Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
মত্ত হয়ে গাড়ি চালানোর অভিযোগ উঠল চালকের বিরুদ্ধে
Death

নিশ্চয় যান উল্টে গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু

জেলা স্বাস্থ্য দফতরে ইতিমধ্যে ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে কারণ, ওই নিশ্চয়যানের চালক মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ এনেছেন প্রসূতি ও তাঁর পরিবার।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই নিশ্চয় যান। ইনসেটে, শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে জখম প্রসূতির। রবিবার। ছবি: প্রণব দেবনাথ

দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই নিশ্চয় যান। ইনসেটে, শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে জখম প্রসূতির। রবিবার। ছবি: প্রণব দেবনাথ

নিজস্ব সংবাদদাতা 
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৩৪
Share: Save:

আসন্নপ্রসবাকে সময় মতো হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে যাতে তাঁর ও তাঁর গর্ভস্থ সন্তানের প্রাণরক্ষা করা যায় তার জন্যই স্বাস্থ্য দফতর ‘নিশ্চয়যান’ প্রকল্প শুরু করেছিল। ঘটনাচক্রে এ হেন এক নিশ্চয়যানে চেপে হাসপাতাল যাওয়ার সময় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল গর্ভস্থ শিশুর। আহত হয়েছেন প্রসূতি-সহ নিশ্চয়যানের অন্য যাত্রীরা।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরে ইতিমধ্যে ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে কারণ, ওই নিশ্চয়যানের চালক মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ এনেছেন প্রসূতি ও তাঁর পরিবার। ইতিমধ্যে ধুবুলিয়া থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। দরপত্র ডেকে একটি সংস্থাকে ওই নিশ্চয়যান চালানোর বরাত দেওয়া হয়েছিল বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালে। তার চালকের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ ওঠায় আলাদা করে ঘটনার তদন্ত শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সুপার সমীর আচার্য।

তবে যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই নিশ্চয়যানের চালক লাল্টু হালদার মত্ত হওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমি মদ খেয়ে গাড়ি চালাইনি। মদ কখনও খাই না।” তাঁর কথায়, “আমি আসলে ঘুমিয়ে পড়ছিলাম। গোটা একটা দিন ঘুমোতে পারিনি। দূর দূরান্তের গ্রাম থেকে প্রসূতিদের নিয়ে রাত-বিরেতে হাসপাতালে যেতে হয়। বিশ্বাম হয় না দীর্ঘ সময়। শুধু প্রসূতির বিষয় বলে যেতে রাজি হয়েছিলাম। কখন যে চোখ লেগে গিয়েছে বুঝতে পারিনি। যখন চোখ খুলল তখন দেরি হয়ে গিয়েছে। আর কিছু করার ছিল না।

চালকের এই বক্তব্য সামনে আসার পর অনেকেই বলছেন, নিশ্চয়যানের চালকদের কত ক্ষণ ডিউটি করতে হচ্ছে, কতটাই বা তাঁরা বিশ্রাম পাচ্ছেন তা খতিয়ে দেখা উচিৎ। কারণ, বিশ্রাম ছাড়া টানা দিন-রাত ডিউটি করলে ক্লান্তির দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। ফলে নিশ্চয়যানের চালকদের নির্দিষ্ট ডিউটিরোস্টার তৈরি করা দরকার।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রের খবর, শনিবার বিকেলে নাকাশিপাড়ার রায়বালি এলাকার বাসিন্দা রাখী বাগের প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। তাঁকে বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থা জটিল হতে থাকায় রাতেই জেলা সদর হাসপাতালে রেফার করে হয়। বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালের নিশ্চয়যানে করে তাঁকে নিয়ে আসা হচ্ছিল। ধুবুলিয়ার বাহাদুরপুর এলাকায় রাত দু’টো নাগাদ গাড়িটা আচমকা রাস্তার পাশে নয়নজুলিতে উল্টে যায়। গাড়িতে রাখী ছাড়াও তাঁর স্বামী বিধান বাগ, মা পূর্ণিমা সাঁতরা, জেঠিমা কনক সাঁতরা ও কাকিমা মাধবী সাঁতরা। নিশ্চয়যানের জানালার কাচ ভেঙে তাঁদের সকলকে উদ্ধার করে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা গয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করার পর মৃত সন্তানের জন্ম দেন রাখী। পরে তাঁকে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মাধবী সাঁতরা বলেন, “প্রথম থেকেই চালক প্রচণ্ড জোরে চালাচ্ছিল। আমরা নিষেধ করি। শুনছিল না। মদ খেয়ে ছিল। কারণ, মাঝেমধ্যেই ঝিমিয়ে পড়ছিল। আমরা তাকে ডেকে তুলছিলাম। কেউ মদ না খেলে এমন করে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Accident Ambulance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE