Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Blood Donation Camp

রক্ত নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত রক্তদান শিবির না করার এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক কারণে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপির।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২০ ০৬:১০
Share: Save:

রক্তের আকাল চলছে ব্লাড ব্যাঙ্কে। এর মধ্যে কর্মীর অভাবে ১২ জুন পর্যন্ত রক্তদান শিবির করা স্থগিত রাখলেন শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত রক্তদান শিবির না করার এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক কারণে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপির। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের পরীক্ষা করতে প্রচুর সংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন হচ্ছে। সেই কারণে কর্মীর অভাবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রতি বছরই গ্রীষ্মকাল পড়লে রক্তের আকাল দেখা দেয়। কারণ, এই সময় যেমন রক্তদান শিবিরের সংখ্য়া কমে যায়, তেমনই শিবিরগুলোয় রক্তদাতার সংখ্যাও কমে যায়। এবার এমনিতেই করোনার কারণে সেই সমস্যা চরম আকার নিয়েছে। কখনও কোনও সংগঠন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করলেও রক্তদাতার সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। ফলে এই সিদ্ধান্তে আরও সঙ্কট তৈরি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

থ্যালাসেমিয়া, ক্যানসার, কিডনির সমস্যার মতো নানা রোগে আক্রান্তদের পাশাপাশি অনেক প্রসূতির রক্তের প্রয়োজন হয়। এ জন্য শক্তিনগর ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। এই বিরাট সংখ্যক রক্তের চাহিদা মেটানোর জন্য ‘ইন হাউস’ রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। অর্থাৎ যার জন্য রক্তের প্রয়োজন তাঁর পরিবার কোনও রক্তদাতা নিয়ে এলে তাঁর রক্ত সঙ্গে সঙ্গে সংগ্রহ করে তা রোগীর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

আর যাঁরা নিজেরা রক্তদাতা সংগ্রহ করতে পারছেন না, তাঁদের চরম সঙ্কটের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এগিয়ে এসে রক্তদাতা পাঠিয়ে কিছুটা হলেও পরিস্থিতের সামাল দিচ্ছে। শনিবার ইন্ডিয়ান রেড ক্রস সোসাইটির বগুলা শাখা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিল। সেখানে ১২৯ জন রক্ত দিয়েছেন। এই রক্তই এখন ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের শেষ সম্বল।

এই পরিস্থিতেতে ১২ জুন পর্যন্ত স্থগিত রাখায় বেশ কয়েটি শিবির বাতিল করতে হচ্ছে। আর সেখানেই উঠেছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ। বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা কমিটির পক্ষ থেকে কৃষ্ণনগরে ১ জুন, সোমবার তাদের দলীয় কার্যালয়ে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে সেই শিবির বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য সৈকত সরকারের অভিযোগ, শুধু তাঁদের জেলা কমিটি থেকেই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল তা নয়, তাঁদের নেতা-কর্মীদের উদ্যোগেও কয়েকটা রক্তদান শিবির করার কথা ছিল। সেটা যাতে না হয় তার জন্যই শাসক দলের অঙ্গুলিহেলনে কোনও কারণ ছাড়াই এই কয়েকদিন সমস্ত শিবির বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, “রক্তের অভাবে যখন মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন মানুষের জীবন নিয়ে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করে রক্তদান শিবির বন্ধ করে দেওয়া অত্যন্ত অমানবিক কাজ বলেই আমরা মনে করি।

যদিও শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ‘‘প্রতিদিন শয়ে শয়ে পরিযায়ী শ্রমিক ঢুকছেন জেলায়। তাঁদের পরীক্ষার জন্য প্রতি দিন প্রচুর সংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন হচ্ছে। ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদেরও লালারস সংগ্রহ করতে হচ্ছে। সেই কারণে কর্মীর অভাবে কোনও ভাবেই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়েছি এই ক’টা দিন সমস্ত শিবির বন্ধ রাখতে।’’ জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় পাঁচটি শিবির স্থগিত করে দিতে হয়েছে।

লকডাউনের দিনগুলিতে রক্তদাতা সরবরাহ করে আসছেন ইমারজেন্সি ব্লাড সার্ভিসের সদস্যরা। তাঁদেরই অন্যতম কর্মকর্তা ওসমান গনিখান বলেন, প্রতিদিন শক্তিনগর ব্লাড ব্যাঙ্কে আমাদের সাত থেকে আট জন করে রক্তদাতা জোগাড় করে পাঠাতে হচ্ছে। এই সময় শিবিরগুলো বন্ধ করে দিলে সঙ্কট আরও চরম আকার নেবে।’’ পাশাপাশি তিনি জানান, তাঁরাও কত দিন এ ভাবে রক্তদাতা দিতে পারবেন, তা জানেন না। কারণ, করোনার কারণে এখন সহজে কেউ শক্তিনগরে গিয়ে রক্ত দিতে রাজি হচ্ছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blood Donation Camp BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE