সারি হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র
সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হল জেলার একমাত্র সারি হাসপাতাল। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কৃষ্ণনগরে কর্মতীর্থের ওই সারি হাসপাতালটিকে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
সেই সিদ্ধান্তকে ঘিরেই বিতর্কের ঝড় উঠেছে। কারণ, করোনা-আবহে প্রত্যেক জেলায় অন্তত একটি সারি হাসপাতাল থাকা বাধ্যতামূলক এবং কোনও সারি হাসপাতাল বন্ধ করতে হলে তা স্বাস্থ্যভবনের বা নবান্নের নির্দেশে করতে হয়। একক ভাবে জেলা স্বাস্থ্য অধিকর্তা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী নন। অভিযোগ উঠেছে, শক্তিনগরের কিছু চিকিৎসকের চাপে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক এই নির্দেশ দিয়েছেন। ওই চিকিৎসকেরা শক্তিনগর থেকে কৃষ্ণনগরে কর্মতীর্থের সারি হাসপাতালে রাউন্ডে যেতে চাইছিলেন না এবং অন কলে রোগী দেখতে চাইছিলেন না। অভিযোগ, তাঁরাই নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে জেলা কর্তৃপক্ষকে দিয়ে এটা করিয়েছেন।
যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা স্বাস্থ্যকর্তারা। তাঁদের দাবি, জেলায় এখন আলাদা করে সারি হাসপাতালের প্রয়োজন নেই। কারণ, ‘সারি’ (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন) রোগী যাঁরা আসছেন তাঁদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রেখেই চিকিৎসা করা যাচ্ছে। এক জন বা দু’জন রোগীর জন্য এতবড় পরিকাঠামো চালানোর প্রয়োজন থাকছে না। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এখানে চিকিৎসকদের চাওয়া-না চাওয়াটা কোনও বিষয় নয়। এখন প্রয়োজন নেই তাই সাময়িক ভাবে সারি হাসপাতাল বন্ধ করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে আবার চালু করা হবে।’’
প্রথমে কৃষ্ণনগরের গ্লোকালকে সারি হাসপাতাল করা হয়। কিন্তু করোনা রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে ধরে নিয়ে গ্লোকালকে কোভি়ড হাসপাতালে পরিণত করা হয় আর কৃষ্ণনগর কর্মতীর্থ থেকে কোয়রান্টিন সেন্টার সরিয়ে সেখানে ৬০ শয্যার সারি হাসপাতাল তৈরি করা হয়।
১৮ জুন থেকে এই সারি হাসপাতাল চালু হলেও প্রায় এক মাস সেখানে কোনও রোগী ভর্তি হয়নি। এর পিছনেও জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশের ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁরা চাইছেন না যে, সারিতে রোগী ভর্তি হোক। কারণ, শক্তিনগর ক্যাম্পাসের ইন্ডোর, আউটডোর ও আইসোলেশন ওয়ার্ডের পাশাপাশি গ্লোকাল কোভিড হাসপাতাল সামলে তাঁদের পক্ষে সারি হাসপাতালে পরিষেবা দেওয়া কঠিন হচ্ছে। তাই সারি লক্ষণ যুক্ত রোগীদের সারি হাসপাতালের বদলে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে ভর্তি করে চিকিৎসা করা হচ্ছে। এর পরই সারি হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ ঘোষিত হয়।
অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সারি লক্ষণযুক্ত রোগী তেমন আসছে না। তার উপরে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হওয়ায় দ্রুত রিপোর্ট চলে আসছে। ফলে সারি হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করার প্রয়োজন হচ্ছে না। এতদিনে সেখানে মাত্র ১৭ জন রোগীকে ভর্তি করা হয়েছিল। কোনও দিন এক জন, আবার কোনও দিন এক জনও ভর্তি থাকতেন না।’’
জেলা হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলছেন, ‘‘এখন র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে যাঁদের রিপোর্ট পজিটিভ আসছে তাঁদের কোভিড হাসপাতালে আর যা্ঁদের রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে তাঁদের সাধারণ ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সারি হাসপাতালে কাউকে ভর্তি রাখার প্রয়োজন হচ্ছে না।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘সারি লক্ষণযুক্ত রোগীদের জেলা হাসপাতালে ভর্তি রাখলে অনেক সুবিধা। কারণ এখানে পুরোটাই আয়ত্তের মধ্যে থাকে। ভেন্টিলেটর থেকে শুরু করে ডিজিটাল এক্স-রে, এমনকি ডায়ালিসিসের সুবিধা পর্যন্ত এখানে রয়েছে।’’
স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, সারি হাসপাতাল চালু থাকলে তিনটে শিফটে এক জন করে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মী প্রয়োজন হয়। এক জন রোগী থাকলেও এই লোকবল রাখতে হয়। এ ছাড়া, ১০ জন রোগী-পিছু এক জন করে নিরাপত্তারক্ষী ও এক জন করে সাফাইকর্মী প্রয়োজন। সেই হিসাবে, কৃষ্ণনগর সারি হাসপাতালে ১৮ জন করে মোট ৩৬ জন নিরাপত্তারক্ষী ও সাফাই কর্মী রাখতে হচ্ছে বেতন দিয়ে। এক বা দু’জনে রোগীর জন্য এই লোকবল ও অর্থ খরচ নিস্প্রয়োজন বলে মনে করছেন জেলা স্বাস্থ্যকর্তারা।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy