Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শরিকে মন নেই, হাতের সঙ্গে পথে নামল হাতুড়ি

লালবাগের পথ নিচ্ছে অন্যেরাও।মুর্শিদাবাদে অনেক আগে থেকেই শরিককে ব্রাত্য করে কংগ্রেসের হয়ে পথে নেমেছে সিপিএম।বড়ঞাতেও এই ঝুনঝুনি বাজছে।

কংগ্রেসের হয়ে প্রচারে সিপিএমের কর্মীরা। শুক্রবার সকালে ঝিলেড়া গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

কংগ্রেসের হয়ে প্রচারে সিপিএমের কর্মীরা। শুক্রবার সকালে ঝিলেড়া গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

কৌশিক সাহা
বড়ঞা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৫৫
Share: Save:

লালবাগের পথ নিচ্ছে অন্যেরাও।

মুর্শিদাবাদে অনেক আগে থেকেই শরিককে ব্রাত্য করে কংগ্রেসের হয়ে পথে নেমেছে সিপিএম।

বড়ঞাতেও এই ঝুনঝুনি বাজছে।

বড় নেতারা এখনও প্রকাশ্যে পথে নেমে কংগ্রেসের হাত ধরেননি বটে, কিন্তু তাতে কী! বুথস্তরের সিপিএম কর্মীরা ঝান্ডা নিয়ে সরাসরি কংগ্রেস প্রার্থীর সাথে প্রচারে নেমে পড়েছেন।

শুক্রবার বড়ঞা বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস-সিপিএমের এই যৌথ প্রচার দেখল সাহোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝিলেরা, সেনাই, তালবোনা গ্রাম।

গত বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের টিকিটে জেতা প্রতিমা রজককেই ফের প্রার্থী করেছে দল। এর আগে দীর্ঘদিন কেন্দ্রটি দখলে রেখেছিল আরএসপি। তারা দাবি না ছাড়ায় বড়ঞায় বাম-কংগ্রেস জোট হয়নি। আরএসপি-র বিনয় সরকার প্রার্থী হয়েছেন।

আরএসপি এই কেন্দ্রে প্রার্থী দেওয়ায় কার্যত বিপাকে পড়ে গিয়েছে কংগ্রেস ও সিপিএম। প্রথম থেকেই দেওয়াল লিখনে জোটপ্রার্থী প্রতিমা রজকের নাম লিখে প্রচার শুরু করেছিল সিপিএম। ওই কেন্দ্র থেকে আরএসপি প্রার্থীকে প্রত্যাহার করার জন্য বাম নেতৃত্বের উপরে চাপও সৃষ্টি করেছিল প্রদেশ কংগ্রেস। কিন্তু গত ৭ এপ্রিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনেও রফায় পৌঁছনো যায়নি।

বহু চেষ্টাচরিত্রের পরে আরএসপি বড়ঞা থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার না করায় সিপিএমের একটা বড় অংশ বেজায় চটেছে। এ দিন সকালে তাই এঁদেরই একটা অংশ কংগ্রেস প্রার্থীর সঙ্গে সাহোড়ায় প্রচারে চলে যান। বুথস্তরের কর্মীরা লালঝান্ডা নিয়ে প্রতিমার সঙ্গে যৌথ প্রচার করেন। স্থানীয় সিপিএম কর্মী প্রভাত পাল বলেন, “আমরা বুথস্তরের কর্মী। সারা বছর আমরাই মানুষের পাশে থাকি। মানুষ নেতাদের চেয়ে আমাদের উপরে বেশি ভরসা রাখেন।’’

এই গোত্রের সিপিএম কর্মীদের যুক্তি, জেলার নেতারা কংগ্রেসের হয়ে প্রচার না করুন বা না করুন, দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এবং প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর মধ্যে ‘জোট’ হয়েছে। তাঁরা বলছেন, ‘‘সোজা কথা হল, তৃণমূলকে ঠেকাতে আমরা আরএসপি প্রার্থীকে ছেড়ে জোটপ্রার্থী প্রতিমাদিদির হয়েই ভোট করছি। এতে অন্যায়ের কী আছে!”

সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য কর্মীদের একাংশের এই সব কাজকর্ম সমর্থন করছেন না। দলের বড়ঞা জোনাল সম্পাদক আনন্দ ঘোষ বলেন, “আমি সকালে সাহোড়া এলাকায় বামফ্রন্টের প্রার্থী বিনয় সরকারের হয়ে প্রচার করেছি। সেখানে আমাদের কর্মীরা দলীয় পতাকা নিয়ে কংগ্রেস প্রার্থীর সঙ্গে প্রচার করে অন্যায় করেছেন।”

নিচুতলার কর্মীদের সামনে রেখে সিপিএম কি তবে দু’নৌকায় পা রেখে চলছে? আনন্দবাবুর দাবি, “এমনটা ভাববার কোনও কারণ নেই। এমন নির্দেশ দল কাউকে দেয়নি। আমরা বামফ্রন্টের প্রার্থীর হয়ে প্রচার করব, এটাই দলের সিদ্ধান্ত।”

আরএসপি প্রার্থী অবশ্য এর মধ্যে কংগ্রেসের ‘চক্রান্ত’ দেখছেন। বিনয়বাবুর দাবি বলেন, “সিপিএমের ঝান্ডা নিয়ে কংগ্রেসের কিছু সমর্থক কংগ্রেস প্রার্থীর সাথে প্রচার করেছে। আসলে কংগ্রেস বুঝতে পেরেছে, এ বার বড়ঞায় তাদের পরাজয় নিশ্চিত। তাই কখনও দেওয়ালে সিপিএম জোট লিখে প্রচার করছে, তো কখনও বামেরদের ঝান্ডা নিয়ে প্রচারে গিয়ে বামপন্থী ভোটারদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।”

প্রতিমা রজক অবশ্য চক্রান্তের তত্ত্বকে আমল দিচ্ছেন না। তাঁর দাবি, “কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের জোট হয়েছে। সিপিএম নেতারা এখনও আমাদের সঙ্গে যৌথ প্রচার শুরু না করলেও কর্মীরা জোটপ্রার্থী হিসেবেই আমার হয়ে প্রচার করনছে। শুধু সাহোড়া নয়, সব অঞ্চলেই। যত সময় যাবে, এই প্রতার তত বাড়বে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress CPM campaign
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE