Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জুম্মা নমাজে নাগরিকত্ব নিয়ে আশঙ্কা

শুধু বীরপুরই নয়। নদিয়ার বহু মসজিদেই নমাজের আগে ইমামেরা নাগরিকত্ব বিল নিয়ে সরব হন। মুসলিম প্রভাবিত এলাকাগুলির অন্যতম চাপড়াতেও এ দিন প্রায় সব মসজিদেই ইমামরা নমাজের ঠিক আগে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে আলোচনা করেন। চাপড়ার বাঙালঝিতে চৌরাস্তা পাড়ার মসজিদে কয়েকশো লোক নমাজের জন্য জড়ো হন। ইমাম আকবর শেখ এনআরসি ও নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদ করে বক্তৃতা করেন। 

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে গোখুরাপোতায় প্রতিবাদ মিছিল। চাপড়ায় শুক্রবার। ছবি: প্রণব দেবনাথ

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে গোখুরাপোতায় প্রতিবাদ মিছিল। চাপড়ায় শুক্রবার। ছবি: প্রণব দেবনাথ

মনিরুল শেখ
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৫৩
Share: Save:

সকাল থেকেই প্রস্তুতি চলছিল। গ্রামের লোকজন ঠিক করেছিলেন, শুক্রবার দুপুরে বিশেষ নমাজ শেষে পথে নামবেন।
সেই মতো দুপুরে নাকাশিপাড়ার বীরপুরে পশ্চিমপাড়া জুম্মা মসজিদে গ্রামের প্রায় সব লোকই হাজির হন। নমাজের আগে খুতবা পাঠের ফাঁকে মসজিদের ইমাম বিল্লাল শেখ আক্ষেপ করেন, ‘‘দেশে আর সমানাধিকার নেই। কেন্দ্রীয় সরকার বিভেদমূলক নাগরিকত্ব বিল পাশ করেছে। এর ফলে হিন্দু-সহ ছ’টি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ মাত্র পাঁচ বছর এ দেশে থাকলে নাগরিক হয়ে যাবেন। মুসলিমদের ক্ষেত্রে অসমের মধ্যে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে। ফলে এ বার মাঠে নামতে হবে।’’
নমাজ শেষে দুপুর ১টা নাগাদ বীরপুর হাইস্কুলে সকলে জড়ো হন। হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে তাঁরা গোটা গ্রাম ঘোরেন। প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৯ মানব না’। ‘এনআরসি করা যাবে না’। ‘মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করে রাখার ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে’। ‘মুসলিমদের অনুপ্রবেশকারী প্রমাণের চেষ্টা বন্ধ করতে হবে’।

পরে ইমাম বলন, ‘‘হাজার দেড়েক মানুষ শান্ত ভাবে গোটা গ্রাম ঘুরেছেন। আমরা বার্তা দিতে চাই, এই দেশটা সকলের। সকলকে সমান চোখে দেখতে হবে। আগামীতে আরও বড় আন্দোলন হবে।’’

শুধু বীরপুরই নয়। নদিয়ার বহু মসজিদেই নমাজের আগে ইমামেরা নাগরিকত্ব বিল নিয়ে সরব হন। মুসলিম প্রভাবিত এলাকাগুলির অন্যতম চাপড়াতেও এ দিন প্রায় সব মসজিদেই ইমামরা নমাজের ঠিক আগে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে আলোচনা করেন। চাপড়ার বাঙালঝিতে চৌরাস্তা পাড়ার মসজিদে কয়েকশো লোক নমাজের জন্য জড়ো হন। ইমাম আকবর শেখ এনআরসি ও নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদ করে বক্তৃতা করেন।

বাঙালঝির কামরুল বিশ্বাস বলেন, ‘‘এখন কোনও রাজনীতি করার সময় নয়। রাজনৈতিক মতাদর্শ সরিয়ে রেখে সমস্ত মুসলিমকে পথে নামতে হবে।’’ দিন কয়েকের মধ্যে চাপড়ায় পঞ্চাশ হাজার মানুষের সমাবেশ হবে বলেও তিনি দাবি করেন।
চাপড়ার জামে মসজিদেও এ দিন এনআরসি বিরোধী আলোচনা হয়। কাজি ফারুক আহমেদ মনে করিয়ে দেন, ‘‘দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সব ধর্মের ও শ্রেণির মানুষের ভূমিকা ছিল। এ দেশের মুসলিমরা দেশভাগের সময়ে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) যাননি। তাঁরা এখানেই থেকে যান। কিন্তু এত দিন পর তাঁদের তাড়ানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’’

ধুবুলিয়ার সিংহাটি মসজিদের ইমাম নুরুদ্দিন শেখও নাগরিকত্ব বিলের বিপদ নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি জানান, আগামী ১৮ ডিসেম্বর একাধিক মুসলিম সংগঠন কলকাতায় নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে সভা করবে। সেই সভায় যাতে নদিয়ার লোকজন যান, তার জন্য জোরকদমে প্রচার চালানো হচ্ছে।

ইমাম-মোয়াজ্জেম কাউন্সিলের নদিয়া জেলার সভাপতি মুফতি সাজাহান মুন্সি বলেন, ‘‘এ দিন বহু মসজিদেই সরকারের বিভেদমূলক আইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে মূল আন্দোলন কলকাতায় হবে। সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে।’’ এ দিনই করিমপুরের ধাড়া, বাজিতপুর, পাইকশা, পোপালপাড়া প্রভৃতি এলাকায় নাগরিকত্ব বিলের বিপদ নিয়ে মুসলিমদের সতর্ক করা হয়েছে। ওই সব জায়গাতেও কিছু দিনের মধ্যে আন্দোলনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

কল্যাণীর সাহেব শেখের হতাশা, ‘‘মুসলিমদের জন্য নাগরিকত্ব পাওয়ার যে শর্ত করা হচ্ছে, তা মানা যায় না। হিন্দুরা পড়শি তিন দেশ থেকে এসে মাত্র পাঁচ বছর থাকলেই নাগরিক হয়ে যাবে। আর মুসলিমদের বহু পুরনো নথি দেখিয়ে প্রমাণ করতে হবে, তাঁরা বহু বছর ধরে এ দেশে রয়েছেন।’’ তাঁদের প্রশ্ন, বিজেপি নেতারা যে বলছেন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে দু’কোটি অনুপ্রবেশকারীকে তাড়াবেন, দুই দু’কোটির হিসেব কোথা থেকে আসছে তা কি তাঁরা বলতে পারবেন? তাঁদের দাবি, বাংলার বেশির ভাগ মুসলিম বংশ পরম্পরায় এ দেশেই রয়েছেন। বিভেদমূলক আইন এনে তাঁদের নানা ছুতোয় হেনস্থা করা হবে। তাঁদের আশা, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন হিন্দুরাও তাঁধের পাশে থাকবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CAB NRC Murshidabad Nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE