Advertisement
১০ মে ২০২৪

পদে থেকেও বেতন, বিপাকে দুই শিক্ষক

স্বপন পাটকেলডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতিশালা প্রাথমিক স্কুলের প্রধানশিক্ষক।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বিমান হাজরা
সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৯ ০৩:২০
Share: Save:

এক জন গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান। অন্য জন জেলা পরিষদের তৃণমূলের কর্মাধ্যক্ষ। তাঁরা দু’জনেই প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। প্রধান ও কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছে প্রায় আট মাস আগে। অভিযোগ, ওই দু’জন কাজ থেকে ইস্তফাও দেননি, নেননি ছুটিও। অথচ প্রতি মাসে তাঁরা নিয়ম করে বেতন পাচ্ছেন। সিপিএম ও কংগ্রেসের এমন অভিযোগের পরে নড়েচড়ে বসেছে শিক্ষা দফতর। বিড়ম্বনায় পড়েছেন সাগরদিঘির গোবর্ধনডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান স্বপন মার্ডি ও জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ভারতী হাঁসদা।

স্বপন পাটকেলডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতিশালা প্রাথমিক স্কুলের প্রধানশিক্ষক। ভারতী ওই পঞ্চায়েতেরই বেলডাঙা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। ইতিমধ্যে স্বপনের বেতন বন্ধ করে অতীতের সব বেতন ফেরতের নির্দেশ জারি হয়েছে। ভারতীর বিষয়ে মঙ্গলবারই সাগরদিঘি পূর্ব চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক। অভিযোগ ওঠায় বিডিও-র কাছে সোমবারেই প্রধান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন সাগরদিঘির গোবর্ধনডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান স্বপন মার্ডি। কিন্তু ভারতী হাঁসদা এখনও দু’দিক বজায় রেখেছেন।

সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য জ্যোতিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “সরকারি বিধি অনুসারে কোনও প্রধান, সভাপতি, সভাধিপতি কিংবা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষরা তাঁদের পদে থাকাকালীন কোনও চাকরি করতে পারবেন না। যত দিন ওই পদে থাকবেন তত দিন তাদের চাকরি থেকে ছুটি নিতে হবে। কিন্তু স্বপন ও ভারতী কেউই তা করেননি। দু’জনেই শাসক দলের হওয়ায় প্রশাসন সব জেনেও কোনও পদক্ষেপ করেনি।”

স্থানীয় ব্লক কংগ্রেস সভাপতি অলোক চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “ওই দু’জনের কেউই ছুটি নেননি। বরং প্রতি মাসে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মাইনে জমা পড়েছে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে। কী ভাবে সব জেনেশুনেও এটা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে গেল? আমরা বিষয়টি নিয়ে আদালতে যাচ্ছি।”

পঞ্চায়েত বিধি অনুসারে প্রধানদের নিয়মিত পঞ্চায়েত আসা বাধ্যতামূলক। না এলে তার জন্য ছুটি নিতে হয়। মাসে মাসে তাঁরা ভাতা পান ৩০০০ টাকা। জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষদেরও প্রতি মাসে কাজের জন্য সরকারি ভাতা দেওয়া হয় ৪০০০ টাকা।

শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ছুটি না নিয়েই গত আট মাসই বেতন পেয়েছেন স্বপন ও ভারতী। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক পূরবী দে বিশ্বাস বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরেই স্বপন মার্ডির বেতন বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এত দিন তিনি যে বেতন তুলেছেন সেটাও জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদে ফেরত দিতে হবে। এই সময় কালের জন্য তাকে স্কুল থেকে ছুটির আবেদন করতে হবে। তবে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ভারতী হাঁসদা যে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষিকা তা আমার জানা নেই। সাগরদিঘি পূর্ব চক্রের এসআইয়ের সঙ্গে কথা বলে সে ব্যাপারে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।”

মোবাইলে স্বপনের সঙ্গে বহু বার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। জবাব মেলেনি এসএমএসেরও। তবে ভারতী স্বীকার করেন, তিনি স্কুল থেকে ছুটি নেন নি। বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না। দলের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি।

গোবর্ধনডাঙার তৃণমূলের সভাপতি ইস্তেয়াক আহমেদ বলছেন, “আইনগত ভাবে যা করণীয় সেটা তো তাঁদের অনেক আগেই করা উচিত ছিল। শিক্ষকতার পদ থেকে তাঁরা কেন ছুটি নেননি, সে দায় তাঁদেরই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE