প্রতীকী ছবি।
তিনি নিজে হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক। তাঁর কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন রোগীরা। অথচ সেই চিকিৎসক নিজেই এত দিন তিন ছেলেমেয়েকে পোলিয়ো খাওয়াননি।
জেলা পরিষদের ক্লিনিকে চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত ওই হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক আকবর আলি সরকার বলছেন, ‘‘আমি তো ওদের হোমিয়োপ্যাথিক নানা ওষুধ খাইয়েছি। তাই পালস পোলিও খাওয়ানোর প্রয়োজন মনে করিনি।’’
মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ব্লকের গুধিয়া গ্রামের এমন ঘটনা নজরে আসতেই ব্লক প্রশাসন, ইমাম-মোয়াজ্জিনদের সঙ্গে নিয়ে ওই চিকিৎসককে বোঝানো শুরু করে। শেষ পর্যন্ত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রশাসনের লোকজন ওই চিকিৎসকের ছোট সন্তানকে পোলিয়ো খাওয়াতে পেরেছেন।
আকবরের অভিযোগ, প্রশাসনের লোকজন তাঁকে ক্লিনিকে ঢুকতে বাধা দিয়েছেন। তার পরে পোলিয়ো খাওয়ানোর পরে তাঁকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জের বিডিও অঞ্জন চৌধুরী অবশ্য এমন অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সকলে তাঁদের বুঝিয়েই পালস পোলিয়ো খাইয়েছি।”
গুধিয়ার বাসিন্দা আকবর ১৯৭৬ সালে বিএমএস পাশ করেন। তিনি মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের তেঁতুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের হোমিওপ্যাথ ক্লিনিকে চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করেন। তাঁর আট, সাত ও দু’বছরের তিন সন্তান আছে। আকবর তাদের কাউকেই পোলিয়ো খাওয়াননি। জন্মের পর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুদের পোলিও খাওয়ানোর নিয়ম। তাই দু’বছরের কনিষ্ঠ সন্তানকেই এই প্রথম বার পোলিয়ো খাওয়ানো হয়েছে।
ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর আট বছরে আকবরের তিন সন্তান জন্মেছে। অথচ তাদের কাউকেই পোলিও খাওয়ানো যায়নি। গত ২৩-২৫ সেপ্টেম্বর পোলিয়ো খাওয়ানোর দিন ছিল। কিন্তু নাগাড়ে তিন দিন গিয়েও স্বাস্থ্যকর্মীরা ফিরে আসেন। শেষ পর্যন্ত ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে পোলিয়ো খাওয়ানোর অনুমতি দেন ওই চিকিৎসক।
ইমাম-মোয়াজ্জিনদের সংগঠন অল ইন্ডিয়া ইমাম মোয়াজ্জিন অ্যান্ড সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের জেলা সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আমরা প্রশাসনের কাছ থেকে জানতে পেরেছিলাম, নানা অজুহাত তুলে ওই চিকিৎসক পরিবার শিশুদের পোলিয়ো খাওয়ায়নি। তাঁদের বুঝিয়ে ফল মিলেছে।’’
আকবর আলির স্ত্রী রেহেনা বিবি বলছেন, “লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছি। তিন জনের ক্ষেত্রেই জননী সুরক্ষা যোজনার টাকা দেওয়া হয়নি। আশাকর্মীরা আমাদের খোঁজ নেয়নি। সম্প্রতি ছোট ছেলের রক্তের প্রয়োজন পড়েছিল। তখনও স্বাস্থ্যকর্মীদের কোনও সাহায্য পাইনি। এ সবের প্রতিবাদেই পালস পোলিও খাওয়াইনি।’’
যা শুনে বিডিও বলছেন, ‘‘এটা কোনও যুক্তি হতে পারে না। সরকারি সাহায্য পাননি বলে পালস পোলিয়ো খাওয়াবেন না, এটা আবার হয় নাকি! অভিযোগ থাকলে আমাকে জানান। সেগুলো দেখব। কিন্তু পোলিয়ো খাওয়াতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy