শান্তিরাম মাহাতো ও সুকুমার হাঁসদা।
গত বিধানসভা ভোটে জেতার পরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে একমাত্র মন্ত্রী হন তিনিই। সেই সুকুমার হাঁসদাকেই পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ ও পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিষয়ক দফতরের মন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুকুমারবাবুকে আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতদিন আদিবাসী উন্নয়ন দফতরটি মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ছিল। গত বুধবার ক্যাবিনেট বৈঠকে এই রদবদল করা হয়। শুক্রবার সল্ট লেকের প্রশাসনিক ভবনে নতুন দফতরের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন সুকুমারবাবু।
পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের নতুন মন্ত্রী হলেন শান্তিরাম মাহাতো। পুরুলিয়ার বলরামপুরের বিধায়ক শান্তিরামবাবু এতদিন স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন। শান্তিরামবাবুর পুরনো দফতরের দায়িত্ব পেলেন সাধন পাণ্ডে। রাজ্য মন্ত্রীসভার সাম্প্রতিক এই রদবদলের ফলে, জঙ্গলমহলে শাসক দলের অন্দরে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে সুকুমারবাবুকে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর থেকে সরিয়ে দেওয়ায় রীতিমতো ভেঙে পড়েছেন তাঁর অনুগামীরা। তাঁদের বক্তব্য, “সুকুমারবাবুর প্রতি অবিচার করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ পর্বে এভাবে তাঁকে সরিয়ে দিয়ে কার্যত জঙ্গলমহলের আদিবাসীদেরই অপমান করা হল। এই অপমান আদিবাসীরা কখনই মেনে নেবেন না।”
সুকুমারবাবু অবশ্য কোনও রকম ‘বিতর্কিত’ প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হন নি। তাঁর কথায়, “প্রায় চার বছর পশ্চিমাঞ্চলের দায়িত্বে থেকে কী-কী করেছি, সেটা জনগণ বিচার করবেন। শান্তিরামবাবুও জঙ্গলমহলের মানুষ। আমার বিশ্বাস উনিও খুব ভাল ভাবে উন্নয়ন-কাজ পরিচালনা করবেন। মুখ্যমন্ত্রী আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা যথাযথ ভাবে পালনের চেষ্টা করব।” শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়ন ঘটানো। আমি দীর্ঘদিন এই এলাকা থেকেই নির্বাচিত হয়ে আসছি। তাই এখানকার সমস্যা সম্পর্কে জানি। তাই কাজ করতে অসুবিধা হবে না। উন্নয়নের লক্ষ্যেই কাজ করব।”
রাজ্য প্রশাসনের সূত্রের খবর, গত ডিসেম্বরেই ঝাড়গ্রামে জঙ্গলমহল উৎসবকে কেন্দ্র করে বিতর্কের জেরে রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে সুকুমারবাবুর বিদায় প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছিল। শুধুমাত্র আদিবাসী আবেগের কথা মাথায় রেখে তাঁকে আদিবাসী উন্নয়ন দফতরে গুরুত্বহীন মন্ত্রী পদে রেখে দেওয়া হল।
গত বছর পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের উদ্যোগে ঝাড়গ্রাম শহরে জঙ্গলমহল উৎসবের আয়োজন করা হয়। প্রথমে ওই উৎসবের উদ্বোধক হিসেবে মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নাম আমন্ত্রণপত্রে ছাপা হয়। সূত্রের খবর, সেই আমন্ত্রণপত্র দেখে বেজায় চটে যান মুখ্যমন্ত্রী। তারপর তড়িঘড়ি উৎসব পিছিয়ে দেওয়া হয়। পরে গত বছর ডিসেম্বরে মেদিনীপুর থেকে রিমোটে উৎসবের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। ঝাড়গ্রামের একটি স্কুল মাঠে ওই উৎসবের মঞ্চটি হয়েছিল গ্রাম বাংলার মাটির বাড়ির দাওয়ার আদলে। ফলে, মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর কোনও ছবি ছিল না। এই নিয়ে দলের মধ্যেই সুকুমারবাবুকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল।
পাশাপাশি, শাসক দলের অন্দরের খবর, উন্নয়নের প্রশ্নে তিনি দলের সব অংশকে সমান ভাবে ‘তুষ্ট’ করতে পারছিলেন না বলেও অভিযোগ ওঠে। পশ্চিমাঞ্চলের অন্যান্য জেলাগুলির তুলনায় সুকুমারবাবু নিজের জেলা ও তাঁর ঝাড়গ্রাম বিধানসভা এলাকাকে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছিলেন। ঝাড়গ্রাম শহর তৃণমূল এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের একাংশের সঙ্গে সুকুমারবাবুর আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক। মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দলেরই কিছু নেতা-কর্মী রাজ্য নেতৃত্বের কাছে নিরন্তর অভিযোগ করছিলেন। সুকুমারবাবুর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন অনুগামীর কাজকর্ম নিয়েও রীতিমতো অসন্তুষ্ট হন তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। যে কারণে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক নেতার নিরাপত্তা রক্ষী পর্যন্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
মুকুল রায় জমানার অবসানের পরে তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী এখন মুখ্যমন্ত্রীর ‘কাছের লোক’। কিছুদিন আগে পূর্ব মেদিনীপুরে শাসক দলের যে সাংগঠনিক রদবদল হয়েছে, তাতে শুভেন্দুপন্থীদের প্রাধ্যন্য রয়েছে। শুভেন্দুর সঙ্গে সুকুমারবাবুর ঘনিষ্ঠতার কথা সর্বজনবিদিত। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও কেন সুকুমারবাবুকে অন্য দফতরে বদলি করা হল?
জঙ্গলমহলে তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সব কিছু বরদাস্ত করতে পারেন। কিন্তু তাঁকে এড়িয়ে কিছু করলে নিস্তার নেই। সুকুমারবাবুর ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতার অভাবও রয়েছে। এমনিতে গত কয়েক বছরে নানা অভিযোগ উঠেছিল, তবে জঙ্গলমহল উৎসব মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি না রেখেই বোধহয় সুকুমারবাবুর কাল হল!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy