নিহত শেহনাজ সুলতানা। নিজস্ব চিত্র
বাড়ির উঠোনে শৌচাগারের পাশে গলার নলি কাটা অবস্থায় মিলল এক তরুণীর দেহ। পুলিশের অনুমান, শেহনাজ সুলতানা (১৯) নামে ওই তরুণীকে মোবাইলে ডাক দিয়ে বাইরে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে। শুক্রবার সাগরদিঘির মনিগ্রামের সাহেবনগরে ওই ঘটনার পরে, দুই যুবককে আটক করে জেরাও শুরু করেছে পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তে এবং বাড়ির লোকের সঙ্গে কতা বলে পুলিশের ধারণা, মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে তাকে বাইরে ডেকেছিল কেউ। তাতে সাড়া না দেওয়ায় জানলা দিয়ে ঢিলও মারা হয় তার বিছানায়। তার পরেই সে উঠে গিয়েছিল শৌচাগারের দিকে।
পরিকল্পিত ভাবেই তার পরে তাকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশ জানাচ্ছে।
পুলিশ নিশ্চিত, তরুণীর অতি পরিচিত কেউ এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। তার নাগাল পেতে পুলিশ ওই তরুণীর মোবাইল বাজেয়াপ্ত করে কল লিস্ট খতিয়ে দেখছে। তার এক খুড়তুতো ভাই-সহ দুই যুবককে জেরাও শুরু হয়েছে শনিবার সকাল থেকে।
তরুণকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, তরুণীর সঙ্গে কার কার মেলামেশা ছিল তার খোঁজ জানে আটক তরুণেরা। জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধায় বলেন, ‘‘তরুণীর সঙ্গে অনেকেরই সম্পর্ক তাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই টানাপড়েনেই খুন কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট, ভিডিও কল এবং ফোনের কল লিস্ট পরীক্ষা করা হচ্ছে।’’ বাড়ির বাইরে ডেকে মাত্র মিনিট পাঁচ-সাতের মধ্যে যে ক্ষিপ্রতায় ওই তরুণীর গলার নলি কেটে খুন করা হয়েছে তার পর যে ভাবে সরে পড়েছে আততায়ী তাতে রীতিমত সাহস ও দক্ষতা দরকার বলেই মনে করছে পুলিশ।
জঙ্গিপুর কলেজের প্রথম বর্ষের বাংলা অনার্সের ছাত্রী শেহনাহাজ। তারা দুই বোন। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে গ্রামেই। শুক্রবার থেকেই তার শুরু হয়েছে পরীক্ষা। সিট পড়েছে ধুলিয়ান কলেজে। সকাল ৯টায় গ্রামের আট পরীক্ষার্থী মিলে একটি গাড়ি ভাড়া করে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল সে। সন্ধেয় ফিরে এসেছিল বাড়ি। স্বচ্ছল পরিবার তাদের। একই উঠোনের বিভিন্ন ঘরে তার দুই কাকা, জেঠা ও পরিবারের অনযরা থাকেন।
বছর চারেক আগে, উত্তর ২৪ পরগনার একটি আবাসিক মিশনেও ভর্তি হয়েছিল তারা। সেখানেই বিদ্যুতস্পৃষ্ট হন শেহনাহাজ। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মৃতপ্রায় মেয়েটির ভেলোরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার পরে তার জীবন ফেরে। তবে, ডান হাত অকেজো হয়ে যাওয়ায় বাম হাতেই লেখা শুরু করেছিল সে।
তরুণীর বাবা এরফান শেখের গ্রামেই লোহার গ্রিল তৈরির ব্যবসা রয়েছে। পাকা বাড়িতে দুটি ঘরের একটিতে ঘুমিয়েছিলেন মা, বাবা। অন্যটিতে শেহনাহাজ ও তার বছর ছয়েকের ভাগ্নি অরিতা বেগম। মা হাসনারা বিবি বলেন, ‘‘তখন রাত বড় জোর সওয়া ১১টা হবে। শুয়ে পড়লেও ঘুমোইনি। হঠাৎই সদর দরজা খোলার শব্দ পাই। হঠাতই ‘চোর চোর’ চিৎকার, বাইরে ছুটে যান ওর বাবা। তখনও জানি না মেয়ে খুন হয়ে গেছে।’’
এরফান বলছেন, “বেরিয়ে দেখি শৌচাগারের দরজা বন্ধ। জল ভর্তি গাড়ুও দরজার সামনে রাখা আছে। অন্ধকারের মধ্যেই এ দিক ও দিক চাইতেই দেখি পাঁচ হাত দূরে সরু গলির মধ্যে পড়ে রয়েছে মেয়ে। কাছে যেতেই দেখি রক্তে ভেসে যাচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy