পড়শিদের ভিড় শান্তিপুরে।
অন্য দিন ওঁরা ঘুম থেকে উঠে পড়তেন সকাল সাতটার মধ্যেই। রবিবার বেলা আটটা বেজে গেলেও ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধই ছিল। ডাকাডাকি করে কারও কোনও সাড়া না মেলায় সন্দেহ হয় প্রতিবেশীদের। শেষ পর্যন্ত দরজা ভেঙে উদ্ধার হল সুশান্ত রায় (৪০), তাঁর স্ত্রী তিথি রায় (৩০) ও তাঁদের পুত্র আকাশ রায় (৫)-এর দেহ। শান্তিপুরের গোবিন্দপুর এলাকার ওই ঘটনায় রীতিমতো বিস্মিত এলাকার লোকজন।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ধারাল ছুরি দিয়ে স্ত্রী ও পুত্রকে শ্বাসনালি কেটে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন ওষুধ ব্যবসায়ী সুশান্তবাবু। ঠিক কী কারণে এমনটা ঘটল তা এখনও পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “মনে হচ্ছে পারিবারিক কোনও অশান্তি থেকে অবসাদে ভুগছিলেন যুবক। তা থেকেই এমন ঘটনা বলে মনে হচ্ছে।” নদিয়ার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষকে একাধিক বার ফোন ও এসএমএস করা হলেও সাড়া দেননি।
গোবিন্দপুরে পৈত্রিক ভিটেতেই থাকতেন সুশান্তবাবু। গোবিন্দপুর বাজারে তাঁর ওষুধের দোকান রয়েছে। প্রায় পনেরো বছর ধরে তিনি ওষুধের খুচরো ব্যবসা করছেন। সুশান্তবাবুর দুই দাদা কর্মসূত্রে নিউ ব্যারাকপুর ও কৃষ্ণনগরে থাকেন। বাড়িতে সুশান্তবাবুর স্ত্রী-পুত্র ছাড়াও থাকতেন তাঁর মা মীনা রায়। তবে দিন দুয়েক আগে তিনি উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। শনিবার রাতে স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে বাড়িতেই ছিলেন সুশান্তবাবু।
রবিবার সকালে এক পড়শি সুশান্তবাবুর খোঁজে বাড়িতে যান। ডাকাডাকি করেও কোনও সাড়া মেলেনি। তারপরেই তিনি পড়শিদের ডাকেন। ঘরের দরজা ভেঙে পড়শিরা ভিতরে ঢুকে দেখেন, মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তিনটি ঘরের একটিতে পড়ে ছিল তিথিদেবী ও আকাশের দেহ। দু’জনেরই শ্বাসনালি কাটা ছিল। শরীরের অন্য অংশেও অল্পবিস্তর আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। আর পাশের ঘরেই সুশান্তবাবুর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান পড়শিরা। শান্তিপুর থানার পুলিশ এসে দেহগুলি উদ্ধার করে। একই পরিবারে তিন জনের এমন মৃত্যু ঘটনায় গোটা পাড়া ছিল শোকস্তব্ধ। বাড়িটির উঠোনে ভিড় করে ছিলেন পড়শিরা। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ বিষয়টিকে পারিবারিক গোলমালের জের বলেই মনে করছে। কিন্তু পড়শিরা বলছেন অন্য কথা। রায় বাড়ির বারান্দায় বসে বছর পঞ্চাশের শিবচন্দ্র রায় বলেন, “এই পাড়াতে সুশান্তবাবুরা অনেকদিন ধরেই রয়েছেন। কিন্তু কখনও ওঁদের পরিবারে কোনও গোলমাল হয়েছে বলে তো মনে পড়ছে না। এমনকী শনিবার সন্ধ্যাতেও তো ওই বাড়িতে কোনও গোলমাল হয়নি। কেন যে এমনটা ঘটল বুঝতে পারছি না।” বিস্মিত বাড়ির লোকজনও। সুশান্তবাবুর মেজ দাদা সুব্রতবাবু বলেন, “কী ভাবে যে এটা ঘটল তা আমাদের কল্পনার অতীত।” গোবিন্দপুর বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, তাঁর দোকানের পাশেই সুব্রতবাবুর ওষুধের দোকান। সব সময় হাসিখুশি থাকা মানুষটা এমনটা করলেন কেন তা তিনিও ভাবতে পারছেন না। সুশান্তবাবুর মা মীনাদেবী ঘটনার আকস্মিকতায় কথা বলতে পারছিলেন না। মাঝেমধ্যে শুধু বিড়বিড় করছিলেন, “আমি বাড়িতে থাকলে হয়তো এমনটা ঘটত না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy