Advertisement
১১ মে ২০২৪

নির্দিষ্ট প্রমাণ থাকলে দিন, দাবি সমরের

সোমবার সকালে দলীয় কার্যালয়ে তড়িঘড়ি জরুরি বৈঠক ডেকে নীতি-নৈতিকতা অগ্রাহ্য করা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দলীয় গঠনতন্ত্রের ১৯ নম্বর ধারার ১৩ নম্বর উপধারায় সমরেন্দ্রনাথ ওরফে সমর ঘোষকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় সিপিএমের করিমপুর এরিয়া কমিটি।

করিমপুরের প্রাক্তন বিধায়ক সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ।

করিমপুরের প্রাক্তন বিধায়ক সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ।

কল্লোল প্রামাণিক
করিমপুর শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৯ ০২:৪৭
Share: Save:

স্রেফ বিজেপি-জুজুর কারণে কোনও প্রমাণ ছাড়াই তাঁকে সিপিএম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে দাবি করলেন করিমপুরের প্রাক্তন বিধায়ক সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ। দলের নদিয়া জেলা সম্পাদক সুমিত দে-কে কার্যত চ্যালেঞ্জ করে তিনি বলেন, ‘‘সিপিএম আমার বিরুদ্ধে দলবিরোধী কোনও কাজের নির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারবে না।’’

সোমবার সকালে দলীয় কার্যালয়ে তড়িঘড়ি জরুরি বৈঠক ডেকে নীতি-নৈতিকতা অগ্রাহ্য করা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দলীয় গঠনতন্ত্রের ১৯ নম্বর ধারার ১৩ নম্বর উপধারায় সমরেন্দ্রনাথ ওরফে সমর ঘোষকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় সিপিএমের করিমপুর এরিয়া কমিটি। জেলা কমিটি সেই সুপারিশ মঞ্জুর করে। পরে সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে দাবি করেন, সমর ঘোষ গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে দলবিরোধী কাজ করছিলেন। তাঁকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হলেও তিনি দলের কর্মসূচি উপেক্ষা করে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন।

এই বক্তব্য কার্যত উড়িয়ে দিয়ে মঙ্গলবার দাঁড়েরমাঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমরেন্দ্রনাথ বলেন, “কলেজে ছাত্র রাজনীতি থেকে আমি শুরু করেছি। সে দিন থেকে গত ১৫ জুন পর্যন্ত কোনও রকম দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রমাণ দিতে পারলে যে কোনও কঠিন শাস্তি মাথা পেতে নিকে রাজি আছি। কিন্তু ওঁরা আমার দলবিরোধী কোনও কাজের নির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারবেন না।’’ তাঁর পাল্টা প্রশ্ন: গত পঞ্চায়েত ভোটে যদি দলবিরোধী কাজই করবেন, তা হলে হার নিশ্চিত জেনেও দলের ইচ্ছায় জেলা পরিষদ আসনে লড়াই করলেন কেন?

তা হলে কেন তাঁকে সরতে হল?

সমরেন্দ্রনাথের ব্যাখ্যা, দিন সাত আগে কৃষ্ণনগরে স্কুল পরিদর্শকের অফিসে বিজেপির জেলা সভাপতি মহাদেব সরকারের সঙ্গে তাঁর দেখা হয় ও কিছু কথা হয়। তা থেকেই সিপিএম ধরে নেয় যে তিনি বিজেপির দিকে পা বাড়িয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আসলে এলাকায় কিছু মানুষের মধ্যে একটা প্রচার হয়েছিল যে, সোমবার বিকেলে বিজেপির একটি পথসভায় গিয়ে আমি ওই দলে যোগ দেব। সেই ভয়ে কোনও প্রমাণ ছাড়াই সকালে আমাকে তড়িঘড়ি বহিষ্কার করা হয়।”

সোমবারের সেই সভায় যিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সিপিএমের সেই করিমপুর এরিয়া কমিটির কার্যকরী সম্পাদক আসাদুল খান অবশ্য দাবি করছেন, সমরেন্দ্রনাথ নিজে বিজেপির দিকে তো ঝুঁকেছেনই, দলের সাধারণ কর্মীদেরও দল বদল করতে প্রভাবিত করছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘নানা দিক থেকে নির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েই দলীয় নিয়মে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’

২০১১ সালে তৃণমূল ঝড়ে রাজ্যে বাম সরকার পড়ে গেলেও করিমপুরে জেতেন সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ। ২০১৬ সালে অবশ্য তৃণমূল মহুয়া মৈত্রের কাছে তিনি পরাজিত হন। ছোটবেলা থেকে করে আসা দলের প্রতি তাঁর আনুগত্য ও ভালবাসা আজও অটুট দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘আমি কখনও প্রকাশ্যে অন্য দলে যাওয়ার কথা বলিনি। তেমন কিছু ঠিক হয়নি। তার আগেই এই সিদ্ধান্ত!’’

ইতিমধ্যে ফেসবুকেও দলবিরোধী কাজের প্রসঙ্গে জেলা সম্পাদকের করা মন্তব্য তুলে তিনি চ্যালেঞ্জ করেছেন। সেই প্রসঙ্গে সুমিত দে বলেন, ‘‘তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যিনি এখন দলেই নেই, তাঁর কথার জবাব দেব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Samarendranath Ghosh BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE