Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ ন’পাড়া হাই স্কুলে

আর্থিক দুর্নীতি-সহ বেশ কিছু অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাল স্কুলের পড়ুয়া ও অভিভাবকদের একাংশ। শুক্রবার দুপুরে ন’পাড়া রূপদহ হাই স্কুলের ওই ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে প্রধান শিক্ষককে হিরণ টমাস মণ্ডলকে মুক্ত করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৫ ০১:০৭
Share: Save:

আর্থিক দুর্নীতি-সহ বেশ কিছু অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাল স্কুলের পড়ুয়া ও অভিভাবকদের একাংশ। শুক্রবার দুপুরে ন’পাড়া রূপদহ হাই স্কুলের ওই ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে প্রধান শিক্ষককে হিরণ টমাস মণ্ডলকে মুক্ত করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বরং পুলিশের সামনেই ওই শিক্ষকের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক উৎপল ভদ্র ও জেলার স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) দীপালি দত্ত গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। এ দিনের ঘটনার পরে প্রধান শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরেই ওই স্কুলের পরিচালন সমিতি থেকে শুরু করে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের একাংশ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলছিলেন। অভিযোগ, হিণবাবু স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে নানা ক্ষেত্রে সংগৃহীত প্রায় ৫ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকার কোনও হিসাব দিতে পারছেন না। এছাড়াও বেআইনি ভাবে তিনি সর্বশিক্ষার টাকায় তৈরি ঘর ভেঙে দিয়েছেন। এমনই নানা অভিযোগ জেলা প্রশাসনের কাছেও জমা পড়ে। এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষকদের অসন্তোষ থেকে স্কুলে গোলমাল হয়েছিল। গত ১৭ জুন বৈঠক চলাকালীন তাঁকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। তারপর থেকে তিনি ‘অসুস্থতার’ কারণে স্কুলে আসা বন্ধ করে দেন। এরই মধ্যে স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।

স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি মানাজাত আলি বিশ্বাস বলেন, ‘‘কাউন্সিলের নিয়ম অনুযায়ী আমরা ২৭৫ জ‌নের বেশি ছাত্রছাত্রী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করতে পারব না। কিন্তু প্রধান শিক্ষক পরিচালন সমিতির সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই ৩৫১ জনকে ভর্তি নিয়েছেন। কাউন্সিল তাই রেজিস্ট্রেশন দিতে রাজি হচ্ছে না। আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছে। আর তাতেই ক্ষুব্ধ হয়েছে ছাত্রছাত্রীরা।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘প্রধান শিক্ষক কয়েক লক্ষটাকা তছরুপ করেছেন। কোনও হিসাব দিতে পারছেন না। ওই টাকা ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত আমরা তাঁকে স্কুলে ঢুকতে দেব না।’’

এ দিন স্কুলে যাওয়ার পরে বেলা এগারোটা নাগাদ তিনি তাঁর গাড়ি নিয়ে স্কুলের বাইরে বের হতে গেলে তাঁকে আটকে দেওয়া হয়। তাঁকে ঘরের ভিতরে ঢুকিয়ে তালা দিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় তার গাড়িটিও। পরে ধুবুলিয়া থানার পুলিশ প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। হিরণ টমাস মণ্ডল বলেন, ‘‘আমি কোনও অন্যায় করিনি। আমার স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষিকা অনেক দেরি করে স্কুলে আসতেন। আমি হাজিরা খাতায় সই করা নিয়ে কড়াকড়ি শুরু করতেই তাঁরা আমার বিরুদ্ধে পরিচালন সমিতিকে সঙ্গে নিয়ে চক্রান্ত করে। এ দিনও তাঁদেরই মদতে এমনটা ঘটেছে। আমাকেও মারধর করা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আগের পরিচালন সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে আমি স্কুলের উন্নয়নের কাজে টাকা ব্যয় করেছি। তার রসিদও আমার কাছে আছে। কিছু মানুষ তাঁদের ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য স্কুলের পঠনপাঠনের পরিবেশ নষ্ট করে দিচ্ছে।’’

অতিরিক্ত জেলাশাসক উৎপল ভদ্র বলেন, ‘‘স্কুলের শিক্ষকরা কাউন্সিলে গিয়ে ছাত্রদের রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান করবেন। সেই সঙ্গে ওই প্রধান শিক্ষক সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে পরিচালন সমিতি।’’ প্রসঙ্গত, এর আগে ন’পাড়া রূপদহ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করেছিলেন উৎপলবাবু। সেই তদন্তের রিপোর্ট শিক্ষা দফতরে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘ ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনেকটাই সত্য। তিনি নিয়ম মেনে টাকা খরচ করেননি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Napara School Agitation krishnanagar teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE