প্রহৃত।—প্রতীকী ছবি।
রাস্তার ধারে মদের ঠেক। আর সেই কারবারের প্রতিবাদ করায় ফের প্রহৃত হলেন কয়েকজন। প্রহৃতদের মধ্যে মা, ছেলেও রয়েছে। শনিবার রাতে মেদিনীপুর শহরের দেওয়ানবস্তিতে ঘটনাটি ঘটে। এক মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আরও চার কারবারিকে আটক করা হয়েছে।
শনিবার রাতের ঘটনায় প্রহৃতদের মধ্যে রয়েছেন পিয়ালি বিবি ও তাঁর ছেলে পল্টু খান। তাঁদের দু’জনকেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আঘাত গুরুতর থাকায় পরে পিয়ালিদেবীকে কলকাতার এক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পিয়ালীদেবীর কথায়, “আচমকাই মাদকের কারবারিরা হামলা চালায়।”
আগেও মেদিনীপুর শহরে এমন ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবাদ করে মাদক কারবারিদের রোষের মুখে পড়েছেন এলাকার মানুষ। শনিবারের ঘটনায় শেখ সুরাজ নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মেদিনীপুরে মাদকের রমরমা ছিলই। দিনে দিনে তা বেড়েছে।
শহরের এ দিকে-সে দিকের মাঠ কিংবা খোলা জায়গার ঠেকগুলোয় গেলেই চেনা-অচেনা মুখের ভিড় চোখে পড়ে।
রাস্তার ধারেই ছোট ছোট ঠেক। সেখান থেকেই পাক খেয়ে উঠছে ধোঁয়া। সন্ধের পর ঠেকগুলোয় আনাগোনা বাড়ে। দিন দিন শহরে বাড়ছে নেশাখোরদের সংখ্যা। বিপথগামী হচ্ছে তরুণরা।
শুধু মদ- গাঁজা-হেরোইন- চরস কিংবা ব্রাউন সুপার নয়, বহু অপ্রচলিত বা স্বল্পপরিচিত মাদকও অবাধে ঢুকে পড়ছে মেদিনীপুরে। একাধিক মাদক বিভিন্ন অনুপাতে মিশিয়ে সেবনের প্রবণতা বাড়ছে অল্পবয়সীদের মধ্যে।
শরৎপল্লি থেকে অরবিন্দনগর, কুইকোটা থেকে পালবাড়ি— মেদিনীপুরের ইতিউতি মাদক দ্রব্য কেনাবেচা চলে বলে অভিযোগ। বিকোয় হেরোইন, গাঁজা, চরস-ও। শহরবাসীর অভিযোগ, কোথায় কোথায় মাদক দ্রব্য কেনাবেচা হয় সব জানে পুলিশ-প্রশাসন। অথচ, সব জেনেও তারা উদাসীন।
জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “সারা বছর রুটিন নজরদারি থাকে। নির্দিষ্ট খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।” তাঁর সরল স্বীকারোক্তি, “কয়েকটি এলাকায় হয়তো কিছু সমস্যা রয়েছে। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা কঠিন। মাদকের কারবার ঠেকাতে একাধিক পরিকল্পনা নেওয়া হবে।”
মাদক ঠেকাতে পুরসভার কোনও হোলদোল নেই। বরং পুরকর্তাদের একাংশের মদতেই শহরে এই কারবার দিনে দিনে বাড়ছে বলে অভিযোগ। মাদক রোধে পুরসভা যে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি, দিন কয়েক আগেই সেই স্বীকারোক্তি শোনা গিয়েছে পুরপ্রধান প্রণব বসুর মুখে। তিনি মেনে নিয়েছিলেন, ‘মাদক সচেতনতায় আমাদের যে ভূমিকা নেওয়া দরকার ছিল তা নিতে পারিনি!’ তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘পুলিশ তো সবটা করতে পারবে না। পুলিশ পুলিশের কাজটা করছে। আমরা যাঁরা সমাজের বিভিন্নস্তরে আছি, বিভিন্ন জায়গায় কাজ করি, সমাজের কাজ করি, তাঁদেরও কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘‘মেদিনীপুর শহরের কয়েকটি এলাকায় মাদক বিক্রি হয় বলে শুনেছি। বিক্রি বন্ধে নজর দিতে হবে। এ বার আমরা নজর দেবো! বিক্রি বন্ধ করতে পারলে কেউ মাদক পাবে না। নেশাও করতে পারবে না। মাদক যাতে না পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে।’
অবশ্য এই আশ্বাসই সার। এখনও পর্যন্ত পুরসভার কোনও পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy