কল্যাণীর সভায় তখন চলছে বিশেষ শিশুদের বৌদ্ধিক মূল্যায়ন। নিজস্ব চিত্র
অসম থেকে ফেরার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত ছেলেকে হারিয়ে ফেলেন কাঁচরাপাড়ার মনোজ চৌধুরী। বাবাকে খুঁজে না পেয়ে বিমানবন্দরের এক কর্মীকে বাবার নাম ও মোবাইল নম্বর বলায় বছর আঠারোর সুমনের খোঁজ মেলে।
কিন্তু যে শিশু কথা বলতে পারে না, সে কী করবে? সুমনের মতো কোনও বিশেষ শিশু কাউকে কিছু না জানাতে পারলে কী করণীয়?
কল্যাণীর সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় যেমন বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে বেরনোর সময়ে মেয়ের ব্যাগে ট্যাব বা মোবাইল রাখি। গুগলের ‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ দিয়ে সেটির অবস্থানে নজর রাখি।’’ প্রযুক্তি কাজে লাগানো হলেও বিশেষ শিশুদের বাবা-মায়ের নাম, ফোন নম্বর ও ঠিকানা মুখস্থ করানোর পরামর্শ দেন অভিভাবক সুমন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘যে শিশু কথা বলতে পারে না তার কাছে যেন আইডি কার্ড থাকে। শিশুর জামাতেও নাম, নম্বর লিখে রাখা যেতে পারে।’’ প্রতিটি থানায় সেই এলাকার বিশেষ শিশুদের ছবি-সহ একটি তালিকা রাখার প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হয় দু’দিনের এক কর্মশালায়।
কল্যাণীতে নেতাজি সুভাষ রিজিয়োনাল ইনস্টিটিউট অব কো-অপারেটিভ ম্যানেজমেন্টের সভাঘরে সরকারি সংস্থা এনআইইপিআইডি কলকাতা এবং বিশেষ অভিভাবকদের সংগঠন ‘পরিবার বেঙ্গল’-এর উদ্যোগে শনি ও রবিবার বিশেষ শিশুদের সামাজিক সুরক্ষা, চাকরি-সহ একাধিক বিষয়ে আলোচনা হয়। রবিবার বিশেষ শিশুদের বৌদ্ধিক মূল্যায়নও করা হয়। আলোচনা হয় প্রতিবন্ধীদের অধিকার আইন নিয়েও।
আইনে রয়েছে, যে কোনও স্কুলে বিশেষ শিশু থাকলে বিশেষ শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। কোনও স্কুলে শিশুদের মারধর করা হচ্ছে পারলেও কী করবেন বুঝতে পারেন না বাবা-মায়েরা। বিশেষজ্ঞরা জানান, রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া অনুমোদিত কোনও বিশেষ স্কুল, সরকারি-বেসরকারি স্কুল বা বিশেষ শিক্ষকের বিরুদ্ধে আরসিআই-এর ওয়েবসাইটে অভিযোগ করা যায়। এ ছাড়া সিসিপিডি, পিজি পোর্টাল বা জেলার সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও অভিযোগ জানানো যায়। তা প্রমাণিত হলে সেই স্কুল বা শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আইন আছে।
বিশেষজ্ঞেরা জানান, শুধু পড়াশোনা করালেই চলবে না, শিশু যাতে তার দৈনন্দিন কাজ করতে পারে সে দিকটাও গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। পরিবার বেঙ্গলের তরফে সৌমেন উপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিশু পড়াশোনায় ভাল না হলে সব শেষ হয়ে গেল, এমনটা ভাববেন না। আমাদের ছেলেমেয়েরা অন্য অনেক কাজ বিশেষ দক্ষতায় করে। উৎসাহ দিলে সেটা ওরা আরও ভাল ভাবে
করতে পারবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy