূলত দু’ধরনের। রাজ্য সরকারের সমাজ কল্যাণ দফতর তরফে দেওয়া হয় বার্ধক্য, বিধবা ও অক্ষম ভাতা। এ ছাড়া কৃষি, মৎস্য-সহ বিভিন্ন দফতর ভাতা দেয়। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে সামাজিক সহায়তা প্রকল্পেও বার্ধক্য, বিধবা, অক্ষম ভাতা দেওয়া হয়। কোটার সমস্যা তৈরি হয় মূলত রাজ্যের ভাতার ক্ষেত্রে। কারণ, জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে উপভোক্তাকে বেছে নেওয়া হয়। ধরা যাক, কোনও ব্লকে বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধের জন্য কয়েক হাজার লোক আবেদন করেছেন। তার মধ্যে নিবার্চিত একশো জন সুবিধে পাবেন। এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় প্রথমে যিনি আবেদন করেছেন তাঁকে। কোনও উপভোক্তার মৃত্যু হলে অপেক্ষা তালিকায় থাকা প্রথমজন সুবিধা প্রাপকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। তিনি ভাতা পেতে শুরু করবেন। যৌথ উদ্যোগের ভাতার ক্ষেত্রে উপভোক্তার নাম সরাসরি অন্তর্ভুক্ত হয় বটে, তবে এ ক্ষেত্রেও চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ফারাক প্রচুর। ফলে স্থানীয় পঞ্চায়েত স্তরে আলোচনার মাধ্যমে উপভোক্তা প্রাপকের নাম নির্ধারণ হয়।

জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, প্রতি বছরই ব্লক অফিসে সব প্রকল্প মিলিয়ে গড়ে আটশো থেকে হাজার আবেদন জমা পড়ে। জেলায় ২১টি ব্লক। সবমিলিয়ে বছরে পশ্চিম মেদিনীপুরে কম করে ১৫ হাজার আবেদন জমা পড়ে। তার থেকে হাতে গোনা কয়েকজন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পান। জেলা শাসক রশ্মি কমল বলেন, “আবেদন করলেই প্রকল্পের সুবিধে পাওয়া যাবে এমন নয়। তাছাড়া কোটা প্রক্রিয়াটি চালু পদ্ধতি। জেলা প্রশাসন নিয়ম মেনে যা করার করে চলেছে।”

ভাতার পরিমাণেরও রকমফের রয়েছে। ন্যূনতম সাড়ে চারশো এবং সবার্ধিক এক হাজার টাকা। তবে ভাতা পেতে হলে ‘কোটা’র গেরোকে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। ব্যতিক্রম ‘মানবিক’ প্রকল্প। এখানে অবশ্য কোনও কোটা নেই। পঞ্চাশ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা থাকলেই প্রকল্পের সুবিধে মেলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Government Subsidy Senior Citizen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE