Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
BJP

দুর্নীতিতে নাম জড়াচ্ছে পদ্মের

কয়েক দিন আগেই ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল করিমপুর ২ ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত নন্দনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কল্লোল প্রামাণিক
করিমপুর শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২০ ০৩:৪৫
Share: Save:

১০০ দিনের কাজ থেকে বার্ধক্য ভাতা কিংবা বিধবা ভাতা থেকে আবাস যোজনার ঘর পাইয়ে দেওয়া— নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের দিকে। কিন্তু অন্যেরা কি ধোয়া তুলসীপাতা, বিশেষ করে বিজেপি?

কয়েক দিন আগেই ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল করিমপুর ২ ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত নন্দনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। এলাকার বাসিন্দাদের বড় অংশের অভিযোগ, ওই পঞ্চায়েতে অনেকের জব কার্ড থাকা সত্ত্বেও তাঁরা এক দিনও ১০০ দিনের কাজ পাননি। কেউ আবার কাজ করেও টাকা পাননি। উল্টে কোনও কাজ না করা সত্ত্বেও শাসক দলের অনুগতদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে গিয়েছে। ষাটোর্ধ্ব গরিব মানুষ সরকারি আবাস পাননি। অথচ যাঁদের নিজস্ব জমি ও ঘর রয়েছে, তাঁরা ঘর পেয়েছেন। ২৬ বছর আগে স্বামী মারা গেলেও দুঃস্থ মহিলার বিধবা ভাতাও চালু হয়নি।

কিছু দিন আগে ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল করিমপুর ১ ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত মধুগাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের দুই সুপারভাইজ়ারের বিরুদ্ধে। মাস চারেক আগে ১০০ দিনের কাজে দুটো স্কিমে, রাস্তার পাশে গাছ লাগানো এবং রাস্তার পাশের ক্যানাল সংস্কারের কাজ করিয়ে প্রায় সওয়া দুই লক্ষ টাকা হাতানো হয়েছে বলে অভিযোগ হয়েছিল। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, গাছ লাগানোর কথা বলা হলেও এখন বিষাক্ত পার্থেনিয়াম ছাড়া সেখানে একটি গাছও নেই। ক্যানাল সংস্কারের কাজে কয়েক ঝুড়ি মাটি কাটা ছাড়া কোনও কাজ হয়নি। তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, ওই দুই সুপারভাইজ়ার আগে কংগ্রেসে থাকলেও পরে তৃণমূলে যোগ দিয়ে সুপারভাইজ়ার রয়ে গিয়েছেন। তাঁরা কখনও অনেক কার্ড হোল্ডারকে বেশি দিন কাজ করিয়ে কম টাকা কিংবা কখনও কাজ না করিয়ে তার অ্যাকাউন্টে কাজের টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ।

নদিয়া জেলায় তৃণমূল অনেক বেশি পঞ্চায়েত পরিচালনার দায়িত্বে থাকায় তাদের বিরুদ্ধে যেমন দুর্নীতির অভিযোগ বেশি, সীমিত সুযোগ পেয়ে বিজেপিও কিন্তু পিছিয়ে নেই। প্রায় এক মাস আগে বার্ধক্য ভাতা পাইয়ে দেওয়ার নামে আর্থিক দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে করিমপুর ১ ব্লকের যমশেরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির এক পঞ্চায়েত সদস্যের। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস তিনেক আগে বেদবাড়িয়া গ্রামের শচীন সরকার অভিযোগ করেন যে ওই পঞ্চায়েত সদস্য বার্ধক্য ভাতা পাইয়ে দেবেন বলে তাঁর থেকে চার হাজার টাকা নিয়েছিলেন। একই ভাবে এলাকার আরও বহু জনের কাছে তিনি টাকা নিয়েছিলেন। বিডিও তদন্ত করে পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলে হোগলবেড়িয়া থানার পুলিশ ওই সদস্যকে গ্রেফতার করে।

দিন কয়েক আগে বিজেপি পরিচালিত যমশেরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার আরবপুর, হরিপুর, দুর্গাপুরের সাধারণ মানুষের অভিযোগের ভিত্তিতে এলাকার বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে ব্লক প্রশাসনের নির্দেশে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। পঞ্চায়েতের এক আধিকারিক জানান, বিশেষ করে পঞ্চায়েতের সদস্য কিংবা আধিকারিক নন এমন কিছু মানুষ নিত্যদিন পঞ্চায়েতে যাতায়াত করেন। তাঁরা নিজের প্রভাব খাটিয়ে বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, আবাস যোজনার ঘর বা একশো দিনের কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে অসহায় মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, গোপনে টেন্ডার প্রক্রিয়া করে আর্থিক বিনিয়োগ জড়িয়ে পড়েন পঞ্চায়েত প্রধান থেকে আধিকারিকরা। এ ছাড়াও একশো দিনের কাজের ক্ষেত্রে সুপারভাইজ়ারেরা মাস্টার রোলে নিজেদের মনপসন্দ নাম ঢুকিয়ে টাকা রোজগারে অভিযুক্ত হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রেও কিন্তু দুর্নীতির দায় পঞ্চায়েতকেই নিতে হচ্ছে। করিমপুর ১-এর বিডিও অনুপম চক্রবর্তী বলেন, “যে কোনও দল পরিচালিত এলাকার যে পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ আসবে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতো তার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE