ডাইন অপবাদে মারধোর করে দুই পরিবারকে গ্রামছাড়া করার অভিযোগ উঠল চন্দ্রকোনা থানা এলাকার বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে। যে জানগুরুর নির্দেশে ওই দুই পরিবারের উপর এমন হামলা, সেই ব্যক্তির নাম অবশ্য জানা যায়নি। ব্লকের বিডিও সুরজিৎ ভড় বলেন, “গ্রামের মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা চলছে, ডাইন বলে কিছু নেই। ঘরছাড়ারা যাতে বাড়ি ফিরতে পারেন, তার জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের নীচু আদিবাসী পাড়ার বছর চোদ্দোর এক কিশোর বেশ কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিল। অসুখ সারাতে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের এক জানগুরুর শরণাপন্ন হয় ওই কিশোরের পরিবার। ওই জানগুরু নিদান দেয়, গ্রামের দুই যুবক ডাইন। তাদের জন্যই এমন অসুখে ভুগছে নির্মল। এরপরই গ্রামের বাসিন্দারা সালিশি ডাকেন। সেখানে ঠিক হয়, ওই দু’জনকে মেরে ফেলা হবে। কিন্তু এমন সিদ্ধান্তে আপত্তি জানান গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। বৈঠকে হাজির থাকা এক যুবকের কথায়, “রবিবার রাতে ওই সালিশি সভার পর আমি বিষয়টা পুলিশে জানাতে বলি। কিন্তু সেই কথাকে কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।” সোমবার সকালে ওই দুই যুবককে হাতের কাছে পেয়ে মারধর শুরু করে গ্রামের বাসিন্দারা। এরপর সোমবার রাতেই পরিবার নিয়ে গ্রামছাড়া হন ওই দুই ব্যক্তি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে যে বাড়িতে রয়েছেন এক ব্যক্তি, সেখানে গিয়েও হামলা চালায় গ্রামের ১১জন বাসিন্দা। খবর পেয়ে দাসপুর থানার পুলিশ গিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। তবে বুধবারই ধৃতদের জামিন হয়ে গিয়েছে। ঘটনার পর থেকে গ্রামে সচেতনতা প্রচার শুরু করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। চন্দ্রকোনা থানার ওসি আশিস জৈন বলেন, “এই বিষয়ে বারবার সচেতনতা শিবির করা হলেও মানুষ যে সচেতন হননি, এ দিনের ঘটনা তারই প্রমাণ। তবু আমরা হাল ছাড়িনি। কিন্তু গ্রামবাসী যদি তাঁদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অসুস্থ ওই কিশোরকে ক্ষীরপাই ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নার্ভের সমস্যার কারণেই ওই কিশোর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বিএমওএইচ নিরঞ্জন কুঁতি বলেন, “চিকিৎসার জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে।” জাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান স্বদেশ প্রামাণিক বলেন, “গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে ওই পাড়ায় প্রচার শুরু করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy