Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Durga Puja

বৈষ্ণব মতে দুর্গার পুজো সিংহবাড়িতে

  নবদ্বীপের বনেদিবাড়ির পুজোর তালিকায় অন্যতম বুড়োশিবতলা সিংহবাড়ির দুর্গাপুজো। বর্তমান প্রজন্মের উদয় সিংহ, কৌশিক সিংহেরা জানান, বাংলার ১৩১৮ সনে পুজোর সূচনা করেন পরিবারের তৎকালীন প্রধান রাধাকান্ত সিংহ।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২০ ০০:১৮
Share: Save:

কাঠের সিন্দুকটা খুললেই নবদ্বীপের ‘সিংহীবাড়ির’ সদর থেকে খিড়কি জুড়ে পুজোর গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক পুরুষের পুরনো কাঠের প্রমাণ সাইজের ওই সিন্দুকে বছরভর তোলা থাকে পুজোর বাসন। পঞ্চপ্রদীপ থেকে মঙ্গলঘট, পুষ্পপাত্র থেকে কোষাকুষি। পুজোর সপ্তাহদুয়েক আগে খোলা হয় সিন্দুক। সিংহবাড়ির সবচেয়ে বর্ষীয়ান সদস্য আরতি সিংহ বলেন, “আমাদের দুর্গাপুজোর শুরু সেই উল্টোরথে, যে দিন পাটপুজো হয়। তবে ঠাকুরের বাসনপত্র মাজাঘষা শুরু হলেই পুজো বাড়ির মেজাজ সম্পূর্ণ। তখন শুধু অধীর অপেক্ষা।” ছিয়াত্তর বছরের গৃহকৃত্রী এমনটাই দেখে আসছেন বিয়ে হওয়া ইস্তক।

নবদ্বীপের বনেদিবাড়ির পুজোর তালিকায় অন্যতম বুড়োশিবতলা সিংহবাড়ির দুর্গাপুজো। বর্তমান প্রজন্মের উদয় সিংহ, কৌশিক সিংহেরা জানান, বাংলার ১৩১৮ সনে পুজোর সূচনা করেন পরিবারের তৎকালীন প্রধান রাধাকান্ত সিংহ। গাছ-গাছড়ার ভেষজ গুণাগুণ ভাল জানতেন। সে কালে হেন কোনও ভেষজ জিনিস ছিল না, যা নবদ্বীপ বড়বাজারে তাঁর দোকানে মিলত না। রাধাকান্ত সিংহ প্রথম দুর্গাপুজো শুরু করলেন আজ থেকে একশো ন’বছর আগে। তাঁর পুত্র ব্যবসায়ী লক্ষণচন্দ্র সিংহের আমলে সে পুজো আরও জাঁকজমক পূর্ণ হয়ে ওঠে।

পাঁচপুরুষের ঐতিহ্যবাহী এই পুজো এখনও সাবেক বিধিনিয়ম মেনেই করা হয় বলে জানান পরিবারের সদস্যেরা। আরতিদেবী বলেন, “বৈষ্ণব মতে পূজিত দেবীকে অন্ন ভোগ দেওয়া হয় না। মধ্যাহ্নে কলা, খই, দই আর কাশীর চিনি দিয়ে ফলার ভোগ। রাতের ঘিয়ে ভাজা লুচি আর মিষ্টি। আমাদের পুজোয় বলি নিষিদ্ধ।” রাধাকান্তের চতুর্থ প্রজন্ম উদয় সিংহ বলেন, “উল্টোরথের দিন আমাদের ঠাকুরের পাটপুজো হয়। এরপর শ্রাবণ মাসের কোনও এক সোমবারে শুরু হয় প্রতিমার খড় বাঁধার কাজ। মহালয়ায় অমাবস্যা লাগলে হয় চক্ষুদান। চতুর্থীর দিন প্রতিমা সম্পূর্ণ করে বেদিতে তোলা হয়।” পুজোর দিনগুলোয় এখনও সিংহবাড়ি একান্নবর্তী। শতাধিক পাত পড়ে দু’বেলা। এ সময়ে উমার সঙ্গে বাড়ির মেয়েরাও বাপের আসেন।

সাধারণত বাড়ির পুজোর বিসর্জন হয় দশমীর দিনে। কিন্তু সিংহবাড়ির দুর্গাপ্রতিমা বিজয়া হয় একাদশীর দিন। কেন ব্যতিক্রম? পরিবারের সদস্যেরা জানান, একেবারে শুরুতে প্রতিমা বিসর্জন হত দশমীতেই। সে বারও প্রস্তুতি চলছে। দশমীর অপরাহ্নে বাড়ির মহিলারা বরণ করছেন মাকে। সারা দিনের পরিশ্রমে চোখ লেগে এসেছিল রাধাকান্ত সিংহের। তন্দ্রার ঘোরে তিনি স্বপ্ন দেখে দেবী তাঁকে বলছেন ‘আজ নয়, কাল’ যাবেন। সেই থেকেই একাদশীর দিন বিসর্জন হয় সিংহবাড়ির দুর্গা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja Singha Bari Nabadwip Vaishnavism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE