Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Delhi Violence

কাজ নেই গ্রামে, রুজির টানেই দিল্লিতে

গ্রামের অধিকাংশের দু-পাঁচ কাঠা জমি। সম্বৎসরের দু’টো চাষ। তাতে সাধারণ মানের ধান আর শীতের আনাজ। আবাদ বলতে এটুকুই। দিন মজুরি আর একশো দিনের কাজের ভরসা।

ঘরে ফেরেনি ছেলে। ছবি: মফিদুল ইসলাম।

ঘরে ফেরেনি ছেলে। ছবি: মফিদুল ইসলাম।

নিজস্ব প্রতিবেদন 
নওদা ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৬:১৪
Share: Save:

বাঁকা মেঠো রাস্তাটা গড়িয়ে গিয়েছে মাঠ ফুঁড়ে। দু-একটা এঁদো পুকুর, তাল গাছের সারি— ছায়াছন্ন গ্রাম, ত্রিমোহিনী। তবে গ্রামের সেই ছায়ায় যেন ছড়িয়ে আছে অভাব!

গ্রামের অধিকাংশের দু-পাঁচ কাঠা জমি। সম্বৎসরের দু’টো চাষ। তাতে সাধারণ মানের ধান আর শীতের আনাজ। আবাদ বলতে এটুকুই। দিন মজুরি আর একশো দিনের কাজের ভরসা। সে কাজ আর ক’জন পায়। গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ তাই গিয়েছেন ভিন জেলায়, ভিন রাজ্যে মায় ভিন দেশে শ্রম বেচতে!

দিল্লিতে দাঙ্গার ছোবল পড়তেই সেই সাবেক প্রশ্নটা উঠে এসেছে ফের— কাজ থাকলে পেটের টানে কি আর দিল্লি ছোটে! দিল্লি-দাঙ্গায় ঘর-বন্দি এ গ্রামের এগারো শ্রমিকের আড়াই দিন ধরে পেটে কিল মেরে লুকিয়ে থাকার কথা সামনে আসতেই তাই কপালে ভাঁজ পড়েছে গ্রামের।

গ্রামের মানুষদের ঘরে ফেরানোর আর্জি নিয়ে তাই ত্রিমোহিনীর ছুটছেন কখনও প্রশাসন কখনও বা জনপ্রতিনিধির কাছে। নওদার জয়েন্ট বিডিও তপন দত্ত অবশ্য আশ্বস্ত করছেন, ‘‘শ্রমিকদের পরিবারের লোকজনের কাছে খবরটা শুনেছি। আমরা সঙ্গে সঙ্গে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাঁদের ঘরে ফেরানোর উদ্যোগ অবশ্যই নেওয়া হবে।’’

গ্রাম-ছাড়া ওই ১১ যুবক দিল্লির গন্ডাচক এলাকায়একটি পাখা তৈরির কারখানায় কাজ করেন। কিন্তু গত তিন দিনের দাঙ্গা উত্তপ্ত রাজধানীতে তাঁরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মহল্লা ছেড়ে। শেষতক ওই পাখা তৈরির কারখানার মালিক তাঁদের আশ্রয় দিয়েছেন একটি ঘরে।

কিন্তু সে এলাকায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। ফলে বন্ধ রয়েছে কারখানা। বন্ধ হয়ে গিয়েছে এলাকার দোকানপাট। শ্মশানস্তব্ধ গোটা মহল্লা। আর খাবার বলতে জুটছে দু’প্যাকেট বিস্কুট। প্রায় অনাহারে দু’দিন থাকার পরে বুধবার সকালে এক মুঠো চাল জুটেছে তাঁদের।

যা শুনে ত্রিমোহিনীর ঘরে ঘরেও যেন অরন্ধন— ‘গ্রামের মানুষগুলো খেতে না পেয়ে লুকিয়ে রয়েছে, আর আমরা আঁচ দেহ উনুনে!’

দিল্লিতে ‘বন্দি’ শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছেন দিশেহারা ইমামুল সেখের স্ত্রী চায়না খাতুন। ছ’মাসের ছেলেকে কোলে নিয়ে বাপের বাড়ির এক চিলতে উঠোনে বসে বলছেন, ‘‘ফোনে কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলল জানেন। ওর কান্না শুনে বড় অস্থির লাগছে। দেশটা কেন এমন হানাহানিতে ভরে গেল বলুন তো, ঘরের মানু‌ষকে বাইরে পাঠিয়ে শান্তি নেই গো!’’

জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন বলেন, ‘‘আমি আটকে পড়া শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের যাতে ঘরে ফেরানো যায় তার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Delhi Violence CAA Protest Murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE