Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

১০০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড মেডিক্যাল কলেজে

সৌদি ফেরত নবগ্রামের মৃত যুবক জিনারুল হকের লালা রসে করোনা ভাইরাসের প্রমাণ মেলেনি—এমন রিপোর্টে জেলা স্বাস্থ্য দফতর স্বস্তি পেলেও তাঁরা বসে থাকতে নারাজ।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২০ ০১:১৩
Share: Save:

সৌদি ফেরত নবগ্রামের মৃত যুবক জিনারুল হকের লালা রসে করোনা ভাইরাসের প্রমাণ মেলেনি—এমন রিপোর্টে জেলা স্বাস্থ্য দফতর স্বস্তি পেলেও তাঁরা বসে থাকতে নারাজ। সে জন্য তড়িঘড়ি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড খুলছে স্বাস্থ্য দফতর। সোমবারই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলার নির্দেশ এসেছে। করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংস্পর্শে কেউ এলে তাঁদের ওই ওয়ার্ডে রাখা হবে। বুধবার করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকও ডাকা হয়েছে।

অনুমান করা হচ্ছে, মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে যেহেতু বহু মানুষ ভিন্ দেশ ও ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যান, তাই এই জেলাতে স্বাস্থ্য দফতরের তৎপরতা বেশি। আইসোলেশন ওয়ার্ডে ছিল ৫টি শয্যা। সেখান থেকে এক ধাক্কায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের মাতৃমা ভবনের উল্টো দিকে আবাসন খালি করে শয্যা সংখ্যা ১০০ করা হল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মুখে অবশ্য সে কথা বলছেন না। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার দেবদাস সাহা বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে জরুরি ভিত্তিতে একশো শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হচ্ছে।’’ জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে তিন শয্যার একটি এবং ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে ৮ শয্যার দু’টি আইসোলেশন ওয়ার্ডর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জ্বর সর্দি ও শ্বাসকষ্টের লক্ষ্মণ নিয়ে গত রবিবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সৌদি ফেরত নবগ্রামের পলাশপুকুরের জিনারুল হক। তাঁকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য তৈরি আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল। সেদিন তাঁর লালারস সংগ্রহ করে নাইসেডে পাঠিয়েছিল। অন্যদিকে রবিবার বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়। সোমবার নাইসেড থেকে রিপোর্টে জানানো হয় জিনারুলের লালারসে করোনাভাইরাস নেই। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ থেকে জানানো হয়েছে ‘ডায়াবেটিক কিটো অ্যাসিডোসিসে’ তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এত দ্রুত রিপোর্ট কী করে এল সেই প্রশ্ন উঠছে। তবে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, নমুনা হাতে পাওয়ার পর পরীক্ষা শেষ হতে ৪-৫ ঘণ্টা সময় লাগে। সেই রিপোর্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাতে পাওয়া যায়। সেই মতো ওই রিপোর্ট তাঁরা হাতে পেয়েছেন।

জিনারুলের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের চিকিৎসক কৌশিক ঘোষের আওতায় চিকিৎসা চলছিল। কৌশিকবাবু বলেন, ‘‘ওই যুবকের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি ছিল। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ছিল। সঙ্গে বুকে সংক্রমণ ছিল। ওষুধ না খাওয়ার কারণে তা বাড়িয়ে দেয়। ফলে ‘ডায়াবেটিক কিটো আসিডোসিসে’ তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’’

কৌশিকবাবু ও দু’জন জুনিয়র ডাক্তার ওই রোগীর চিকিৎসা করেছেন। করোনা ভাইরাস সন্দেহের জেরে ওই তিন চিকিৎসককে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল। মৃতের ভায়রাভাই রহমান শেখ ও তাঁর বন্ধু মনোয়ার শেখ জিনারুল হকের সংস্পর্শে এসেছিলেন। তাঁদেরও মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল। মৃতের পরিবারের বাকি ১২ জন সদস্য নবগ্রাম ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নজরদারিতে ছিলেন। সোমবার জিনারুলের রিপোর্ট আসতেই তাঁদের প্রত্যেককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই যুবকের করোনা ভাইরাসে মৃত্যু হয়নি। এবিষয়ে নাইসেড সেই রিপোর্ট দিয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও সন্দেহের কারণে যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছিল।’’ বিদেশ ফেরত মুর্শিদাবাদের ২১ জনের তালিকা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর জেলায় পাঠিয়েছিল। ২৮ দিন পর্যন্ত তাঁদের উপর নজরদারির নির্দেশ রয়েছে। ওই ২১ জনের অধিকাংশের নজরদারি ২৮ দিন পূর্ণ করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE