Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

রুকবানুর হটাতে ব্যানার চাপড়ায়

দলনেত্রী যতই মাথায় হাত রাখুন, রুকবানুর রহমানের পাকা ঘুটি কাঁচিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চাপড়ায় অনেক দিনই চলছে। তৃণমূল নেত্রী সবাইকে এক হয়ে চলার নির্দেশ দেওয়ার পরে এ বার নাম না–করে ‘বহিরাগত’ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যানার দেওয়া হল।

সেই ব্যানার। —নিজস্ব চিত্র

সেই ব্যানার। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৬ ০২:১৫
Share: Save:

দলনেত্রী যতই মাথায় হাত রাখুন, রুকবানুর রহমানের পাকা ঘুটি কাঁচিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চাপড়ায় অনেক দিনই চলছে। তৃণমূল নেত্রী সবাইকে এক হয়ে চলার নির্দেশ দেওয়ার পরে এ বার নাম না–করে ‘বহিরাগত’ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যানার দেওয়া হল।

চাপড়া তথা নদিয়ার বেশ কিছু তৃণমূল নেতা-কর্মী আদাজল খেয়ে লেগেছেন, যাতে চাপড়ার বিধায়ক রুকবানুর এ বার আর টিকিট না পান। এর আগেও পোস্টার মারা থেকে শুরু করে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছে লিখিত আবেদন করা— কোনওটাই বাদ দেননি রুকবানুর-বিরোধীরা। এ বার তাঁরাই ঘুরিয়ে নাক দেখাচ্ছেন।

বুধবার সকালে চাপড়া থানার কাছে রাস্তার ধারে যে ব্যানার দেখা গেল, তাতে লেখা ‘বহিরাগত’ প্রার্থীর বদলে ‘স্থানীয়’ প্রার্থী দিতে হবে। দাবি এটাই। তবে রুকবানুর-বিরোধী বলে পরিচিত তৃণমূল নেতারা সরাসরি এর দায় নিতে রাজি নন। দলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি হরিদাস প্রামাণিকের দাবি, ‘‘এলাকার মানুষ চাইছেন যে, রুকবানুর রহমান যেন টিকিট না পান। তাঁরাই হয়তো এই ব্যানার টাঙিয়ে মনের কথা জানিয়েছেন।’’

কলকাতার বাসিন্দা রুকবানুর যখন ২০১১ সালের ভোটে প্রার্থী হয়ে চাপড়ায় আসেন, এই হরিদাস প্রামাণিকই ছিলেন ব্লক সভাপতি। দলের প্রার্থীকে জেতাতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। পরে নানা কারণে দু’জনের দূরত্ব তৈরি হয়। এখন তাঁরা সম্পুর্ণ দুই মেরুর বাসিন্দা। রুকবানুর যাতে ফের টিকিট না পান, তার জন্য প্রথম থেকেই সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন হরিদাসবাবু ও তাঁর সঙ্গীরা।

ফল হয়েছে এই যে, চাপড়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল মাথাচাড়া দিয়েছে বারবার। রুকবানুরের বিরুদ্ধে তোলাবাজি, চাঁদার জুলুম, জমি বেচা-কেনা এবং গোষ্ঠী কোন্দলে কর্মীদের প্রশ্রয় দেওয়ার মতো নানা অভিযোগ রয়েছে। তা নিয়ে মুখ খুলতে গিয়ে ‘দিদিকে ফোন করব’ গোছের হুমকিও শুনতে হয়েছে অনেককে। কিন্তু তার পরেও কালীঘাটে শনিবাসরীয় ‘ক্লাসে’ তার মাথাতেই হাত রেখেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বরং জেলার রাজনীতিতে রুকবানুর-বিরোধী বলে পরিচিত মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস যাতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মদত না দেন, সে বিষয়ে সতর্ক করেন মমতা।

তার পরেই রাতারাতি পরিস্থিতি অনেকটা বদলে গিয়েছিল। দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে চাপড়ার দলীয় কার্যালয়ে রুকবানুর রহমান ও হরিদাস প্রামাণিককে হাসি-হাসি মুখে একসঙ্গে পতাকা উত্তোলন করতেও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সেই পরিবেশ যে সাময়িক, নেত্রীর চাপে ঢেঁকি গেলা, তা প্রমাণ হয়ে যায় সম্প্রতি চাপড়া ২ ব্লকে কর্মী সম্মেলনে হরিদাসবাবু-সহ একাধিক নেতার অনুপুস্থিতিতে। তার পরে ফের এই ব্যানার বুঝিয়ে দিল যে, অসন্তোষের আঁচ পিছনে ধোঁয়াচ্ছেই।

যদিও তৃণমূলের একটি অংশের দাবি, কালীঘাটের সভায় দলনেত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসকে সরাসরি রুকবানুর-বিরোধীদের মদত দিতে নিষেধ করার পরে রণকৌশল পাল্টে ফেলেছে বিরোধী গোষ্ঠী। সরাসরি বিরোধিতা না করে তারা তলায়-তলায় ঘোঁট পাকানোর রাস্তা নিয়েছে।

এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে বাম-কংগ্রেস জোট হবে বলে এওক রকম ধরেই নেওয়া যায়। প্রকাশ্যে না হোক, অন্তত নিচুতলায়। এবং তা হলে একদা কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত চাপড়ায় বিরোধী জোট যে তৃণমূলকে কঠিন লড়াইয়ের মুখে ফেলে দিতে পারে, তাতে সন্দেহ নেই। এ অবস্থায় প্রার্থী নিয়ে আকচাআকচি শাসক দলের পক্ষে মারাত্মক হয়ে যেতে পারে।

রুকবানুর অবশ্য এর মধ্যে বিরোধী শিবিরের হাত দেখছেন, অন্ত প্রকাশ্যে। তাঁর দাবি, ‘‘এর আগেও সিপিএমকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য অনেকে এই সব করেছে। এ বারও হয়ত তারাই করছে। আবার সিপিএম নিজেরাও এটা করে থাকতে পারে। তবে যারাই করুক, মানুষ তাদের জবাব দেবে।’’

যা শুনে, চাপড়ার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সামশুল ইসলাম মোল্লা কটাক্ষ, ‘‘রুকবানুর রহমান নিজের ঘর সামলান। আমরা ভোটে লড়ি রাজনৈতিক উপায়ে, সেটা ওঁর জানা উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election TMC Chapra nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE