একমনে-বোলানে: ফাইল চিত্র
পৌষমাসে হোলুই আর চৈত্রমাসে বোলান। এই দুই লোকগানের সুরে নিত্যদিনের অভাব অনটন ভুলে থাকেন গাঁ-গঞ্জের মানুষ। চৈত্রের খরখরে বিকেলগুলো যেন পাড়াগাঁয়ের আটপৌরে দিনযাপনে একটু ভেজা হাওয়া।
পড়নে সাদা ধুতি আর রঙিন পাঞ্জাবি, কোমরে বা গলায় জড়ানো উত্তরীয়। খড়িওঠা খালি পায়ে জড়ানো ঘুঙুর। জনা দশেকের একটা দল। কারো গলায় ঢোল,কারো হাতে কাঁসি কারও বা খঞ্জনী।
মূল গায়ক হয়ত গেয়ে উঠলেন, “শুনুন শুনুন বঙ্গবাসী,শুনুন দিয়া মন। ওগো এই আসরে দিদির কথা করিব বর্ণন। এগারো সালের পরিবর্তনে দিদি যখন এলেন। গদিতে বসেই অনেক কিছু দেওয়ার কথা বলেন। আমরা সবাই বোলান শিল্পী, কৃষ্ণপুরে বাড়ি। ওগো বাম আমলে পরিচয় পেতে করেছি কত ঘোরাঘুরি। দিদির আমলে পেলাম আমরা শিল্পী পরিচয়। সহগায়কেরা ধুয়ো ধরল ওগো সেই সঙ্গে হাজার টাকা, শুনুন মহাশয়। আহা শুনুন মহাশয়।”
আবার তপ্ত দুপুরে এ ছবিটাও ঝলসে ওঠে হাইওয়ের বুকে— ব্যাটারি-চালিত স্কুটি চলছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে, খানিক পরেই সে বাঁক নিল গ্রামের ক্ষতবিক্ষত রাস্তায়,। মুখে বিড়ি নিয়ে স্কুটি চালাচ্ছেন সীতা পেছনে বসে রাবন। রাবনের হাতে মশা মারা ইলেকট্রিক চালিত ব্যাট। পেছনে বোলানের দল।
গাঁয়ে বোলান ছড়িয়ে পড়ছে চৈত্রের হাওয়ায় হাওয়ায়।
সজোরে বেজে উঠছে ঢোল কাঁসি খঞ্জনী। চার পাশে গোল করে ঘিরে থাকা শ্রোতারা খুশিতে হইহই করে উঠছে, ‘বলো ভাই শিবনিবাসের বুড়োশিব দেবাদেব মহাদেব। নদিয়ার নিজস্ব ‘বোলান’ গানে এ ভাবেই চৈত্র সংক্রান্তি জমজমাট হয়ে ওঠে কৃষ্ণগঞ্জ, হাঁসখালি বা কালীনগর, নাকাশিপাড়া, তেহট্টের বিস্তীর্ণ ছড়িয়ে থাকা অঞ্চল।
পড়শি, বেলডাঙার নানা জায়গায় বোলানের পালা চলে মূলত চৈত্র মাসের শেষ দিকে। সেখানেও নিজস্ব ভাষা-রীতি-ঢঙ নিয়ে বোলান এখনও রাত জাগিয়ে রাখে নিস্তরঙ্গ গ্রামের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy