দিঘার ঝাউ বন। ফাইল চিত্র
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বইয়ে গিয়েছে সাগরদ্বীপের উপর দিয়ে। সরাসরি তার প্রভাব পড়েনি পূর্ব মেদিনীপুরে উপকূলবর্তী এলাকায়। কিন্তু ঝড়ের একদিন পরে নন্দীগ্রাম এলাকায় যে পরিমাণ গাছ উপড়ে যাওয়ার তথ্য সামনে এসেছে, তাতে চিন্তিত বন দফতর।
বন দফতর সূত্রের খবর, নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের বাজকুল রেঞ্জের গাংড়াচর এলাকায় জেলিংহ্যামে বনসৃজন প্রকল্পের দু’হাজারের বেশি আকাশমণি, ঝাউ এবং অর্জুন গাছ উপড়ে গিয়েছে। যা আয়লার ঝড়ের থেকেও বেশি বলে দাবি। হলদিয়া বন্দরের জায়গায় ২০১২ সালে সেখানে কাঁকড়া, বাইন জাতীয় গাছ লাগানো হয়েছিল।
সোমবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, সব জায়গায় ভেঙে এবং উপড়ে পড়ে রয়েছে গাছ। বাজকুলের রেঞ্জার বাণীব্রত সামন্ত বলেন, ‘‘এই বিপুল ক্ষতির কথা প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। শুধু গাংড়াচরে নয়, খেজুরির দিকেও ৫৪টি পূর্ণ বয়স্ক গাছ ভেঙে পড়েছে।’’ গাংরাচরের বিট অফিসার নারায়ণচন্দ্র গিরি বলেন, ‘‘প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে এই বনাঞ্চলের গাছ উপড়ে গিয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক অর্জুন গাছ রয়েছে। বুলবুলের প্রভাবেই এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি।’’
স্থানীয় বন সুরক্ষা কমিটির আক্ষেপ, কোটি টাকার বনজ সম্পদ নষ্ট হওয়া সত্ত্বেও স্থানীয় বিডিও বা জেলা প্রশাসন থেকে কেউই এলাকায় আসেনি। বাজকুল রেঞ্জ সূত্রের খবর, পড়ে যাওয়া গাছের কাঠ ছুরি হওয়া থেকে বাঁচাতে গাংরাচরে অতিরিক্ত দুই কর্মী পাঠানো হয়েছে। গাছ বাঁচাতে দলবল নিয়ে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিট অফিসার নারায়ণচন্দ্র গিরি।
জেলার ডুয়ার্স নামে পরিচিত জেলিংহ্যামের সুনাম রাজ্য জুড়েই ছিল। বহু পর্যটকের কাছে এটি ছিল আকর্ষণীয় জায়গা। বনকর্মী শেখ মহিবুল আলি বলেন, ‘‘আয়লার সময় যে ধরনের প্রভাব পড়েছিল, তার চেয়ে বেশী তাণ্ডব হয়েছে এখানে। এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটিও উপড়ে পড়েছে।’’
ঝড় সরাসরি আছড়ে না পড়লেও গাছ উপড়ে গেল কেন? বন দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, এই ঝাউ, আকাশমণি জঙ্গলের পাশেই রয়েছে হুগলি নদী। নদীর তীরে লাগানো হয়েছিল ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছ। সেই সব গাছের অধিকাংশটাই নদী ভাঙনের ফলে জলের তলা। ফলে ম্যানগ্রোভের ঢাল না থাকায় ঝড়ের প্রভাব পড়েছে অনেকটাই বেশি। রেঞ্জার বাণীব্রত বলেন, ‘‘হুগলির তীরে সাড়ে চার কিলোমিটার জুড়ে ম্যানগ্রোভ লাগানো হয়েছিল। এর মধ্যে সাউথখালিতে লাগানো হয়েছিলো সাড়ে তিন কিলোমিটার জুড়ে। সাউথখালির ম্যানগ্রোভের কোনও পরিবর্তন হয়নি। তবে গাংড়াচরে ব্যপক ক্ষতি হচ্ছে। প্রায় ২০ হাজার ম্যানগ্রোভ জলের তলায় চলে গিয়েছে। সেই ম্যানগ্রোভ এতদিন ভূমিক্ষয় রোধ করছিল। এখন না থাকায় বিপদ সংকেত দেখা যাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy