ডোমকলে রোগী দেখছেন এক চিকিৎসক। —নিজস্ব চিত্র
জ্বরে বেহুঁশ ছেলেটিকে উঠোনে ফেলে মহিলা কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে পড়লেন— ‘‘ও হাকিম, ছেলেডারে এক বার কল লাগিয়ে দেখ না, হাসপাতালে তালা, তুমিই খোদার মতো গো!’’ মহিলা হাউমাউ করে কাঁদছেন।
স্তব্ধ হাসপাতালে চিকিৎসা না হওয়ায় গত কয়েক দিন ধরে নতুন করে ভরে উঠেছিল হাতুড়ের উঠোন। ডোমকলের মতো প্রান্তিক এলাকায় রোগ-বালাইয়ের বহর সামাল দিতে এ ক’দিন তাদের কদরের ধরনই গিয়েছিল বদলে।
সেখানে কেউ আসছেন ছেলের ধুম জ্বর নিয়ে কেউ বা শ্বাসকষ্টে হাঁসফাঁস বৃদ্ধ বাবাকে রিকশায় টেনে নিয়ে এসে ফেলেছেন গ্রামীণ চিকিৎসকের চেম্বারে। ডোমকল মহকুমার গাঁ গঞ্জে এমনই পসার ফেঁপে উঠেছিল তাঁদের। এমনই এক জন গ্রামীণ চিকিৎসক বলছেমন, ‘‘মিথ্যে বলব না। পাশ করা ডাক্তার আমরা নই। কিন্তু গঞ্জের চেম্বারে কম্পাউন্ডারি করে একটু আধটু শিখেছি, তা দিয়েই চলত। এ ক’দিনে অনেক রোগীই এসেছিলেন দেখেছিও তাঁদের।’’
নিরাপত্তা কাকে বলে ওঁরা জানেন না। কে কাকে মেরেছে, কেন মেরেছে সেটাও জানা নেই। ডাক্তারদের কর্মবিরতি আগাম খবরটাও নেই খয়রামারি রোজিনা বিবির কাছে। ফলে বছর দেড়েকের সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেড়িয়েছেন তিনি। যাকে সামনে পেয়েছেন তাকে ধরে বলেছেন, কোথায় গেলে তার ছেলেটার একটু চিকিৎসা করাতে পারবেন। উত্তর মেলেনি, হাড় কাঁপুনি জ্বরের ছেলেকে কোলে নিয়ে উদভ্রান্তের মতো ঘুরে শেষ পর্যন্ত আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে ফিরতে হয়েছে বাড়িতে। শেষে প্রতিবেশীদের পরামর্শে গ্রামের গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়েছে ছেলের।
রোজিনার দাবি, ‘‘কোথায় কী হয়েছে জানি না, জ্বরের ছেলেটাকে নিয়ে সেই ভোরবেলা থেকে হাসপাতালে মাথা কুটলাম, ওঁরা না থাকলে তো ছেলেটা মরেই যেত!’’ হাসপাতাল ফেরত মানুষ তাই বার বার ছুটে গিয়েছেন এই সব গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে। ডোমকল মহকুমা হাসপাতালের সুপার তথা ডোমকলের এসিএমওএইচ প্রবীর মান্ডি বলেন, ‘‘অসুবিধাটা বুঝি, কিন্তু এ ক’দিন ওঁদের বাধাই বা দেব কী করে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy