মেডিক্যাল কলেজে ‘ড্রাই রান’। আছেন জেলাশাসক রশ্মি কমল, সিএমওএইচ নিমাইচন্দ্র মণ্ডল প্রমুখ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
করোনা টিকাকরণের (কোভিড ভ্যাকসিনেশন) ‘ড্রাই রান’ অর্থাৎ মহড়া হল পশ্চিম মেদিনীপুরেও। শুক্রবার জেলার তিনটি কেন্দ্রে এই মহড়া হয়েছে। এর একটি কেন্দ্র ছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সব দিক খতিয়ে দেখতে এ দিন মেডিক্যালে এসেছিলেন জেলাশাসক রশ্মি কমল, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডল, জেলার জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র প্রমুখ।
জেলাশাসক তথা করোনা মোকাবিলায় গঠিত জেলাস্তরের টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান রশ্মি কমল বলেন, ‘‘কী ভাবে টিকাকরণের কাজ হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলা হয়েছে জেলায়।’’ জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী জানাচ্ছেন, প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরাই টিকাকরণের কাজ করবেন। এ দিন মহড়ার কাজেও শামিল হন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরা।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাশাপাশি শহরের পরিবারকল্যাণ সমিতির কেন্দ্রে এবং খড়্গপুর গ্রামীণের হিজলি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ দিন ‘ড্রাই রান’ হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘তিনটি কেন্দ্রেই সুষ্ঠুভাবে ড্রাই রান হয়েছে।’’ টিকাকরণ কেন্দ্রে ন্যূনতম তিনটি ঘর প্রয়োজন। সেই মতো যাবতীয় বন্দোবস্ত সারা হয়েছিল। একটি ‘ওয়েটিং রুম’ ছিল। একটি ‘অবজারভেশন রুম’ ছিল। একটি ‘ভ্যাকসিনেশন রুম’ ছিল। শুরুতে টিকার গ্রহীতা ‘ওয়েটিং রুম’- এ গিয়েছেন। সেখান থেকে তাঁকে ‘ভ্যাকসিনেশন রুম’- এ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে তাঁকে ‘অবজারভেশন রুম’- এ নিয়ে আসা হয়েছে। জেলার উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর বলেন, ‘‘টিকাকরণের সময়ে যে সমস্ত নিয়মবিধি মানা হবে, এ দিনও সেই সব নিয়মবিধি মেনে ড্রাই রান হয়েছে।’’
এ দিন মেডিক্যালে পৌঁছে জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন জেলাশাসক। টিকাকরণের কাজে যুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। টিকা এলে এবং তা দেওয়ার সময়ে কী কী করতে হবে, সে সব করতে গিয়ে কী কী সমস্যার মুখে পড়তে হতে পারে, তা আগাম বুঝে নেওয়ার জন্যই এই ‘ড্রাই রান’-এর বন্দোবস্ত বলে জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন। এককথায় একে টিকাকরণ প্রক্রিয়ার মহড়া বলা যায়। এ ক্ষেত্রে শুধু আসল টিকা দেওয়া হয় না। বাকি সবটাই নিয়ম মেনে ধাপে ধাপে করা হয়। এ দিন তিনটি কেন্দ্রেই ২৫ জন করে স্বেচ্ছাসেবক ‘ড্রাই রান’- এ অংশ নিয়েছেন। প্রতিটি কেন্দ্রেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন। পশ্চিম মেদিনীপুরে শুরুতে প্রায় ২৬ হাজার চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীর টিকা পাওয়ার কথা। এক- একজনকে ২৮ দিনের ব্যবধানে ২টি করে টিকা নিতে হয়। জেলায় শুরুতে প্রায় ৫০ হাজার করোনা টিকা পৌঁছতে পারে। ওই কেন্দ্রগুলিতে টিকার সচেতনতামূলক সমস্ত রকম বিজ্ঞাপন ডিসপ্লে করা হয়েছিল। জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘প্রথম পর্যায়ের টিকাকরণের জন্য সমস্ত প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’’ শীঘ্রই জেলায় করোনা টিকা পৌঁছনোর কথা।
এ দিন ঝাড়গ্রাম জেলাতেও তিনটি জায়গায় করোনা টিকাকরণের ‘ড্রাই রান’ হল। এদিন ঝাড়গ্রাম নার্সিং ট্রেনিং স্কুল, নয়াগ্রাম ব্লকের চাঁদাবিলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বেলপাহাড়ি ব্লকের শিলদা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘ড্রাই রান’ হয়। এ দিন শহরের নার্সিং স্কুলে ড্রাই রানের পুরো প্রক্রিয়াটি মহড়া করে দেখান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা। সেখানে মহড়া দেন ২৫ জন নার্স। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় প্রতিষেধক এলেই দু’একদিনের মধ্যে টিকাকরণ শুরু হবে। টিকা নেওয়ার পরে কারও কোনও সমস্যা হলে জেলার তিনটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চারটি করে শয্যা প্রস্তুত করে রাখা হচ্ছে। এ ছাড়াও ঝাড়গ্রাম ও গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশালিটিতে সিসিইউতে একটি করে শয্যা রাখা হবে। এছাড়াও গ্রামীণ হাসপাতাল গুলিতেও একটি করে শয্যা রাখা হচ্ছে। এ দিন দুপুরে নার্সিং স্কুলে ড্রাই রান খতিয়ে দেখতে আসেন জেলাশাসক আয়েষা রানি। জেলাশাসক বলেন, ‘‘টিকাকরণের জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy