Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ন্যায্য মূল্যের দোকানের বিরুদ্ধে প্রতারণার নালিশ

প্রতারণার অভিযোগ উঠল জঙ্গিপুর হাসপাতালের সরকার অনুমোদিত ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের বিরুদ্ধে। শুধু হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের নয়, সরকারি হাসপাতালে রোগীদের সরবরাহ করা ওষুধও খোলা বাজারের চেয়ে বেশি দাম চেয়ে বিল পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ পেয়েই অবশ্য সক্রিয় হয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ‘সাহা এজেন্সি’ নামে ওই দোকানের সব বিল আটকে দিয়েছেন তাঁরা।

সেই দোকান। —নিজস্ব চিত্র।

সেই দোকান। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০২:১৮
Share: Save:

প্রতারণার অভিযোগ উঠল জঙ্গিপুর হাসপাতালের সরকার অনুমোদিত ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের বিরুদ্ধে। শুধু হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের নয়, সরকারি হাসপাতালে রোগীদের সরবরাহ করা ওষুধও খোলা বাজারের চেয়ে বেশি দাম চেয়ে বিল পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ পেয়েই অবশ্য সক্রিয় হয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ‘সাহা এজেন্সি’ নামে ওই দোকানের সব বিল আটকে দিয়েছেন তাঁরা। এর পাল্টা হিসেবে আবার শুক্রবার থেকে ওই ন্যায্যমূল্যের দোকান রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা-সহ সব সরকারি প্রকল্পে ওষুধ সরবরাহও বন্ধ করে দিয়েছে। সমস্যায় পড়েছেন হাসপাতালের রোগীরা। ন্যায্য মূল্যের দোকান ওষুধ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় পরিস্থিতি সামলাতে শুক্রবার হাসপাতালের সুপার রোগীদের জন্য বাইরের বাজার থেকে ওষুধ কেনার নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়েছেন।

ওষুধের গায়ে লেখা দামের উপরে ৭০.৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার শর্তে সাহা এজেন্সি নামে ওই সংস্থাকে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান খোলার অনুমতি দেয় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। গত নভেম্বরে হাসপাতাল চত্বরের মধ্যেই পূর্ত দফতরের করে দেওয়া ঘরে চালু হয় ওই ওষুধের দোকান। কিন্তু অভিযোগ, দোকানে বিক্রি হওয়া জেনেরিক ওষুধের গায়ে খোলা বাজারের নামী কোম্পানীর ওষুধের চেয়েও অনেক চড়া দাম লেখা রয়েছে। তাই ৭০.৫০ শতাংশ ছাড় দিয়েও ওষুধের দাম পড়ছে খোলা বাজারের সমান, কখনও বেশি। অভিযোগ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ৭০. ৫০ শতাংশ কমিশনও দেওয়া হচ্ছে না। গ্রাহকদের কম্পিউটারাইজড ক্যাশ মেমোর বদলে সাদা কাগজে স্ট্যাম্প মারা একটি স্লিপ দেওয়া হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

জঙ্গিপুরের কংগ্রেস কাউন্সিলর বিকাশ নন্দ বলেন, ‘‘এ নিয়ে রোগীরা অনেকেই হাসপাতাল সুপারের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দলের পক্ষ থেকে আমরাও প্রতিবাদ করেছি।” তাঁর অভিযোগ, ওই দোকানে ফার্মাসিস্ট থাকার কথা। কিন্তু তা নেই। জনা চারেক স্থানীয় ছেলে মেয়েকে রেখে দোকান চালানো হচ্ছে। এমনকি সরকারি জায়গায় ঘর তৈরি বাবদ সাহা এজেন্সি বকেয়া কয়েক লক্ষ টাকা এখনও জমা দেয়নি পূর্ত দফতরকে। এমনকি দোকান ঘরের ভাড়ার এক টাকাও জমা পড়েনি সরকারি কোষাগারে!

বিগত পাঁচ মাস ধরে সরকারি খরচে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন তারা। বিকাশ বলেন, ‘‘রোগী কল্যাণ সমিতির সভায় বিষয়টি তুলে প্রতিবাদ করা হয়। কিন্তু সেই অরাজকতা এখনও চলছে।” “সে সবের প্রতিবাদ করতে গেলে শাসক দলের নেতাদের নাম করে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তারা শাসক দলের অনুগত বলেই কি তাদের প্রতি প্রশাসনের এত বদান্যতা” প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডল বলেন, “ওই এজেন্সি শুধু চুক্তি ভেঙেছে, তা-ই নয়, বাজারের চেয়েও বেশি দাম লিখে বিল জমা দিয়েছে। বিষয়টি জেলা ও রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তাদের জানানো হয়েছে।”

সাহা এজেন্সি-র অন্যতম কর্ণধার বিশ্বনাথ সাহা অবশ্য বলেন, “ওষুধের গায়ে দাম লিখেছে বিভিন্ন কোম্পানি। সেই দাম বাইরের বাজারের চেয়ে বেশি কি না, আমরা কী করে বলব? তবে সব সময় ক্যাশ মেমো দেওয়া সম্ভব হয় হয় না। তবে সকলকেই প্রাপ্য ছাড় দেওয়া হয়।” হাসপাতাল কৃর্তপক্ষ গা জোয়ারি করে তাঁদের বিল আটকে রেখেছে বলে তাঁর দাবি।

মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভাশিস সাহা বলেন, “ওষুধের দাম বাবদ বেশি টাকা ওই এজেন্সি দাবি করেছে বলে সুপার লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি যাচাই করতে আজ, শনিবার হাসপাতালে যাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE