দুঃস্থ মেধাবী ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ‘আলোর দিশা এডুকেশন ট্রাস্ট’ গড়েছেন তাঁরা। প্রতীকী ছবি।
সামান্য জমিতে বছরে একবার চাষ হয়। শিক্ষকদের সহযোগিতায় কোনওমতে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছিলেন শালবনির পিড়াকাটার বাসিন্দা সুবোধ মাহাতো স্কুলের গণ্ডি পেরনোর পর অবশ্য লড়াই ছিল আরও শক্ত। তবে জেদের জোরে সব বাধা কাটিয়ে সুবোধবাবু আজ পিড়াকাটার মালিদা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
একইভাবে লড়াই করে বড় হয়েছেন শালবনির চাঁদাবিলার বাসিন্দা জয়দেব সাহা। তাঁর মা মুড়ি ভাজতেন। আর বাবা মেদিনীপুর শহরে সেই মুড়ি নিয়ে গিয়ে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করতেন। অভাবকে হারিয়েই তাঁর জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। বর্তমানে মধুপুর হাইস্কুলের শিক্ষকতা করেন তিনি।
জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েও নিজেদের অতীতের লড়াইয়ের কথা ভুলে যাননি সুবোধবাবু, জয়দেববাবুরা। এমন আরও অনেককে সঙ্গে নিয়ে দুঃস্থ মেধাবী ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ‘আলোর দিশা এডুকেশন ট্রাস্ট’ গড়েছেন তাঁরা। ৮০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে যারা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের আর্থিক সাহায্য
করবে এই ট্রাস্ট।
সুবোধবাবু, জয়দেববাবুর পাশাপাশি স্থানীয় চিকিৎসক সুবীর মাহাতো, সুনীল মাহাতো, জুনিয়র কনস্টেবল গৌতম মাহাতো, শুদ্ধদেব মাহাতো, ব্যবসায়ী শ্রীকান্ত সাহু ও রবীন্দ্র সাহু— সকলেই রয়েছেন এই ট্রাস্টে। নিজেরা কিছু টাকা দিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী, শিক্ষক, সরকারি চাকুরিজীবীদের থেকে সাহায্য নিয়ে ট্রাস্টের একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। শালবনির ১, ৫ থেকে ৮— এই পাঁচটি অঞ্চলের দুঃস্থ মেধাবী ১৭ জন পড়ুয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সম্প্রতি পিড়াকাটায় একটি অনুষ্ঠানে এই সব দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের হাতে দু’হাজার করে টাকা তুলে দেওয়া হয়। শালবনির পাঁচটি অঞ্চলের ১২টি বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম স্থানাধিকারীরদের সম্মান জানানো হয়। সাহায্যের পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন পথ সম্পর্কেও পড়ুয়াদের বোঝানো হয়। রবিবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঝাড়গ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ নিমাইচাঁদ মাসান্ত, অবর বিদ্যালয় শিক্ষা পরিদর্শক অরুণাভ প্রহরাজ, জেলা পরিষদ সদস্য সনৎ মাহাতো প্রমুখ।
ট্রাস্টের সম্পাদক সুবোধ মাহাতো বলেন, ‘‘ছোট থেকে অনেকের সাহায্য নিয়ে পড়াশোনা করেছি। তাই আমাদের মতো কষ্ট করে যারা এখন পড়াশোনা করছে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এই ট্রাস্ট
গড়ে তুলেছি।’’
তাঁর কথায়, ‘‘এলাকার সকলের কাছে মেধাবী দুঃস্থ পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানাব। জেলা পরিষদ সদস্য সনৎবাবু বলছেন, ‘‘ট্রাস্টের মহৎ কাজের জন্য ওদের পাশে আছি।’’ দুঃস্থদের সাহায্যের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অরুণাভবাবুও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy