রাখঢাক না করে বিজেপি-র শক্তিবৃদ্ধির কথা মানল সিপিআই। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদনে এই বাম শরিক মেনেছে, ‘সরকারি দলে সুবিধে পেতে অনেকেই এখন বিজেপিতে ভিড়ছেন। এমনকী বামপন্থী দলের একটা অংশ বিজেপির দিকে পা বাড়িয়েছে।’
একের পর এক নির্বাচনে বিপর্যয়ের কারণ সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিক বলে ব্যাখ্যা করে প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘ব্যাপক সংখ্যক বামপন্থী কর্মী নির্বাচনী সংগ্রামে আগের মতো বুক চিতিয়ে অংশগ্রহণ করেননি। সন্ত্রাস প্রধান কারণ হলেও একে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করতে পারেনি বামফ্রন্ট।’
বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি নিয়ে প্রকাশ্যে অবশ্য কিছু বলতে চাননি সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণা। ‘অনিবার্যভাবে পার্টির বেশির ভাগ সদস্য বামফ্রন্টের আমলে চাওয়া-পাওয়া পরিবেশের মধ্যে পার্টিতে এসেছেন।’ এই স্বীকারোক্তি তো নজিরবিহীন? এ বারও নিরুত্তর সন্তোষবাবু। যদিও সিপিআইয়ের এক জেলা নেতার ব্যাখ্যা, “এটা ঠিক, এখন যাঁরা দলে আছেন, তাঁদের অনেকেরই এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লড়াই করার অভিজ্ঞতা নেই।”
সিপিআইয়ের এই স্বীকারোক্তি বাম-শিবিরে অস্বস্তি তৈরি করেছে। অস্বস্তিতে বড় শরিক সিপিএমও। এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা বামফ্রন্টের জেলা আহ্বায়ক দীপক সরকার। তবে সিপিএমের এক জেলা নেতা মানছেন, “প্রতিবেদনে ভুল কিছু বলা হয়নি। সম্মেলনে ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে আলোচনা হবে, এটাই তো স্বাভাবিক।”
রবিবার থেকে মেদিনীপুর শহরে শুরু হয়েছে সিপিআইয়ের ২৩তম জেলা সম্মেলন। দুপুরে প্রকাশ্য সমাবেশের পর সন্ধ্যায় জেলা সম্মেলনের প্রতিনিধিদের সামনে এই খসড়া প্রতিবেদন পেশ করেন দলের জেলা সম্পাদক তথা প্রাক্তন বিধায়ক সন্তোষবাবু। উদ্বোধনীপর্বে ছিলেন সিপিআইয়ের কেন্দ্রীয় নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত, দলের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার, মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদ প্রবোধ পণ্ডা প্রমুখ।
৬৬ পাতার খসড়া প্রতিবেদন মানা হয়েছে, ‘গত লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকে জেলায় বিজেপি-র তত্পরতা বৃদ্ধি পায়। কেন্দ্রে তাদের সরকার হওয়ায় বিজেপি সংগঠন দ্রুত বৃদ্ধির জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। এখন বাজার-গঞ্জে টেবিল পেতে অনলাইনে সদস্যপদ সংগ্রহ করছে। রাজ্য নেতারা জেলায় সভা করছেন। তৃণমূল দল ও সরকারের স্বৈরাচারী, সন্ত্রাসকারী ও নৈরাজ্যবাদ ভূমিকায় তিতিবিরক্ত মানুষের একটা বড় অংশ কেন্দ্রে সরকারি দলে সুবিধে পাওয়ার আশায় বিজেপিতে ভিড়ছেন। বামপন্থী আন্দোলনের সম্প্রীতির ঐতিহ্য বহনকারী এই জেলায় বিজেপির হুঙ্কার শোনা যাচ্ছে তৃণমূলের পাপে।’
সিপিআই সূত্রে খবর, বিগত জেলা সম্মেলনের সময় জেলায় আঞ্চলিক পরিষদ ছিল ৩৬টি। শাখা ছিল ৫০০টি। সদস্য ছিল ১০,৭২৫ জন। গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকে ২০১৪ সালের লোকসভা পর্যন্ত বিভিন্ন নির্বাচনে সিপিআই-সহ বামপন্থীদের হতাশাজনক ফলের প্রতিফলন ঘটেছে পার্টি সদস্যপদ নবীকরণে। ২০১৪ সালের নবীকরণের পর আঞ্চলিক পরিষদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫টি। শাখা ৪৫৫টি। সদস্য ৭,৫৬৪ জন। খসড়া দলিলে সিপিআইয়ের স্বীকারোক্তি, ‘একথা অনস্বীকার্য যে ভাল সংখ্যক পার্টি সদস্য নিষ্ক্রিয়। তাদের তাড়ানোই এর প্রতিকার নয়। নিষ্ক্রিয়কে সক্রিয় করার চ্যালেঞ্জ পার্টিকে নিতে হবে।”
বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি নিয়ে কী বলছে তৃণমূল? শাসক দল বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতেই নারাজ। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের কথায়, “জেলায় শান্তির পরিবেশ আছে। কেউ কেউ উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে মানুষ তা হতে দেবে না।” আপ বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “আমরা অনেক দিন থেকেই বলছি, এই সরকার (তৃণমূল সরকার) মানুষের উপর বোঝা। মানুষ পরিত্রাণ চাইছেন। সিপিএম বিধানসভার মধ্যে আছে। কাগজে ওরাই বিরোধী। তবে মানুষ ধরেই নিয়েছেন, এই মুহূর্তে প্রকৃত বিরোধী রাজনৈতিক দল বিজেপিই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy