Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Accident

মায়ের পিছু নিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বালকের

মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ জাতীয় সড়কে একটি মোটর বাইক তাকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। সেখানে কেউ তাকে চেনে না। রক্তে মাখামাখি অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকে বালক মোতাকাব্বে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জঙ্গিপুুর শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৪৩
Share: Save:

মা গিয়েছেন এক আত্মীয়ের বাড়ি। ছেলে মোতাকাব্বে শেখ (৮) সঙ্গে যাওয়ার বায়না ধরেছিল। মা নিয়ে যাননি। কিন্তু মা বেরিয়ে যেতেই পিছু পিছু ঘর ছাড়ে মোতাকাব্বে। ধুলিয়ানের লক্ষ্মীনগর পল্লিতে তাদের বাড়ি থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে শমশেরগঞ্জের নতুন জালাদিপুর পর্যন্ত পৌঁছে যায় সে। কিন্তু সেখানেই মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ জাতীয় সড়কে একটি মোটর বাইক তাকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। সেখানে কেউ তাকে চেনে না। রক্তে মাখামাখি অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকে বালক মোতাকাব্বে।

সেই দেখে ছুটে আসেন জালাদিপুরের বাসিন্দা জামির শেখ। পেশায় রাজমিস্ত্রি জামিরের পকেটে তখন একটা পয়সাও নেই। কিন্তু ছোট্ট মোতাকাব্বেকে ছটফট করতে দেখে সেই তাকে কোলে তুলে নেন। একটি অটোতে করে যান মহেশাইল গ্রামীণ হাসপাতালে। অটোচালক ভাড়া নেননি। মহেশাইল থেকে যেতে হয় জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালেও। সেখান থেকে রেফার করা হয় বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হয় মোতাকাব্বেের।

জামির এই পাঁচ ঘণ্টা মোতাকাব্বেের সঙ্গ ছাড়েনি। জামির বলছেন, “জঙ্গিপুর থেকে বহরমপুরে রেফার করার সময় কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না।’’ তখনই এগিয়ে আসেন ছুটিতে বাড়ি আসা সেনা জওয়ান প্রণব ঘোষ। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। তাঁর সংস্থার উদ্যোগেই ভাড়া করা হয় অ্যাম্বুল্যান্স। জামিরের আক্ষেপ, ‘‘কিন্তু এত করেও বাঁচানো গেল না।”

কিন্তু মৃত্যুর পরেও মোতাকাব্বেের পরিচয় অনেক ক্ষণ জানা যায়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ছবি দেখে শেষ পর্যন্ত চিনতে পেরে শিউড়ে ওঠেন বাবা জাহিরুল। তাঁরই প্রতিবেশী মোক্তাদির হোসেন বলছেন, “নিমতিতার কাছে দুর্গাপুর গ্রামে মোতাকাব্বেের মাসির বাড়ি। সেখানে এক জনের মৃত্যু হওয়ায় মঙ্গলবার সকালেই মোতাকাব্বের মা সেখানে গিয়েছেন। ছেলে বায়না ধরেছিল মায়ের সঙ্গে যাওয়ার। মা নিয়ে যাননি। কিন্তু পরে জানা গেল, মা বাড়ি থেকে বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে যায় ছেলেও। পায়ে হেঁটে প্রায় চার কিলোমটার পেরিয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে পৌঁছয় নতুন জালাদিপুরের কাছে। ঠিক সেখানেই ঘটে দুর্ঘটনা।”

রাত পর্যন্ত কান্না থামছে না জামিরেরও। প্রণববাবু বলছেন, “ফুটপাথে জুতোর দোকান চালায় মইদুল শেখ। তার উদ্যোগেই আমরা জনা দশেক বন্ধু মিলে হাসপাতালের আশপাশেই গড়ে তুলেছি একটি সংস্থা। আমরা হাসপাতালে বিপন্ন, অসহায়দের সাহায্য করি।’’ তাঁরও আক্ষেপ, ‘‘বাঁচাতে পারলাম না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Death Jangipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE