অপেক্ষায়: ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানার ঘেরাটোপে সোহেল। নিজস্ব চিত্র
একলা জীবনে দাঁড়ি পড়ছে সোহেলের। সব কিছু ঠিকঠাক চললে এ মাসেই সঙ্গিনী পেতে চলেছে ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কের এই চিতাবাঘটির।
২০১৭ সালের অক্টোবরে সোহেলকে নিয়ে আসা হয়েছিল উত্তরবঙ্গের খয়েরবাড়ি চিতাবাঘ পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে। সেই খয়েরবাড়ি থেকেই আসছে তার সঙ্গিনী। সোহেলের সঙ্গিনী চেয়ে রাজ্য বন্যপ্রাণ শাখায় কয়েক দফায় আবেদন করেছিলেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। অবশেষে সবুজ সঙ্কেত মিলেছে। ঝাড়গ্রামের ডিএফও এবং চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা বাসবরাজ হোলাইচ্চি বলেন, “খয়েরবাড়ি থেকে একটি স্ত্রী চিতাবাঘ আসছে। খয়েরবাড়ি চিতাবাঘ পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আগামী দু’-তিন সপ্তাহের মধ্যে স্ত্রী চিতাবাঘ চলে আসবে বলে আশা করছি।” সোহেল ঝাড়গ্রামে আসার পরে সরকারি সভামঞ্চ থেকে চিড়িয়াখানায় ‘ইন্ডিয়ান লেপার্ড এনক্লোজারের’ উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন সোহেলের সঙ্গে ভুলক্রমে আর এক পুরুষ চিতাবাঘ ‘রাজা’কে ঝাড়গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এক এনক্লোজারে দু’টি পুরুষ চিতাবাঘ থাকলে বিপত্তি হতে পারে আশঙ্কায় রাজাকে খাঁচা সমেত ফেরত পাঠানো হয়েছিল খয়েরবাড়িতে। ঝাড়গ্রামে লেপার্ডের জন্য মাত্র একটি এনক্লোজার। সেখানে একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী চিতাবাঘ রাখার কথা। এত দিন তা হয়নি। বছর দেড়েক সঙ্গিনী ছাড়াই থাকায় সোহেলের মেজাজ ভাল নেই। সারা দিন এনক্লোজারে ঘুরে বেড়ায় সে, নয়তো ছাউনিতে চুপ করে বসে থাকে। চিড়িয়াখানার কর্মীরা জানান, প্রতিদিন ৬ কেজি করে গরুর মাংস খায় সোহেল। বৃহস্পতিবার একদিনের উপোস।
প্রাকৃতিক শালবনের মাঝে ঝাড়গ্রামের চিড়িয়াখানা আয়তনে আলিপুরের থেকেও বড়। চিতাবাঘ ছাড়াও রয়েছে হাতি, কয়েকশো চিতল হরিণ, স্বর্ণমৃগ, নীলগাই, সম্বর হরিণ, ভালুক, হায়না, নেকড়ে, বন বিড়াল, মেছো বিড়াল, গন্ধগোকুল, খেঁকশিয়াল, নানা প্রজাতির হনুমান ও বাঁদর, ময়ূর-সহ কয়েকশো প্রজাতির নানা পাখি, নানা ধরনের সাপ, কচ্ছপ, গোসাপ। ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানার আধুনিকীকরণের কাজও এগিয়েছে। শীতের মরসুমে, ছুটির দিনে রেকর্ড ভিড় হচ্ছে। সোহেলকে দেখতেই ভিড় জমে বলে মানছেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। সঙ্গিনী এলে ভিড় বাড়বে বলে আশা। ডিএফও জানান, স্ত্রী চিতাবাঘটিকে সোহেলের এনক্লোজারে ছাড়া হবে। বন্যপ্রাণ শাখার বিশেষজ্ঞ ও প্রাণিচিকিৎসকরা সব দিক খতিয়ে দেখার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ঝাড়গ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের সহ অধিকর্তা এবং চিড়িয়াখানার অতিথি-প্রাণিচিকিৎসক চঞ্চল দত্ত বলেন, “এনক্লোজারে যে কোনও বন্যপ্রাণীকে একা রাখা হলে সেটা তার পক্ষে মানসিক অবসাদের কারণ হতে পারে। সোহেলও বছর দেড়েক সঙ্গিনী ছাড়া মনমরা হয়ে রয়েছে। সঙ্গিনী এলে সোহেল ছন্দে ফিরবে। তখন দর্শকরাও প্রাণচঞ্চল চিতাবাঘকে দেখে আনন্দ পাবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy