শুনশান। বেলডাঙা স্টেশন।
রেলকে ‘জীবনরেখা’ বলেন অনেকে। সেই জীবনরেখা এখন স্তব্ধ। স্তব্ধ জীবনের গতিও। রেলের ছন্দে নানা লাইন ধরে ছুটছিলেন যাঁরা, তাঁরা পথ হারিয়েছেন। কেউ বেকার হয়েছেন, কেউ পেশা বদলেছেন। ট্রেনে চলার ফাঁকে হরেক রাজনীতি, অর্থনীতি, সিনেমা, সিরিয়ালের গল্প করতে করতে তাঁরা জুড়েছেন এক জন অন্য জনের সঙ্গে। নানা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সেই দাসদা, মিত্তিরদা, কেউ রহমান দা। এতেই যথেষ্ট নামের প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু ট্রেন বন্ধ হওয়ায় ছিটকে গিয়েছেন অনেকে। কেউ কাজ হারিয়েছেন, কেউ হারিয়েছেন নিজের ঠিকানাও।
লকডাউন পেরিয়ে আনলক। কিন্তু রেলে গতি আসেনি। গত ২২ মার্চ জনতা কার্ফু থেকে বন্ধ রেল পরিবহণ। ১৩৭ দিন সম্পূর্ণ বন্ধ যাত্রিবাহী রেলের চাকা। ভোর তিনটে থেকে উনুনে আঁচ দিতেন মধু ঘোষ, গণেশ চক্রবর্তী। চা, বিস্কুট নিয়ে অপেক্ষা শুরু হত যাত্রীদের জন্য। পায়ে পায়ে জমে উঠতো বেলডাঙা রেল স্টেশনের ১,২,৩ নম্বর প্লাটফর্ম। সূর্য মণ্ডল গত আট বছর সকাল ৭ টা ৪৫ মিনিটের লালগোলা প্যাসেঞ্জারে ভগবানগোলা যান। তিনি প্রতিদিন তিন নম্বর কামরায় ওঠেন। তার সঙ্গী নদিয়ার পলাশির মুকুল মণ্ডল। তারা এক ট্রেনে যান। বহরমপুরের একটা ছাপাখানায় কাজ করতেন এই মুকুল মণ্ডল। কিন্তু এখন তিনি যান না। তাঁকে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। ফলে তিনি কাজ হরিয়েছেন। বেলা ৯ টা ৩৫ মিনিটের প্যাসেঞ্জার ট্রেন বা আপ হাজারদুয়ারি ধরে কয়েক দশত ধরে কখন লালবাগ বা বহরমপুর যান বেলডাঙার সন্দীপ মুখোপাধ্যায়। তার বয়স ৫৯ বছর। তিনি বলেন, “বাস ও অটো ধরে লালবাগ খুব কষ্ট করে যেতে হয়। ট্রেনে সময় লাগতো আধ ঘণ্টা, সেটা এখন সড়ক পথে লাগছে আড়াই ঘণ্টা। রাস্তায় কেউ স্বাস্থ্য বিধি মানেন না। ফলে সমস্যা হয়।”
বেলডাঙার বাসিন্দা শুভায়ু মুখোপাধ্যায় কলকাতায় থেকে পড়াশুনো করেন। গত ২১ তারিখে বাড়ি ফিরেছেন ট্রেনে। তার কথায়, “আমি শেষ ট্রেনে বাড়ি ফিরেছি। তারপর ট্রেন বন্ধ।’’ বেলডাঙা স্টেশনের প্লাটফর্মও স্তব্ধ। স্টেশনে যারা কারবার চালান তাদের মধ্যে দীপু সাহা, মমতা শিকদার, দুলাল সরকার, বাচ্চু সিংহ, অসীম সাহা, গোপাল সরকার এখন সম্পূর্ণ বেকার। রেলের প্লাটফর্মে জয় সাহা, ষষ্টী সাহা মনোহরা বিক্রি করতেন। এখন কাজ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy