Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

লক্ষ্য বিধানসভা, ঘর গোছানো শুরু সিপিএমের

ধাক্কাটা এসেছিল গত বিধানসভা নির্বাচনেই। দীর্ঘদিন যেখান থেকে বড় ব্যবধানে জিতেছেন সূর্যকান্ত মিশ্র, সেই নারায়ণগড় থেকে ২০১১ সালে তিনি জেতেন মাত্র হাজার সাতেক ভোটে। এরপর থেকে প্রতিটি নির্বাচনেই বামেদের ভোট কমেছে। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে পশ্চিম মেদিনীপুরের এই বিধানসভা কেন্দ্রে বামেরা পিছিয়ে প্রায় ২৬ হাজার ভোটে।

শনিবার নারায়ণগড়ে সূর্যকান্ত মিশ্র এবং সিপিএমের নব নির্বাচিত জেলা সম্পাদক তরুণ রায়। নিজস্ব চিত্র।

শনিবার নারায়ণগড়ে সূর্যকান্ত মিশ্র এবং সিপিএমের নব নির্বাচিত জেলা সম্পাদক তরুণ রায়। নিজস্ব চিত্র।

বরুণ দে
নারায়ণগড় শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:১০
Share: Save:

ধাক্কাটা এসেছিল গত বিধানসভা নির্বাচনেই। দীর্ঘদিন যেখান থেকে বড় ব্যবধানে জিতেছেন সূর্যকান্ত মিশ্র, সেই নারায়ণগড় থেকে ২০১১ সালে তিনি জেতেন মাত্র হাজার সাতেক ভোটে। এরপর থেকে প্রতিটি নির্বাচনেই বামেদের ভোট কমেছে। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে পশ্চিম মেদিনীপুরের এই বিধানসভা কেন্দ্রে বামেরা পিছিয়ে প্রায় ২৬ হাজার ভোটে।

বছর ঘুরলেই ফের বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে দলের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যবাবুকে সামনে রেখেই নারায়ণগড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টা শুরু করেছে সিপিএম। এখন থেকেই ছোট ছোট সভা করা শুরু করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, এ বার পাড়ায় পাড়ায় লাল পতাকা তুলতে হবে। আক্রমণ হলে যোগ্য জবাব দিতে হবে। তাঁর মতে, এই সময়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এখন ইঞ্চি ইঞ্চি করে এগোনোর সময়।

কেন এই সময়টাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সূর্যবাবুরা?

সিপিএমের এক সূত্রের ব্যাখ্যা, খাগড়াগড়, সারদা-কাণ্ডে তৃণমূলের এখন টালমাটাল অবস্থা। শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামেও তৃণমূল বিরোধী হাওয়া তৈরি হচ্ছে। কিন্তু বনগাঁ এবং কৃষ্ণগঞ্জের উপ- নির্বাচনে তো তৃণমূলেরই জয়জয়কার? সূর্যবাবুদের দাবি, ওখানে ভোট হয়েছে অন্য ভাবে। ওই এলাকায় গরু পাচার বড় ইস্যু। এ ক্ষেত্রে তৃণমূল প্রচার করেছে, তারা জিতলে গরু পাচার চলবে। অন্য দিকে, বিজেপি প্রচার করেছে, তারা জিতলে গরু পাচার বন্ধ করে দেবে।

গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় ছিল ৪৪। গত পঞ্চায়েতে ৩৪। আর গত লোকসভা নির্বাচনে ২৯। শতাংশের হিসেবে পশ্চিম মেদিনীপুরে বামেদের ভোট এ ভাবেই কমছে। সামনে যে কঠিন লড়াই, তা বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না সিপিএমের। তাই সময় পেলেই নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে এসে দলের কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন সূর্যবাবু। শনিবার নারায়ণগড়ে তিনটি সভা করেছেন তিনি। চেষ্টা করেছেন সংগঠনে ঝাঁকুনি দেওয়ার। সভাগুলিতে বিরোধী দলনেতা বলেছেন, “কুশবসানে ওরা আক্রমণ করতে এসেছিল। আপনারা যোগ্য জবাব দিয়েছেন। মিথ্যা মামলায় কয়েকজন জেলে আছেন। তবে জেলে ভরে আমাদের আটকানো যাবে না। সুকুমারদা (প্রয়াত নেতা সুকুমার সেনগুপ্ত) ২০ বছর জেলে ছিলেন। এটা শুনলে আমাদের গর্ব হয়।” বিজেপির শক্তিবৃদ্ধির কথাও মেনেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “উত্তর চব্বিশ পরগনার সম্মেলনে গিয়েছিলাম। প্রতিনিধিদের বক্তব্য শুনলাম। মানুষ আমাদের বলছে, তৃণমূল মারছে বলে বিজেপির আশ্রয়ে যেতে হচ্ছে। তোমরা উঠে দাঁড়াও। গরিব লোকেরা বলছে, লাল ঝান্ডা যদি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে আমরা আবার আসব।” সভাগুলিতে সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়ও বলেন, “নারায়ণগড় পথ দেখাচ্ছে। প্রতিবাদ-প্রতিরোধ শুধু এখানে থেমে থাকবে না। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। মানুষ আর চুপ করে বসে থাকবে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হবেই।”

কী বলছে অন্যদলগুলো? শাসক দল তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “সিপিএমের পক্ষে আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। নারায়ণগড়ের সভায় তো অল্প লোক হয়েছিল বলেই শুনেছি। আসলে মানুষ আর সিপিএমকে পছন্দ করছে না।” বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “এখন সর্বত্রই বিজেপি এগোচ্ছে। নারায়ণগড়েও আমাদের শক্তিবৃদ্ধি হচ্ছে।” এই পরিস্থিতিতে দলের নেতা- কর্মীদের আরও নমনীয় হয়ে মানুষের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সূর্যবাবু। তাঁর মন্তব্য, “আমরা কেউ হিরো নয়। আমরা সব জিরো। মানুষই আসল হিরো। আমাদের মানুষের কাছে যেতে হবে।” তাঁর কথায়, “ওদের দিন ফুরিয়ে আসছে। ওরা ভেবেছিল বনগাঁয় আমাদের তিন নম্বর করে দেবে। পারেনি। ওরা এক নম্বরে আছে। আমার দু’নম্বরে আছি। এক মাঘে শীত যায় না। সে দিন বেশি দূরে নেই, যেদিন আমরাই এক নম্বর হব। তৃণমূলের ঘাসফুলের পাপড়িও থাকবে না, ঘাসও থাকবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

narayangarh barun dey cpm
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE