Advertisement
১১ মে ২০২৪

আক্রান্ত বিধায়কেরাও, সাংবাদিক পিটিয়ে সাঙ্গ খেলা

বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ বেলডাঙা ১ ব্লক অফিসের কাছে এক বিজেপি নেতার মার খাওয়ার ছবি মোবাইলে তুলতে গিয়েছিলেন আনন্দবাজারের সাংবাদিক সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁকে ঘিরে ধরে লাঠি, বাঁশ, গাছের ডাল, উইকেট দিয়ে বেধড়ক পেটায় ‘বহিরাগত’ দুষ্কৃতীরা। মাথা ফাটে, হাত ভাঙে।

মারধরে আহত কংগ্রেস কর্মী আবুল কাশেম শেখ। সোমবার, করিমপুর হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

মারধরে আহত কংগ্রেস কর্মী আবুল কাশেম শেখ। সোমবার, করিমপুর হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৮ ১০:৩৭
Share: Save:

আশঙ্কা ছিল যে মনোনয়ন দিতে গিয়ে আগের মতোই ফের হামলার মুখে পড়তে পারেন রাজ্যের শাসক দলের বিরোধীরা। রাস্তা আটকানো, মারধর, ব্লক অফিসে ডিসিআর কাটার লাইন ‘জ্যাম’ করা— সবই হতে পারে। কিন্তু সাংবাদিক ও আলোকচিত্রীরাও যে সোমবার নিশানা হয়ে যাবেন, ‘বহিরাগত’ দুষ্কৃতীরা মেরে হাত-মাথা ফাটিয়ে দেবে, ভেঙে দেবে চশমার কাচ, কেড়ে নেবে ক্যামেরা, এতটা বোধ হয় ভাবা যায়নি।

বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ বেলডাঙা ১ ব্লক অফিসের কাছে এক বিজেপি নেতার মার খাওয়ার ছবি মোবাইলে তুলতে গিয়েছিলেন আনন্দবাজারের সাংবাদিক সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁকে ঘিরে ধরে লাঠি, বাঁশ, গাছের ডাল, উইকেট দিয়ে বেধড়ক পেটায় ‘বহিরাগত’ দুষ্কৃতীরা। মাথা ফাটে, হাত ভাঙে। ডোমকলে পুরনো বিডিও মোড়ে চিত্রগ্রাহক সাফিউল্লা ইসলাম ও বহরমপুরে চিত্রগ্রাহক গৌতম প্রামাণিক মার খান। বড়ঞার করালীতলা মোড়ে সাংবাদিক কৌশিক সাহাকে শাবল দেখিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। সকলেই পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন।

সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ নিজের নির্বাচনী এলাকা শমসেরগঞ্জে দলীয় দফতরে এসেছিলেন মালদহ দক্ষিণের সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী ওরফে ডালুবাবু। তাঁর গাড়ির সামনে চারটি বোমা পড়ে। ভাঙচুর হয় গাড়ি। আহত হন সঙ্গী রাজীব চৌধুরীও। দুপুর দেড়টা নাগাদ বহরমপুর ব্লক অফিসের কাছে তৃণমূলের পতাকা লাগানো লাঠি হাতে আক্রমণ করা হয় বিধানসভার মুখ্য সচেতক তথা স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীকে। বাঁচাতে গিয়ে জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী মৌসুমী বেগমও মার খান। সম্মতিনগরে বোমা পড়ে রঘুনাথগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক আখরুজ্জামানের বাড়ির সামনেও। প্রতিবাদে শতাধিক সমর্থককে নিয়ে লালগোলা–জঙ্গিপুর সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। জঙ্গিপুরে সাহেববাজারে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের বাড়ির সামনেও বোমা পড়ে, গুলিও চলে বলে অভিযোগ। সুতির কংগ্রেস বিধায়ক, সত্তরোর্ধ্ব হুমায়ুন রেজার অফিসের সামনেও বোমা ফাটানো হয়।

সন্ত্রাসের অভিযোগ থাকায় মূল মনোনয়ন পর্বের শেষ দু’দিন ব্লকের পাশাপাশি মহকুমাশাসকের অফিসে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা নেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। অথচ এই বাড়তি দিনে তেমন ব্যবস্থা ছিল না। সকাল থেকেই বহরমপুর ও অন্য সব ব্লক অফিসে ডিসিআর তুলতে লাইন পড়ে। বিরোধীদের অভিযোগ, লাইন ‘জ্যাম’ করে তৃণমূলের লোকজন।

কান্দি মহকুমার নানা এলাকায় রাত থেকেই বোমা পড়ছিল। বড়ঞায় মারে মাথা ফাটে জেলা বিজেপি কমিটির সদস্য অমিত পান্ডের। সিপিএমের এরিয়া কমিটি এবং ব্লক কংগ্রেস অফিসে হামলা হয়। খড়গ্রাম ব্লক অফিসে কংগ্রেস ও বাম প্রার্থীরা মার খান। পদমকান্দি অঞ্চল কংগ্রেস প্রার্থী অমল মাল গুরুতর জখম হয়েছেন। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁকে। কান্দি থানার সামনে মনোনয়নপত্র পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখায় এসইউসি।

সিপিএমের লালবাগ অফিসে ঢুকে চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে দুষ্কৃতীরা। আতঙ্কিত হয়ে দলের প্রার্থীরা বাড়ি ফিরে যান। নবগ্রাম ব্লক অফিস এবং সিপিএম পার্টি অফিস লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। সিপিএম ও কংগ্রেস প্রার্থীদের মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয় লালগোলা ব্লক অফিসের সামনে থেকে। ডোমকলের সারাংপুরে গাড়ি থেকে নামিয়ে প্রার্থীদের মারধর করা হয়।

প্রতিটি ক্ষেত্রেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। তবে তৃণমূল সবই অস্বীকার করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

murshidabad mla
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE