Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কাদাজলে মাখামাখি শিশু উদ্ধার সগুনায়

নিজের কানকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না সগুনার আনন্দনগরের বাসিন্দা হরিমোহনবাবু (নাম পরিবর্তিত)। বাইরে কে যেন কেঁদে চলেছে। বৃষ্টিবাদলার রাতে এমন আওয়াজে খানিক হকচকিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবু সাহস করে হাতে টর্চটা নিয়ে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়েছিলেন।

সেই শিশু।—নিজস্ব চিত্র

সেই শিশু।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৬ ০১:৩৯
Share: Save:

নিজের কানকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না সগুনার আনন্দনগরের বাসিন্দা হরিমোহনবাবু (নাম পরিবর্তিত)।

বাইরে কে যেন কেঁদে চলেছে। বৃষ্টিবাদলার রাতে এমন আওয়াজে খানিক হকচকিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবু সাহস করে হাতে টর্চটা নিয়ে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়েছিলেন। বেরিয়ে যা দেখলেন তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না।

একটি একরত্তি মেয়ে থুতনির কাছে হাতদু’টো জড়ো করে দাঁড়িয়ে। টর্চের আলো তার উপরে পড়ায় কান্নাও বেড়ে গিয়েছে কয়েক গুণ। সারা গা কাদাজলে মাখামাখি।

হকচকিয়ে যান হরিমোহনবাবু। মেয়েটি কোথা থেকে এল। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটিকে কোলে তুললেন। ভরসার কাঁধ পেয়ে মেয়েটিও তাঁকে জড়িয়ে ধরেছে।

হরিমহোনবাবু খবর দেন প্রতিবেশীদের। তাঁদের পরামর্শেই ফোন যায় কল্যাণী থানায়। পুলিশ এসে শিশুটিকে নিয়ে যায়। বছর দেড়েকের শিশুটি বর্তমানে কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। আপাতত শিশুটির দেখভালের দায়িত্বে জেলা শিশু কল্যাণ কমিটি।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার ভোরে আনন্দনগরে একটি বাড়ির পিছনে শিশুকন্যাটিকে কেউ ফেলে পালিয়ে যায়। পুলিশ শিশুটিকে নিয়ে সরাসরি হাসপাতালে যায়। তখন তার শরীর কাদায় মাখামাখি। তারাই নতুন জামার ব্যবস্থা করে। হাঁটতে শিখলেও কথা বলতে শেখেনি বছর দেড়েকের শিশুটি। ফলে বিস্তারিত কিছু জানা সম্ভব হয়নি। ফলে পুলিশ এখনও অন্ধকারে। পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েটির ছবি সব থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদি কোনও দাবিদার পাওয়া যায়, প্রমাণ দেখে তাঁদের হাতেই বাচ্চাটিকে তুলে দেওয়া হবে। অনেকেই বাচ্চাটিকে দত্তক নিতে চাইছেন। কিন্তু যা হবে, আইনের মাধ্যমেই হবে।

জেলা শিশু কল্যাণ কমিটির চেয়ারপার্সন রিনা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খবর পেয়ে শিশুটির দায়িত্ব নিয়েছি। আপাতত হাসপাতালেই সে আমাদের জিম্মায় থাকবে। আইন মেনে কোনও দত্তক কেন্দ্রে পাঠানো হবে।’’

তবে এত কিছু বোঝে না একরত্তি মেয়েটি। পেট ভর্তি থাকলে আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠছে। থেকে থেকে খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে। আবার মাঝে-মাঝে আনমনা হয়ে পড়ে। কেঁদেও ফেলে। হয় তো এত মুখের ভিড়ে পরিচিত মুখটি নেই বলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Baby Girl rescued Saguna Kalyani
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE