প্রতীকী ছবি।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে এক চিকিৎসকের মৃত্যুকে ঘিরে বিতর্কে জড়াল রানাঘাটের একটি বেসরকারি হাসপাতাল। অভিযোগ, ওই চিকিৎসকের মৃত্যুর বিষয়টি তারা বেমালুম চেপে গিয়েছিল। শুধু তাই নয়, ওই চিকিৎসকের সংস্পর্শে আসা রোগী ও চিকিৎসক ও হাসপাতাল-কর্মীদের তালিকা দেওয়ার ক্ষেত্রেও তারা গরমিল করেছে বলে অভিযোগ। এর ফলে ব্যাপক হারে অনেকের মধ্যে সংক্রমণ ছড়়ানোর আশঙ্কা করছেন জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা। হাসপাতালটি সাময়িক ভাবে বন্ধ করা হতে পারে বলে স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন।
গত ১০ জুলাই রানাঘাটের ওই বেসরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। তাঁর করোনা হয়েছিল। তার পর দিনই ১১ জুলাই ওই বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালিসিস করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন বছর পঞ্চান্নোর এক ব্যক্তি। পরে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে তাঁর মৃত্যু হয়। পরদিন ১২ জুলাই রিপোর্ট এলে দেখা যায় যে, তিনিও করোনা-আক্রান্ত ছিলেন। এর পরই ওই রোগীর সংস্পর্শে আসা অন্য রোগী, চিকিৎসক ও কর্মী মিলিয়ে ১২ জনের লালারসের পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু তার আগে চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনাটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে চেপে যান বলে অভিযোগ। স্বাস্থ্য দফতর জানার পর ওই চিকিৎসকের সংস্পর্শে আসা ১৩ জনের লালারস পরীক্ষা করায়। তার মধ্যে হাসপাতালের এক নার্সের রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
রানাঘাট মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক পুষ্পেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, “ওঁরা চিকিৎসকের মৃত্যুর কথা চেপে গিয়েছিলেন। ১২ জুলাই বিষয়টা আমার কানে আসার পর আমি ওই বেসরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে চেপে ধরি। তখন তারা বিষয়টি স্বীকার করে নেন।” স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই চিকিৎসক ১-৩ জুলাই রানাঘাটের ওই বেসরকরি হাসপাতালে ডিউটি করেছেন। তার পর তিনি হালিশহরের বাড়ি ফিরে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখান থেকে তাঁকে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং ১০ জুলাই সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
পুষ্পেন্দুবাবু বলেন, “ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখন ৫২ জন রোগীর তালিকা দিয়েছে। কিন্তু তাদের প্রতিটি তথ্যে ভুল আছে। আমরা আবার সঠিক তালিকা চেয়েছি।’’ জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “পদক্ষেপ যা করার সে তো হবেই, কিন্তু তার আগে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। কারণ, ওই ৫২ জন রোগী বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। তাঁরা সকলের সঙ্গে এত দিনে মেলামেশাও শুরু করেছেন।’’ ওই কর্তার দাবি, “ওই চিকিৎসক তিন দিন ধরে সব ক’টি তলায় গিয়েছেন। লিফট ব্যবহার করেছেন। তা হলে কেন শুধু ১৩ জনকে বাছা হল? কেন ওই চিকিৎসকের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের তালিকায় অন্য কোনও ডাক্তার নেই?”
পুষ্পেন্দুবাবুর আরও বক্তব্য, “মৃত রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন এমন সাত কর্মী যে হোম কোয়রান্টিনে আছেন, তার কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি হাসপাতাল।” বৃহস্পতিবার ওই হাসপাতালে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন পুষ্পেন্দুবাবু ও রানাঘাটের মহকুমা শাসক হরসিমরণ সিংহ।
ওই বেসরকারি হাসপাতালের ডায়গনস্টিক ম্যানেজার অনির্বাণ ঘোষের কথায়, “আসলে তালিকায় নাম ও ঠিকানা সঠিক ছিল কিন্তু তাড়াহুড়ো করে তালিকা তৈরি করতে গিয়ে আমাদের কর্মীরা ফোন নম্বর ভুল লিখে ফেলেছিলেন।” চিকিৎসকের মৃত্যুর বিষয়টি কেন স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়নি সে ব্যাপারে তাঁর উত্তর, “উনি যেহেতু কলকাতায় মারা গিয়েছেন তাই আমরা সে ভাবে গুরুত্ব দিইনি। এটা আমাদের ভুল বলতে পারেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর যদি আপাতত হাসপাতাল বন্ধ রাখতে বলে আমরা বন্ধ করে দেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy